ঢাকা,  রোববার
২৪ নভেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

বীমা পলিসির আড়ালে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ৫ অক্টোবর ২০২৪

বীমা পলিসির আড়ালে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি : মেসেঞ্জার

লাখ টাকায় মাসে মুনাফা ৩-৪ হাজার টাকা। এমন চমকপ্রদ লোভ দেখিয়ে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড আক্কেলপুর শাখার কর্মকর্তারা বীমার পলিসির আড়ালে অর্ধশতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

প্রায় ছয় মাস ধরে আমানতকারীরা মুনাফার ও আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এদিকে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর কর্মকর্তারা শাখা কার্যালয়ে তালা বন্ধ করে লাপাত্তা হয়েছেন। ইতিমধ্যে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা আমানতের টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

ভুক্তভোগী, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সাল থেকে জয়পুরহাট পৌরশহরে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জেলা শাখার কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকে কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীরা জেলা বিভিন্ন গ্রামে-গ্রামে গিয়ে বীমা পলিসি করতে উদ্বুদ্ধ করতেন।

এরপর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আক্কেলপুর পৌরশহরের কলেজ বাজার হাবিবা ম্যানসনের তৃতীয় তলা ভাড়া নিয়ে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উপজেলা শাখা কার্যালয় খোলা হয়। এখানে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ও শাখা ব্যবস্থাপক ও মাঠকর্মীরা বসেন।

তারা গ্রামে-গ্রামে গিয়ে নারী-পুরুষদের ভালো লভ্যাংশের লোভ দিয়ে প্রথমে বীমা পলিসি খোলার জন্য প্রলুব্ধ করেন। বীমা পলিসি খোলার পর তাদেরকে প্রতি লাখে মাসিক তিন হাজার টাকার মুনাফার লোভ দেখিয়ে এককালীন মোটা অংকের আমানত সংগ্রহ শুরু করেন। আমানতের টাকা যে কোন সময় গ্রাহকেরা তুলতে পারবেন বলে গ্রাহকদের জানানো হয়।

গ্রাহকদের বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে কর্মকর্তা-কর্মচারী গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্র্যাকের একটি প্রতিষ্ঠান বলেও প্রচার-প্রচারণা করে। আমানতকারীরা প্রথম দুই-তিন মাস প্রত্যেকে আমানতের বিপরীতে মাসিক মুনাফা দিয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে গ্রাহকেরা মাসিক মুনাফা পাচ্ছিলেন না। 

জানা গেছে, ইদ্রীস আলী নামে একব্যক্তি ৩২ লাখ টাকা আমানত রাখেন। তিনি তিন-চার মাস লভ্যাংশের টাকা পেয়েছেন। এরপর তাকে লভ্যাংশের টাকা ও আমানতের টাকা ফেরত দিচ্ছিলেন না। এঘটনায় ইদ্রীস আলী আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

(৭ মে) ইউএনও মনজুরুল আলম তার কার্যালয়ে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী জেলা ও উপজেলা শাখার কর্মকর্তাদের ডেকে নেন। গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সে এককালীন মাসিক ভিত্তিতে আমানত সংগ্রহের কোন স্ক্রীম নেই বলে ইউএনও কাছে কর্মকর্তারা স্বীকার করেন।

ওই বৈঠকে আমানতের ৩২ লাখ টাকার মধ্যে ইদ্রীস আলীকে ২৪ লাখ ৯ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা তিন কিস্তিতে ফেরত দেবে বলে লিখিত অঙ্গিকারনামা দেন। তবে এখনো ইদ্রীস আলী পুরো টাকা ফেরত পাননি।

তখন ইউএনও মনজুরুল আলম লোভের বশবর্তী না হয়ে জেনে শুনে বিনিয়োগের অনুরোধ করেন। এরপরও গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তারা আমানত সংগ্রহ বন্ধ করেননি। আট মাসে তারা প্রায় তিন কোটা টাকা আমানত সংগ্রহ করেছেন।

আক্কেলপুর পৌরশহরের শান্তা মহল্লার নাজমা আক্তার বলেন, আমি দশ লাখ টাকার আমানত রেখেছি। আমাকে প্রতি লাখে তিন হাজার টাকা করে দুই মাস মুনাফা দিয়েছিল। আমানতের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। গোপীনাথপুর নয়াপাড়া গ্রামের চম্পা আখতার সাথী বলেন, আমি লোভে পড়ে ৯ লাখ টাকা আমানত রেখেছি। এখন মুনাফা ও আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছি না। মুনাফার আশার গুড়ে বালি।

তিলকপুর গিলাকুড়ির আফরোজা আক্তার রানী বলেন, ব্যাংক ও পোষ্ট অফিসের চেয়ে তিনগুন লভ্যাংশের পাওয়ার আশায় ২৪ লাখ টাকা আমানত রেখেছি। দুই লাখ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে। ৪ মাস ধরে লভ্যাংশ ও আমানতের টাকাও ফেরত পাচ্ছি না।  গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্স অর্ধশতাধিক গ্রাহকের প্রায় তিন কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে।

ভুক্তভোগী ইদ্রীস আলী বলেন, ৩২ লাখ টাকা আমানত দিয়েছিলাম। আমানতের ফেরত দিচ্ছিল না। ইউএনও স্যারের শরণাপন্ন হয়ে ২৪ লাখ ৯ হাজার টাকা ফেরত পেয়েছি। এখনো পুরো টাকা ফেরত পাইনি। কর্মকর্তারা নিজেরাই ভুয়া স্ক্রীম বানিয়ে আমানত সংগ্রহ করেছিলেন। এদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করছি।

গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্সের আক্কেলপুর শাখা ব্যবস্থাপক পরিচয়দানকারী তাজমা খাতুন বলেন, আমরা আমানত সংগ্রহ করিনি। আমরা বীমা পলিসি খুলেছি। মেয়াদের আগে টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম বলেন, এক গ্রাহক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন।

আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, টাকা আত্মসাতের ঘটনায় কয়েকজন গ্রাহক আমার অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন। এরই মধ্য আমি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অফিসে ডেকে কয়েকজন ভুক্তভোগীর বেশ কিছু টাকা উদ্ধার করে দিয়েছি। বাকি ভুক্তভোগীদের টাকা উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।

মেসেঞ্জার/রমি/তারেক