ঢাকা,  বুধবার
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপদসীমায় উঠা নামা, দূর্ভোগে ৫০ হাজার মানুষ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপদসীমায় উঠা নামা, দূর্ভোগে ৫০ হাজার মানুষ

ছবি : মেসেঞ্জার

উজানের ঢল ও তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ইতোমধ্যে পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ছয়টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির সমতল ৫২.১৭ মিটার (বিপদসীমা ৫২.১৫ মিটার) যা বিপদসীমার ২ সে.মি উপরে প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। কাউনিয়া পয়েন্টে পানির সমতল ২৯.৬০ মিটার (বিপদসীমা ২৯.৩১ মিটার) যা বিপদসীমার ২৯ সে.মি উপরে প্রবাহ রেকর্ড করা হয়।

এছাড়াও ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে পানি সমতল ৩০.২০ মিটার, (বিপদসীমা ৩০.৮৭ মিটার) যা বিপদসীমার ৬৭ সে.মি নিচে প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। পরে সকাল নয়টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সে.মি নিচে ও কাউনিয়া পয়েন্টে ৩১ সে. মি উপরে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়।

দুপুর বারটায় তিস্তার পানি বিপদসীমান ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎ সীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় একটু কমে পরে ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যে জেলার তিস্তার তীরবর্তী ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ২৫/৩০ গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। চরাঞ্চলগুলোর ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিতে পানি উঠে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এ সকল গ্রামের মানুষ। এ সকল গ্রামের বেশ কিছু রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে মাছ। ৫ উপজেলায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে। বিদ্যালয়ে পানি উঠে পড়ায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বন্ধ রয়েছে পাঠদান কার্যক্রম।

এদিকে রোববার সকাল ১১টায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার, লালমনিরহাট সদও উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে ও আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের পানিবন্দি লোকজনের খোঁজখবর নিতে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।

এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহাবুব রহমান, জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা এসএম সাফায়াত আখতার নুর, আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই-এলাহী সিদ্দিকী, আদিতমারী সহকারী কমিশনার ভূমি রওজাতুন জান্নাত, আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

লালমনিরহাট জেলা ত্রান ও পূর্নবাসন অফিস জানিয়েছে জেলায় ৫টি উপজেলায় শিশু খাদ্র ক্রয়ের জন্য ৫ লাখ, গো-খাদ্য ক্রয়ের জন্য ৫ লাখ, নগদ বিতরণের জন্য জিআর ক্যাশ ৩ লাখ ও ৯০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৌলমারী, চর ভোটমারী,কাকিনার মহিষামুড়ি,তুষভান্ডারের চর বৈরাতি, নোহালী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, গোকু ইউনিয়নের তিস্তা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পানি বৃদ্ধির ফলে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতভর সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এর উপর দিয়ে অভার ফ্লো হয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এ কারনে আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধে বালু ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার প্রানন্তকর চেষ্টা চালিয়েছে।

বারঘরিয়া গ্রামের জোবায়দুল ইসলাম বলেন, দুই রাতে তিস্তার পানিবৃদ্ধি পেয়ে বাড়ি-ঘর ডুবে গেছে। এখন বাড়ি থেকে যে বাইরে যাব তার কোন উপায় নাই। এখন কলার ভেলা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। গোবরর্দ্ধন গ্রামের আমিনুর ইসলাম বলেন, এলাকার প্রতিটি বাড়িতে এখন হাঁটু পানি। সবচাইতে শিশু ও গবাদিপশুগুলোকে নিয়ে চরম বিপদে আছেন বলে জানান তিনি।

মহিষখোচা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোসত বলেন, মহিষখোচা ইউনিয়নের ৬/৭হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্পার বাঁধ রক্ষায় সাধারণ মানুষদের সাথে নিয়ে বালু ভর্তি বস্তা ফেলে সেটি রক্ষার চেষ্টা করেছি রাতভর।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমরা চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে প্লাবিত লোকজনের তালিকা চেয়েছি। তালিকা ধরে দ্রুত ত্রান বিতরণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মেসেঞ্জার/লাডলা/তারেক