ঢাকা,  শনিবার
০৫ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

যশোরে ইলিশ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:১৭, ৫ অক্টোবর ২০২৪

আপডেট: ১৭:২২, ৫ অক্টোবর ২০২৪

যশোরে ইলিশ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ

ছবি : মেসেঞ্জার

ইলিশ নিয়ে ক্ষুব্ধ যশোরসহ গোটা দেশের মানুষ। দেশের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ১৮শ’ থেকে দু’হাজার টাকায় বিক্রি হলেও ভারতে রপ্তানি হচ্ছে ১২শ’ টাকায়। এটি কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অবশ্য ব্যবসায়ী একটি সূত্র বলেছে, প্রকৃতপক্ষে ওই দরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে না।

যশোরের রাজনৈতিক সচেতন মানুষ বলেছেন, ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি নিয়ে দেশে রীতিমত রাজনীতি চলে। বিগত দিনে বাংলাদেশ সরকারের একটি রেওয়াজ ছিল, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ মাছ রপ্তানি করা। দেশের পদ্মা ও মেঘনা নদীর ইলিশ ছাড়া তাদের এ উৎসবের পূর্ণতা পায় না।

যদিও ২০১১ সাল থেকে বন্ধ ছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতসহ বিশ্বের অন্য দেশে ইলিশ রপ্তানি। দাম নিয়ন্ত্রণ ও দেশের সাধারণ মানুষের কাছে ইলিশ সহজলভ্য করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। অবশ্য ২০১৯ সাল থেকে পূজার সময় ভারতে উপহার স্বরূপ নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ।

সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর দুর্গোৎসবে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করেছে। ২০২৩ সালে শেখ হাসিনা সরকার চার হাজার মেট্রিকটন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৪২ টন।

চলতি বছরের (৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর (৮ আগস্ট) অন্তবর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে। চলতি মৌসুমে বর্তমান সরকার প্রথমে ঘোষণা দিয়েছিল ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হবে না। পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে (২৫ সেপ্টেম্বর) ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও রপ্তানি বিভাগের প্রধান নিয়ন্ত্রক।

এরপর ২৬ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১০ দিন ভারতে ইলিশ রপ্তানির সুযোগ পাবে ব্যবসায়ীরা। কেননা শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে বন্ধ থাকে স্থলপথে ভারতে যে কোনো ধরনের পণ্য রপ্তানি। অন্যদিকে রোববার মাছ আমদানি বন্ধ রাখে ভারত। এ হিসেবে সপ্তাহে দু’দিন রপ্তানি কার্যক্রম বেনাপোলে বন্ধ থাকে।

একইসাথে (১৩ অক্টোবর) থেকে বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইলিশ শিকার, বিক্রি ও পরিবহণ। ফলে এই ১০ দিনে কোনোভাবেই পাঠানো যাবে না পুরো ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ। সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭শ’ টন ইলিশ যেতে পারে ভারতে বলে ব্যবসায়ীরা মন্তব্য করেছে।

এদিকে, বাংলাদেশে ইলিশের চাহিদা বেশি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইলিশের আহরণ বাড়লেও দেশের বাজারে দাম বেশ চড়া। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে এ মাছের দাম। তারপরও ইলিশ ভারতে রপ্তানি ও দর নিয়ে ক্ষুব্ধ গোটা দেশের মানুষ।

তারা বলেছে, যশোরের বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৮শ’ টাকায়। অবশ্য ছোট সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে ৯শ’ টাকা কেজি দরে। অথচ এ মাছ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে ১০ ডলার বা ১২শ’ টাকা কেজিতে। এটি কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। কেন কমদামে এ মাছ ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে সেটাই সবার প্রশ্ন।

অবশ্য ব্যবসায়ী একটি সূত্র বলেছে, প্রকৃত পক্ষে ওই দরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে না। তারা বেশি দামেই এ মাছ ভারতে পাঠাচ্ছেন। খাতা-কলমে দেখানো হচ্ছে ১০ ডলার বা ১২শ’ টাকা। আর সরকারি মূল্যের অতিরিক্ত টাকার লেনদেন চলছে গোপনে হুন্ডিতে।

আর এ কাজটি দেশের বিভিন্ন হুন্ডি ব্যবসায়ী ও মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ বা ভারতে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে গোপনে এ কাজটি ব্যবসায়ীরা করে থাকেন বলে ওই সূত্রটি জানিয়েছে। এ কারণে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ভারতের বাজারে বাংলাদেশি ইলিশ প্রতি কেজি ভারতীয় ১৪শ’ থেকে ১৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে সূত্রটি দাবি করেছে।

এদিকে, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচদিনে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ২৭৭ মেট্রিক টন ৩০০ কেজি ইলিশ। ৯১টি ট্রাকে এ মাছ রপ্তানি করা হয়েছে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় মাছের ট্রাকগুলি দ্রুত ভারতে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

কম দামে ভারতে ইলিশ রপ্তানি বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম বলেন, ইলিশ রপ্তানির পরিপত্রটি কয়েক বছর আগের পুরনো। এ কারণে পুরনো দামেই মাছটি রপ্তানি হচ্ছে। আগামীতে ইলিশের দেশীয় বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রপ্তানি মূল্য সমন্বয় হতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন।

এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক রাশেদুল সজিব নাজির জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫ দিনে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ২৭৭ মেট্রিক টন ৩০০ কেজি। এ ধারাবাহিকতায় মাছ রপ্তানি হলে টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে না। কারণ আগামী (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা যাবে।

মেসেঞ্জার/জামাল/তারেক

×
Nagad