ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩১ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

দুর্গা পূজায় সিরাজগঞ্জে আলোর ঝলকানি, জমেছে ঝুড়ি ও খেলনার দোকান

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ১২ অক্টোবর ২০২৪

দুর্গা পূজায় সিরাজগঞ্জে আলোর ঝলকানি, জমেছে ঝুড়ি ও খেলনার দোকান

ছবি : মেসেঞ্জার

বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসবের নাম দুর্গাপূজা। এই শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের প্রতিটি সড়কে লাল-নীল-হলুদ ও সবুজ আলোর ঝলকানিতে জাঁকজমকপূর্ণ সাজানো হয়েছে পূজামণ্ডপগুলো। এই আলোর ঝলকানি দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে দলে দলে আসছে দর্শনার্থীরা। এদিকে, আলোর ঝলকানিতে সিরাজগঞ্জে বিভিন্ন পূজামণ্ডপের আশপাশের এলাকায় মুখরোচক খাবার ঝুড়ি, মুয়া, তিলের খাঁজাসহ রকমারি খেলনার দোকানে জমে উঠেছে বেচাবিক্রি।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়ক, এসএস রোড, বাজার স্টেশন সড়কসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে ভক্ত সাধারণ ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে আসা শিশুদের রকমারি খেলনা ও ঝুড়ি, মুয়াসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার কেনার দৃশ্য চোখে পড়ে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মুজিব সড়কে শ্রী শ্রী মহাপ্রভুর আখড়া, যুগল কিশোর মন্দির, কালিবাড়ী মন্দির, বানিয়াপুট্টি কালি মাতা মন্দির, মারোয়ারিপুট্টি মন্দির, নিমতলা পুজা মন্ডব, হরিজন কলোনী পুজা মন্ডব, স্টেডিয়াম রোড পূজামণ্ডপ এলাকায় রাস্তার দুই পাশে মাদুরের ওপর মাটির তৈরি রকমারি পণ্যের ও ছোট ছোট চৈকির উপরে সাদা ঝুড়ি, গুড়ের বুন্দা, চিড়ার মুয়া, তিলের খাজা, লাড্ডুসহ বিভিন্ন রকমের মুখরোচক খাবারের পসরা বসিয়েছে দোকানিরা।

প্রত্যেকটি দোকানে মুখরোচক খাবার ও খেলনাগুলো সাজানো-গোছানোভাবে রাখা রয়েছে। খেলনাগুলোর মধ্যে রয়েছে মাটি, লোহা ও প্লাস্টিকের তৈরি মাছ, আম, টিয়া, তরমুজ, হাতি, হাঁড়ি-পাতিল, গরু, বিড়াল, হাঁস, মোরগ, পুতুল, বাঘ, হরিণ, ফুলদানি, মাটির ব্যাংক ও বিভিন্ন ধরনের খেলনা সামগ্রী। নারী-পুরুষ এবং পূজা দেখতে আসা শিশুরা তাদের মা-বাবার সঙ্গে পূজা মন্ডপ ঘুরে সব দোকানগুলোতে ছুটছেন।

শহরের জ্ঞানদায়িনী উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলনা সামগ্রীর দোকান নিয়ে বসেছে লুৎফর হোসেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর পূজার সময় এখানে খেলনা বিক্রি করে থাকেন। মাটির তৈরি সামগ্রীগুলো পূজার সময় বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এখন বেচাকেনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাটির তৈরি খেলনা সামগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পুতুল, প্লাস্টিকের ফুলের সামগ্রী, পিস্তল, হারমোনিয়াম, গিটার, বিড়ালসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা রয়েছে। পূজার শেষ দিন মেলাতে বেচাকেনা বৃদ্ধি পায় বলে মন্তব্য করেন তারা।

পাশেই আরেক দোকানি তরিকুল ইসলাম বলেন, রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী গ্রাম থেকে এখানে এসেছি। বিভিন্ন খেলনা বেচাবিক্রি করেন। পূজাতে মাটি ও প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করেন। এরমধ্যে মাটির ছোট হাড়ি, কলস, বিভিন্ন খেলনা, হাতি ঘোড়া রয়েছে। ছোট বাচ্চাদের জন্যই আমাদের এসব জিনিস। কেউ শখের বসে বা ছোটদের উপহার দেওয়ার জন্য এসব কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পূজায় ৪০ থেকে ১ লাখ টাকা বেচাকেনা হয়ে থাকে। এবার মানুষের উপস্থিতি অনেক বেশি এবং কেনাবেচা ভালোই হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আমিসহ এখানে অনেকেই এসেছে। তবে অন্য সময় তেমন একটা বিক্রি হয় না। দূর্গা পুজায় শহরে আসি। অন্য সময় যেখানেই মেলা বসে সেখানেই তারা চলে যান। এভাবেই চলছে তাদের সংসার।

মুক্তা প্লাজার সামনে মুখরোচক খাবারের পসরা বসানো আল-আমিন, হৃদয় হোসেন ও রফিকুল ইসলাম বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও অনেকে ঘুরতে এসেছেন পুজা দেখতে। তারাই মুখরোচক খাবার কিনে নিয়ে যায়। বর্তমানে সাদা ঝুড়ি ৩০০ টাকা, গুড়ের তৈরি ঝুড়ি ২০০ টাকা, চিনির তৈরী হাতি-ঘোড়া-২৮০ টাকা ও তিলের খাজা ২৮০ টাকা কেজি। চিড়ার খাঁজা ১ প্যাকেট ৫০ টাকা, লাড্ডু ৮ পিচের ১ প্যাকেট ৬০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতা শিল্পী দাস, মিঠুন চন্দ্র, হাবিবুর রহমান, শাকিল হোসেন জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর পূজামণ্ডপগুলোতে হরেক রকম খেলনা ও বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবারের দোকান বসে। শিশু, কিশোর-কিশোরী মাটির তৈরি ও প্লাস্টিকের পণ্য বেশি পছন্দ করে।

তাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা সাজানো হয় এবং হরেক রকম খেলনা সামগ্রীর আমদানি ঘটায় দোকানিরা। শিশুদের পাশাপাশি বড় শ্রেণির ক্রেতারা সাধারণ বাসাবাড়িতে সাজিয়ে রাখার জন্য মাটির তৈরি সামগ্রী কিনে থাকেন।

নারী ক্রেতারা মাটির তৈরি ব্যাংক, বিদ্যুতের তৈরি বিভিন্ন শো-পিচ বেশি কেনেন বলে জানান তারা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা তাদের সঙ্গে আসা শিশুদের নিয়ে এসব সামগ্রী কিনতে দোকানে দোকানে ভিড় করছেন। বিভিন্ন সামগ্রী পছন্দ করছেন দরদাম মিটিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, জেলার ৯টি উপজলোয় ৪৯৯ টি পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। পুজায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রতিটি পূজা মন্ডপে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় স্থানীয় প্রশাসন, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী কাজ করছে। এছাড়াও মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক পূজা মন্ডপে নজরদারি রাখছেন। পাশাপাশি সবকটি পূজা মন্ডপে গোয়েন্দা নজরে রয়েছে। এর পাশাপাশি নিজ দায়িত্বে প্রতিটি মন্দিরে কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবী নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন।

মেসেঞ্জার/রাসেল/তারেক