ঢাকা,  শনিবার
২১ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

জন্মান্ধ শিক্ষক ইয়াহইয়া ছড়াচ্ছেন কোরআনের আলো

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ৯ অক্টোবর ২০২৪

জন্মান্ধ শিক্ষক ইয়াহইয়া ছড়াচ্ছেন কোরআনের আলো

ছবি: মেসেঞ্জার

জন্ম থেকেই দু'চোখে দেখতে পাননা সিলেটের জন্তাপুর গ্রামের লুৎফুর রহমানের ছেলে হাফেজ মো.ইয়াহইয়া (২২)। তিনি পেশায় একজন মাদরাসা শিক্ষক।

তবে জন্মান্ধতা তার জীবনে কোনো বাধা হোতে পারেনি। এমনটা প্রমাণ করতে যেন তার লড়াইটা জীবনের প্রথম দিন থেকে শুরু। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কারো কাছে হাত না পেতে বিভিন্ন মাদরাসায় গত পাঁচ বছর যাবত শিক্ষকতা করে আসছেন। তার এমন চেষ্টায় অনুপ্রাণিত মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী। সে যেন নিজের অনুপ্রেরণা নিজেই।

২০০২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন ইয়াহইয়া। জন্মান্ধ শিশুপুত্র ৷ জন্মের পরে তার বাবা-মাকে শুনতে হয়েছিল, এ ছেলে কী করবে?  অনুপ্রাণিত করতে কেউ আসেনি বাবা-মা ছাড়া৷ বরং ছোটো থেকেই কপালে জুটেছে পাড়া-পড়শির ব্যঙ্গোক্তি৷ সাত ভাই-বোনের মধ্যে সে পঞ্চম। ১২ বছর বয়সে হিফজ সম্পন্ন করেন। এর কয়েক করে বছর পর হিফজ বিভাগে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। রীতিমত ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক হয়ে সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি হার মানেন নি। তিনি পেরেছেন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে। তখন থেকেই বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষকতা করে চলেছেন।

শৈশব থেকেই তার সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর ও অসাধারণ কুরআন তেলাওয়াত যে কাউকে মুগ্ধ করে।বর্তমানে তিনি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের তা'মীরুল উম্মাহ হিফজুল কোরআন মাদরাসায় হিফ্জ বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। আজ তিনি কোরআনে হাফেজ বানানোর কারিগর ৷ এই মাদরাসায় তিনি প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫জন শিক্ষানবিশ হাফেজের ছবক নেন। অন্যান্য শিক্ষকের মত তিনি খুব সাধারণ ভাবে শিক্ষার্থীদের পড়া দেন এবং নেন। শিক্ষার্থীরাও তার পড়ায় সন্তুষ্ট।

হাফেজ ইয়াহইয়া পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেছেন বাগেরহাট আমতলী মাদরাসা ও পাবনার চাওতুল কোরআন মাদরাসায়। নিজের গ্রাম ও কর্মরত মাদরাসার সাথে তার নাড়ির সম্পর্ক। কারো সহযোগিতা ছাড়াই রাস্তাঘাটে চলাফেরা করেন। একা একা চলা ফেরা করেন বিভিন্ন স্থানে। গোসল থেকে খাবার সবই করেন নিজে হাতে কারো সাহায্য ছাড়া। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও অন্যদের থেকে সে পুরোপুরি আলাদা। সে নিজের সকল কাজ নিজে করতে পারে। কোরআন পড়া ও কোরআনের বিস্তারই তাঁর জীবনের সাধনা।

জন্মান্ধ শিক্ষক হাফেজ মো.ইয়াহইয়া বলেন, আমি ১২ বছর বয়সে হিফজ সম্পন্ন করি। জীবনের শুরু থেকে আমি পৃথিবীর কোন কিছু উপভোগ করতে পারছিনা। তবে মৃত্যু পর্যন্ত আমি কোরআনের সাথে থাকতে চাই।      

সুবর্ণচরের তা'মীরুল উম্মাহ হিফজুল কুরআন মাদরাসার মুহতামিম এইচ, এম, নাছরুল্লাহ বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা যে স্বপ্ন পূরণের জন্য বাধা নয় তার উজ্জল শিক্ষক ইয়াহইয়া। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও অবিরাম বিলিয়ে যাচ্ছেন কোরআনের আলো। দৃষ্টি তার সামনে এগোনোতে কোনো বাধা হতে পারেনি, উল্টো সে এক অনুপ্রেরণার নাম।

ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী ইয়াহ ইয়াহ কারো বোঝা না হয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কোরআনের সাথে থাকতে চান। তার এ উদ্যম ও মনের শক্তি সমাজের প্রতিটি মানুষের কর্মজীবনকে প্রভাবিত করবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।          
 

মেসেঞ্জার/মামুন/আজিজ