ঢাকা,  মঙ্গলবার
২২ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

৩ কোটি ২৬ লাখ টাকায় জানা গেলো বাঘ বেড়েছে ১১ টি

মোংলা প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ৮ অক্টোবর ২০২৪

৩ কোটি ২৬ লাখ টাকায় জানা গেলো বাঘ বেড়েছে ১১ টি

ছবি : সংগৃহীত

সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে নাকি কমেছে তা জানতে ২০২৩ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় বন বিভাগ। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণসহ অন্যান্য কাজে মোট ব্যয় ধরা হয় ৩৬ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১১ কোটি টাকা খরচ হয়। এরমধ্যে শুধু বাঘ শুমারি বা গননার জন্য খরচ হয়েছে তিন কোটি ২৬ লাখ টাকা। এই টাকা খরচ করে সুন্দরবনে ১১টি বাঘ বেড়েছে বলে তথ্য জানায় বনবিভাগ। বাঘ গননা ও সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্পের পরিচালক ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন এই তথ্য জানান।

এদিকে ২০১৮ সালের তুলনায় চলতি বছরের জরিপে ১১টি বাঘ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে ‘সুন্দরবন বাঘ জরিপ-২০২৪’ এর ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ তথ্য জানান।

উপদেষ্টা বলেন, সার্বিক বিচার বিশ্লেষণে ২০২৩-২০২৪ সালে সুন্দরবনে পরিচালিত ‘বাঘ জরিপে’ বাঘের সংখ্যা ১২৫টি পাওয়া গেছে এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার বনে বাঘের ঘনত্ব পাওয়া যায় ২ দশমিক ৬৪। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৫ সালের তুলনায় বাঘের সংখ্যা ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে আধুনিক পদ্ধতি ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ জরিপ করা হয় এবং এ জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১০৬টি এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ১৭।

২০১৮ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘ জরিপে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ৫৫। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বাঘ বৃদ্ধি পায় আটটি এবং বাঘ বৃদ্ধির শতকরা হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে তৃতীয় পর্যায়ে বাঘ জরিপ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে শেষ হয়।

বাঘ জরিপে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা, চাঁদপাই ও শরনখোলা রেঞ্জে চারটি ব্লকে ৬০৫টি গ্রিডে স্বয়ংক্রীয় ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। চার বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রতিটি গ্রিডে বাঘের গতিপথ, বিচরণ, অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতার সঙ্গে দুটি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।

৬০৫টি গ্রিডে পর্যায়ক্রমে ১ হাজার ২১০টি ক্যামেরা মোট ৩১৮দিন রেখে দেওয়া হয় এবং ৩৬৮টি গ্রিডের ক্যামেরায় বাঘের ছবি পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, জরিপের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের পর ভারত, নিউজিল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের মতামত গ্রহণ করা হয়। সার্বিক বিচার বিশ্লেষণে ২০২৩-২০২৪ সালে সুন্দরবনে পরিচালিত বাঘ জরিপে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার বনে বাঘের ঘনত্ব পাওয়া যায় ২ দশমিক ৬৪। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। বাঘ যে আমাদের রক্ষাকবচ তা সাধারণ মানুষ বুঝেছে। এজন্য বাঘ দেখলে এখন আর মানুষ পিটিয়ে মারে না। এ কারণেই বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য ও বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর বাঘ গণনার জন্য কোটি কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এখানে বড় ধরনের অর্থ অপচয় হচ্ছে। জরিপের নামে, বাঘ গণনার নামে অর্থ লুটপাট হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবন বাঁচাতে ১০ বছর পর পর একবার গণনা করলে সুন্দরবনের ওপর চাপ কমবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সম্পাদক মো. নুর আলম শেখ বলেন, ' বাঘ বাঁচাতে হলে বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবনে বাঘের বংশ বিস্তার না হওয়ার কারণ বাঘের খাবার হরিণ ও শূকরের অপর্যাপ্ততা।

এ ছাড়া সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। এই বিষের পানি খেয়ে বাঘ অনেক সময় মারা যায় এবং আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি সিন্ডিকেট আছে। যারা কিনা বাঘের দেহাংশ পাচার করে থাকে, সেই চক্র বিভিন্ন সময়ে সক্রিয় ছিল। যে কারণে বাঘের সংখ্যা বাড়েনি। 

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিকালে জরিপে ধারণা করা হচ্ছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। সেটি বৃদ্ধি পেয়ে থাকলে তাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু অতিমাত্রায় ঝড় জলচ্ছাসের কারণে বাঘের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে। লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়ে পরিবেশের পরিবর্তন আসছে। তাই সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ার আভাস মিললেও বনের এই রাজার টিকে থাকার হুমকিগুলো হুমকিগুলো আগের মতোই রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পশ্চিম) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘ইতঃপূর্বে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বাঘ জরিপ হয়। কিন্তু এ বছর দেশীয় প্রযুক্তি ও দেশের অর্থায়নে খুলনার চারটি রেঞ্জেই ক্যামেরার ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে এই জরিপ করা হয়েছে।’ 

২০১৫ এবং ২০১৮ সালের তুলনায় এ বছর বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঘকে রক্ষা করার জন্য বাঘের কেল্লা নির্মাণসহ মোট ১১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাঘ গননার জন্য খরচ হয় তিন কোটি ২৬ লাখ টাকা।

মেসেঞ্জার/হাসান/তারেক