ছবি : মেসেঞ্জার
বৌদ্ধধর্মালম্বীদের সবচে ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর দান। এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে প্রতিবছর বিহারে ও বিহার এলাকায় সেপ্টম্বরের শেষের দিকে চলে নানা প্রস্তুতি। চলে বিহার ও বিহার এলাকা পরিষ্কারের নানা কর্মসূচি। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান পরিস্থিতি অবনতি, নিরাপত্তাহীনতায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা এমন দিক পর্যালোচনা করে চলতি বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান উদযাপন করা হবে না বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল বিভিন্ন সূত্র।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যামান সার্বিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশে সকল বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রীমৎ শ্রদ্ধালংকার মহাথের, অজলচুগ বন বিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ সত্যমতি মহাস্থবিরসহ রাজবন বিহারের দায়িত্বে থাকা দায়িত্বশীল একটি সূত্র।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি দীঘিনালাতে পাহাড়িদের ওপর হামলা, নির্যাতন, ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে খাগড়াছড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলায় নিহত হন জুনান চাকমা, রুবেল ত্রিপুরা ও ধনরঞ্জন চাকমা।
পরেরদিন (২০ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় কালিন্দীপুর গলিতে প্রকাশ্য পিটুনিতে নিহত হন অনিক কুমার চাকমা নামে এক শিক্ষার্থী। এরপর আবার খাগড়াছড়িতে শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন এক স্কুলছাত্রী। এসব বিদ্যামান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল বৌদ্ধ বিহারগুলোতে কঠিন চীবর দান না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে দানোত্তম কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার সিদ্ধান্তকে অনেকে ইতিবাচক আবার অনেকে নীতিবাচকভাবে নিচ্ছেন। রুমি চাকমা বলেন, "আমাদের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবই কঠিন চীবর দান। সেহেতু ছোট্ট পরিসরে উদযাপন করা দরকার।
কেননা আমাদের বৌদ্ধধর্মের ধর্মনীতি ও সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে এ কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে। একই কথা বলছেন মুক্তা চাকমা। তিনি বলেন, নিজ নিজ বিহারে ছোট্ট পরিসরে কঠিন চীবর দান করায় উত্তম। রাতে চীবর না বুনে শুধুমাত্র বুনা চীবর ভিক্ষসংঘকে দান করে আমাদের নিয়ম পালন করা উচিৎ।
অন্যদিকে কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। কঠিন চীবর দান না করায় উত্তম হবে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্ত কিশোর চাকমা। তিনি বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অস্থিরতা চলছে, সাম্প্রদায়িক হামলা,নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামে কঠিন চীবর দান করা এতটা নিরাপদ নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর যে হামলা হলেও সুষ্ঠু বিচার হয় না। সেহেতু সকলের সবদিক বিবেচনা করে কঠিন চীবর দান বর্জন করা দরকার।"
পার্বত্য চট্টগ্রামে কঠিন চীবর দান না করাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নন্দপাল ভান্তের অধীনে পরিচালিত অজলচুগ বনবিহারের বিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ সত্যমতি মহাস্থবির। তিনি বলেন "ভগবান বুদ্ধ জীবিত থাকাকালীন সময়েও সংঘকে গুরুত্ব দিতেন।
সেজন্য সংঘের এমন সিদ্ধান্ত সকলের মানা উচিৎ। তবে আমরা ভিক্ষুরা কঠিন চীবর দান উদযাপন বিষয়ে বিরোধীতা করি না। বিদ্যামান সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
বাংলাদেশ পার্বত্য ভিক্ষুসংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রীমৎ শ্রদ্ধালংকার মহাথের বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি আদিবাসীদের ওপর হামলা, নির্যাতন, লুটপাত ও বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এসব ঘটনা এর আগেও সংঘটিত হয়েছে।
আমরা এর সুষ্ঠু বিচার কখনও পায় নি। পাহাড়ের চলমান সহিংসতা ও সহিংসতা থামানোর লক্ষ্যে প্রশাসনের তরফ থেকে কার্যকর ও কোনো প্রকার উদ্যোগ না নেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি লক্ষ্য করায় পার্বত্য চট্টগ্রামে এবারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।"
মেসেঞ্জার/সুপ্রিয়/তারেক