ঢাকা,  রোববার
০৬ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

লামার যে স্কুলে অনিয়মিত শিক্ষকরা, নিয়মিত শিক্ষার্থীরা

লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:০০, ৬ অক্টোবর ২০২৪

লামার যে স্কুলে অনিয়মিত শিক্ষকরা, নিয়মিত শিক্ষার্থীরা

ছবি : মেসেঞ্জার

বান্দরবানের লামায় যে বিদ্যালয়ে দিনের শুরুতে গাওয়া হয় না জাতীয় সংগীত,সে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কীভাবে মনে প্রাণে বিশ্বাস করবে এ গানটিই আমাদের বাংলাদেশের পরিচয়। জাতীয় সংগীতেই শেষ নয়, বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না শিক্ষকরাও। শিক্ষকদের এমন আচরণে শিশুরাই বা কি শিখবে!

লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে লাইল্যারমার পাড়া এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়টি। পাহাড়ি-বাঙালির সংমিশ্রণে গড়া এই গ্রামটিতে ১৯৮৭ সালে গড়ে উঠেছে লাইল্যারমার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছাত্র জীবনে প্রাথমিক বিদ্যালয় যে শিশুদের সুশিক্ষায় গড়ার প্রথম কারিগর সেটি হয়তো ভুলেই গেছেন ওই স্কুলের শিক্ষকরা।

শিক্ষকদের নানা অজুহাত আর অনিয়মেই ধ্বংস হচ্ছে শিশুদের মেধা। প্রতিটি বিদ্যালয়ে দিনের শুরুতে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়েই পাঠদান শুরু হয়। অথচ এই বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরু হয় জাতীয় সংগীত ছাড়াই। নানা অজুহাত ক্ষমতার বলে শিক্ষকরাও নিয়মিত আসেন না বিদ্যালয়ে।

বসে বসেই সরকারি অর্থ গুনছেন তারা। এতে নষ্ট হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের মেধা বিকাশ। পিয়ন থাকলেও কখনো ছুটির ঘন্টা বাজানোর শব্দ শুনেনি এলাকাবাসী। এছাড়া ও ম্যানেজিং কমিটিতে স্থানীয় কাউকে না রাখা বাৎসরিক হিসেব-নিকেশে গড়মিল দেখানোসহ শিক্ষকদের সাথে সিন্ডিকেট করে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা আক্তারের বিরুদ্ধে। 

স্থানীয়রা বলেন, আমরা বহুদিন যাবৎ দেখছি যে কোনো শিক্ষক ১১টায় আসলে ২টায় চলে যায়। আবার ১২টায় আসলে ৩টায় চলে যায়। তারা নিয়মিত স্কুলেও আসে না এবং যাওয়ারও কোনো নিয়ম থাকে না। বাচ্চাদের জিজ্ঞাসা করলে বলে জাতীয় সংগীত হয় না, ক্লাসও ঠিকমতো হয় না। শুধু ২ জন সহকারী শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে করেন। বাকীরা করেন না। শিক্ষার এমন নাজেহাল অবস্থা আর কতোদিন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন শিশুদের স্বজনরা। 

আরো বলেন,স্কুলের আশেপাশের ঝোপঝাড় শিক্ষার্থীদের দিয়ে পরিষ্কার করানো হচ্ছে। স্কুলের আশপাশে বিষধর সাপের বেশ আনাগোনা থাকায় কাজ করতে আতঙ্কের মধ্যে থাকেন কোমলমতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ। 

প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আমাদের লাইল্যারমার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ এক বছর পূর্বে থেকে এই বিদ্যালয়ের কোন রূপ বিধি বিধান মান্য করেন না। যার ফল ভুগতে হচ্ছে আমাদের ছোট সোনামনিদের। উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক ৭ জন হলে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয় ২ জন শুধু তাই নয় বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক সকাল ১০ ঘটিকায় উপস্থিত হলে আরেক শিক্ষক ১২ ঘটিকায় উপস্থিত হয় তাছাড়া বিদ্যালয় ছুটি হয় ৪ ঘটিকায় কিন্তু উক্ত বিদ্যালয়ে ছুটি দেয় দেড় বা ২ ঘটিকা সময় এবং উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ঠিক মতো শিক্ষার্থীদের থেকে ক্লাসও না নেওয়ার কারণে আমাদের সন্তানরা শিক্ষা খাতে অন্যান্য বিদ্যালয়ের চাইতে অনেক পিছিয়ে আছে। আমরা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে স্কুলটি যেন ঠিকভাবে চলে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানায়। 

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা আক্তারের কাছে উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন, আমাদের স্কুলটি দূর্গমে হওয়ায় আসতে একটু দেরী হয়। সময়মত গাড়ি পাওয়া যায় না। অন্যান্য সব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যান। 

লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, স্কুলে অনিয়মের বিষয়টি অবগত হয়েছি। আপনারা এতদিন কই ছিলেন? এই স্কুলটি ঠিকমত পরিচালিত হচ্ছেনা ৮-১০ বছর ধরে। আমি ইউএন ও স্যারের সাথে কথা বলে কী করা যায় সিদ্ধান্ত নিব। এই বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে আমরা সরকারের নীতিমালায় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

মেসেঞ্জার/বিপ্লব/তারেক

×
Nagad