ছবি : মেসেঞ্জার
মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া নাতি পরিচয়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের বড় আলমপুর ইউনিয়নে কর্মরত শরীফুল ইসলাম। এজন্য তিনি মায়ের নামে ভূয়া নিকাহ নামা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভূয়া জন্ম সনদও তৈরি করেছিলেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে দুদক। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা, ভূয়া নিকাহ রেজিষ্টার এবং ভূয়া জন্মসনদ প্রদানকারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে দূর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালের (১৮ অক্টোবর) কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ৭৩৬ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে ২২-১২ ২০১২ তারিখে প্রার্থীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে বলা হয়। শারীরীক প্রতিবন্ধি ও মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পুত্র-কন্যা এবং পুত্র কন্যার পুত্র ও কন্যার ক্ষেত্রে বয়স সীমা ৩২ বছর উল্লেখ করা হয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার হযরতপুর গ্রামের কাজীপাড়া গ্রামের তোজাম্মেল হোসেনের পুত্র শরীফুল ইসলাম ওই পদে মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় আবেদন করেন। জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী নিয়োগের সময় তার বয়স ৩১ বছর ৬ মাস ১৪ দিন হলেও মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় তাকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ২০১৩ সালের (১৪ আগস্ট) শরীফুল কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরে যোগদান করেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাকুরীতে আবেদনের সময় শরীফুল ইসলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলেমান আলী পিতা-মৃত বছির উদ্দিন, গ্রাম-গজারিয়া, থানা-সাঘাটা, জেলা-গাইবান্ধা সম্পর্ক নানা উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রসহ অন্যান্য কাগজ পত্র দাখিল করেন।
মুক্তিযোদ্ধার নাতি পরিচয় দিতে শরীফুল তার মাকে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে পরিচয় দিয়ে ভূয়া নিকাহ নামা তৈরি করেন নিকাহ রেজিষ্টার আবু তালেবের মাধ্যমে। এছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন প্রধানের মাধ্যমে ভুয়া জন্ম সনদ তৈরি করে তা জমা দেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, শরীফুল ইসলামের মা সকিনা বেগম মুক্তিযোদ্ধা সোলেমান আলীর কন্যা নন। তার পরেও শরীফুল নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার নাতি পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাঘাটা থেকে একটি প্রত্যায়নপত্র সংগ্রহ করেন। ওই সনদপত্রে দেয়া বীরমুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলীর মুক্তি বার্তার সনদটিও ভুয়া।
এছাড়াও নিকাহ নামাটি এবং জন্মসদনটিও ভূয়া। এ বিষয়ে অভিযোগ হলে তদন্ত শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান করে অভিযোগের সত্যতা পায় দুদক। এ ঘটনায় দুদক রংপুর কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক একেএম নুর আলম সিদ্দিক বাদি হয়ে ২০২১ সালের (২৩ জুন) দুদক আইনে মামলা করেন (মামলা নং-৭)।
পরবর্তীতে দীর্ঘ তদন্ত শেষে উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরীফুল নিকাহ রেজিষ্টার আবু তালেব, ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন প্রধানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক রংপুরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান হোসেন।
তিনি জানান, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে শরীফুল ইসলাম তার মা সকিনা বেগমকে মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলীর মেয়ে বানাতে ভূয়া কাবিননামা ও জন্ম সনৈদ তৈরি করেছেন। এবং ভুয়া নাতি সেজে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় দন্ড বিধি আইনের ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
এছাড়াও তিন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং সম্পদ জন্দের জন্য ক্রোকি পরোয়ানা জারী করার আবেদন করা হয়েছে। রোববার (৬ অক্টোবর) এ বিষয়ে আদালত শুনানী শেষে আদেশ দেয়ার দিন ধার্য আছে।
রংপুর দুদক আদালতের বিশেষ পিপি হারুন উর রশীদ জানান, মামলায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে তার মাকে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে পরিচয় দিয়ে নিকাহ নামা প্রদান করায় নিকাহ রেজিষ্টার আবু তালেব ও ভুয়া পরিচয় পত্র প্রদান করায় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন প্রধানের বিরুদ্ধেও চার্জসীট দাখিল করা হয়েছে।
শরীফুল ইসলাম বর্তমানে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড় আলমপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। এ ব্যপারে শরীফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেন নি।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামের বিষয়ে এর আগে দূর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুন্থান পরবর্তী সময়ে আবারও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়াদের তথ্য জানতে চাওয়া হয়। আমরা সব তথ্য আবারও জানিয়েছি। শুনেছি তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে।
মেসেঞ্জার/মান্নান/তারেক