ঢাকা,  শুক্রবার
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

মেহেরপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ

বড় বোন ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, অভিযুক্ত আটক

মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ১২ অক্টোবর ২০২৪

আপডেট: ১৯:১৭, ১২ অক্টোবর ২০২৪

বড় বোন ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, অভিযুক্ত আটক

ছবি : মেসেঞ্জার

মেহেরপুরের গাংনীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বোন ও ছোট ভাইয়েরে বউকে কুপিয়ে হত্যার করার অভিযোগ উঠেছে ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে। শনিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে গাংনী উপজেলার সানঘাট গ্রামের দাড়িপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরে বিকালে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে অভিযুক্ত মহিদুল ইসলাম ওহিদকে আটক করে পুলিশ। 

নিহতরা হলেন, সানঘাট গ্রামের জাহিদ হোসেনের স্ত্রী জাকিয়া আক্তার (৪৫) ও চুয়াডাঙ্গার বোয়ালিয়া গ্রামের হাফিজুল ইসলামের স্ত্রী জোছনা খাতুন (৫৫)। নিহত জাকিয়া স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এঘটনায় আহত হয়েছেন নিহত জাকিয়ার স্বামী জাহিদ হোসেন ও অন্যবোন শামীমা আক্তার। আহতরা মেহেরপুর ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নিহত জাকিয়া অভিযুক্ত মহিদুল ইসলাম ওহিদের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ও জোছনা খাতুন তার বড় বোন। গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় থমথম পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা জানান,  পৈতৃকি সম্পত্তি নিয়ে ভাই বোনদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ মামলা মোকদ্দমা চলে আসছিলো। ঘটনার দিন সকালে নিহত জোছনা খাতুন অপর বোন শামীমা খাতুন পিতার ১ একর ২৭ শতক জমির পুকুরে মাছ ছাড়তে এসেছিলেন। 

সকালে সবাই মিলে বাড়িতে মিমাংসায় বসেছিলেন। মিমাংসার এক পর্যায় বোন ছোট ভাই জাহিদ ও তার স্ত্রী জাকিয়া পুকুরে মাছ ছাড়তে যান। এসময় মহিবুল ইসলাম ওহিদ ধারাল রামদা দিয়ে একের পর এক কোপাতে থাকেন।

এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান বোন জোছনা খাতুন ও ভাইয়ের স্ত্রী জাকিয়া। এ ঘটনার পরপরই সে পালিয়ে যায়। পরে পালাতে গিয়ে জখম হলে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে বিকালে তাকে পুলিশ আটক করে। 

অভিযুক্ত মহিবুল ইসলাম ওহিদ সানঘাট পল্লী উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম, গাংনী থানার ওসি তাজুল ইসলাম, গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা, সেনবাহিনীর ক্যাপ্টেন রওশন ও র‌্যাব-১২ গাংনী ক্যাম্পের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নিহত জোছনা খাতুনের স্বামী হাফিজুল ইসলাম বলেন, মহিবুল ইসলাম গাংনী উপজেলা শহরের ১৮ শতক জমি ও বাড়ির ১ একর ২৮ শতক জমির পুকুর একাই দখল করে আছেন। এছাড়া আমার শাশুড়ির ১১বিঘা জমি দখলে রেখেছে ছোট ভাই ওহিদ। এনিয়ে সে কয়েকটি মামলা করেছে।

সকালে আমি আর আমার স্ত্রী জোছনা খাতুন সানঘাট গ্রামে আসি। বাড়িতে সবাই বসে মিমাংসার চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। ওহিদ এই পুকুরটি বিগত চার বছর যাবৎ একাই মাছ চাষ করছিলেন। সবার দাবি ছিল এই চার বছর বাকি ভাই বোন চাষ করবে। এক পর্যায়ে মাছ ছাড়ার কথা বললে সে তার ব্যাগে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে একের পর এক এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হওয়ার পর সে পালিয়ে যায়।

প্রতিবেশী তহিদুল ইসলাম জানান, ভাই বোনের জমির ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার শালিস বৈঠক করেছেন। ভাই বোনরা ওহিদকে এক বিঘা জমি বেশী দিয়ে তাদের ফ্যাসাদ মেটানোর চেষ্টা করেছেন। তারপরেও ওহিদ সেটা মেনে নেয়নি।

নিজেকে আওয়ামীলী কর্মী দাবি করে সে জোর করে একাই ভোগ করছে পিতার রেখে যাওয়া পুকুর, মাঠের জমি ও গাংনীর বাড়ি। তিনি আরও বলেন, ওহিদ ভাই বোনের নামে একাধিক মামলা দিয়ে তাদের বিভিন্ন সময়ে হয়রানি ও নির্যাতন করেছে। শুধু ভাই বোনকেই নয়, এলাকার অনেক মানুষকে সে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। সে যখন গাংনী থেকে গ্রামে আসে তার ব্যাগের মধ্যে সব সময় রামদা ও বড় সাইজের দা থাকে। ভাই বোন কিছু বললে তাদের হত্যা করবে বলে হুমকী দিয়ে আসছিল।

জাহিদের স্ত্রী জাকিয়া খাতুনের ভাই মেজবাহুর রহমান তোহা জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের কারনে তার বোনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে মহিবুল ইসলাম ওহিদ। তিনি হত্যাকারীর দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি দাবি করেছেন।

গাংনী থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, হত্যার ঘটনা ঘটানোর পর ঘাতক মহিবুল ইসলাম ওহিদ পালিয়ে যাচ্ছিল। গাংনী থানা পুলিশ ও মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ টিম সদর উপজেলার আমঝুপি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করেন। মহিবুল ইসলাম ওহিদ আহত হওয়ায় তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

মেহেরপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম বলেন, দুই নারীকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পৈত্তিক সম্পত্তি ভাগবন্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি।

মেসেঞ্জার/মাহাবুব/তারেক