ঢাকা,  সোমবার
০৭ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

ননীফল কবীরের সম্পদের তদন্ত করবে দুদক

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৩১, ৬ অক্টোবর ২০২৪

ননীফল কবীরের সম্পদের তদন্ত করবে দুদক

ছবি : মেসেঞ্জার

ডিজিটাল প্লাটফর্মে চিকিৎসা প্রতারণা করে ভ্রাম্যমান আদালতের দন্ডিত প্রতারক খন্দকার কবীর হোসেনের কোটি কোটি টাকার সম্পদ অনুসন্ধান করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের বিষয়ে দুই জনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এই তদন্ত করা হবে। এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চিকিৎসা ও চাকরি প্রতারণা করে খন্দকার কবীর হোসেন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

দুদক যশোর জেলা কর্মকর্তার কার্যালয়ে দেয়া লিখিত অভিযোগে দুইজন উল্লেখ করেছেন, বিগত ২০১৭ সালে খন্দকার কবীর হোসেন চাকরি থেকে অবসর নেন। পরবর্তীতে খন্দকার কবীর যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ান তলা মল্লিক পাড়ায় মাসুদ পারভেজের ভাড়াবাড়িতে চলে আসেন। সেখানে তিনি ননী ফল নার্সারি করেন।

ননীফল নার্সারিকে পূজি করে শুরু হয় খন্দকার কবীরের মানুষ ঠকানো ব্যবসা। চিকিৎসা প্রতারণার পাশাপাশি কবীর চাকরি বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিলেন। অবৈধ অর্থ উপার্জনে তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। খিতিবদিয়া গ্রামের রুহুল কুদ্দুসের কাছ থেকে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা জমি, আব্বাস/টুকুর কাছ থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার জমি, ফিট্টুর ফুফাতো ভাইয়ের কাছ থেকে ৭৫ লাখ টাকার জমি, কনেজপুর গ্রামের এক ফার্নিচার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার জমি, শানতলা গ্রামের আশরাফুজ্জামান লিটন মেম্বরের কাছ থেকে ১৬ লাখ ৫০ হাজার জমি, একই গ্রামের শাহিন উদ্দিনের কাছ ৯৫ লাখ টাকার জমি কিনেছেন।

এছাড়া খিতিবদিয়া গ্রামের মোমরেজের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকায় ৭ তলা বাড়ি (প্রতি তলাতে ৪ ইউনিট), কলাবাগান এলাকায় রিপন হোসেনের কাছ থেকে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৪ তলা বাড়ি (প্রতি তলাতে ৩ ইউনিট) ক্রয় করেছেন। ছাতিয়ান তলা মল্লিকপাড়ায় ননীফল মঞ্জিল নামে আরও একটি চারতলা বাড়ি দৃশ্যমান। এড়াছা ছাতিয়ানতলা মল্লিক পাড়া, খিতিবদিয়া, শানতলাসহ বিভিন্নস্থানে নামে-বেনামে কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন।

দুদকে লিখিত অভিযোগকারীদের একজন জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে খন্দকার কবীর হোসেন অন্যায় অপরাধ করে পার পেয়ে গেছেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও খন্দকার কবীর বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বিশেষ বাহিনীর একজন সদস্য চাকরি থেকে অবসরের কয়েক বছরে কিভাবে এতো সম্পদের মালিক হলেন তার অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসবে।

দুদক যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক আল আমিন জানিয়েছেন, খন্দকার কবীর হোসেনের অবৈধ অর্থের অনুসন্ধানের দাবিতে স্থানীয় মাসুদ পারভেজ মুহাম্মদ ও আব্দুর রাজ্জাক নামে দুইজন লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের (১৭ মে) জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতারক কবীরের ডেরায় অভিযান চালায়। তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৌম্য চৌধুরী ও সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ক্যান্সার ও যৌন চিকিৎসায় প্রতারণা ও অবৈধভাবে ওষুধ তৈরির দায়ে খন্দকার কবীর হোসেনকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও  এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে।

৯০ বছরের বৃদ্ধকে যুবক বানানোর ঘোষণা দিয়ে তিনি প্রতারণার অভিযোগে ওই সালের (১৭ অক্টোবর) কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ খন্দকার কবীর হোসেনের ডেরায় অভিযান চালায়। এসময় কবীর হোসেন পালিয়ে রক্ষা পেলেও তার চার সহযোগীকে আটক করে পুলিশ।

পরে এস আই মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাদী হয়ে কবীর ও তার ৪ সহযোগীর নামে মামলা দায়ের করেন। ২০২৩ সালের (১৪ জানুয়ারি) রাতে খন্দকার কবীর ফের আটক হন। কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশ একটি প্রতারণা মামলায় নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করে।

কুষ্টিয়ার সরকারি একটি দফতরে অফিস সহকারী পদে কর্মরত তানজিল নামে এক ব্যক্তি খন্দকার কবীর হোসেনের ফাঁদে পড়ে চিকিৎসা প্রতারিত হন। ফলে (১ জানুয়ারি) তিনি (তানজিল) খন্দকার কবীর হোসেনের নামে কুষ্টিয়া সদর থানায় প্রতারণার মামলা করেন। যার নম্বর ২৩। এরপরও খন্দকার কবীরের প্রতারণা থেমে নেই।

মেসেঞ্জার/বিল্লাল/তারেক

×
Nagad