ঢাকা,  সোমবার
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

এবারে পুজার আগে মাদকে সয়লাব বগুড়া, ব্যাপক মজুদ

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

আপডেট: ১৬:০৭, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

এবারে পুজার আগে মাদকে সয়লাব বগুড়া, ব্যাপক মজুদ

ছবি : সংগৃহীত

সনাতনধর্মীয়দের বৃহত্তর উৎসবকে কেন্দ্র করে এক মাস আগে থেকে এবারে বগুড়ায় বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য মজুদ করা শুরু হয়েছিল। এসব বিভিন্ন ধরনের মাদকে বগুড়া জেলা সয়লাব। জেলার যেখানে সেখানে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল, মদ, গাঁজা, হেরোইন ও ফেনসিডিলসহ সব ধরণের মাদক। জেলার কারবারিরা আগের বছরের চেয়ে এবার মাদকের মজুদ বেশি গড়ে তুলছে। শহরের ২০টির বেশি স্পটে মাদকের কারবার চলছে। এবারে একটু প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ায় এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ভাবে মাদককারবারিরা ব্যাপক আয়োজন করেছে।

জানা যায়, বগুড়া শহরের অন্যতম মাদকের ঘাঁটি সেউজগাড়ী ও চকসুত্রাপুরের হাড্ডিপট্টি। সেউজগাড়ী এলাকায় মোট ৪টি স্পটে মাদকের কারবার চলে। এর মধ্যে সেউজগাড়ী আমতলা মোড়ে রেলওয়ের বস্তিতে দুটি স্পটে ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ও গাঁজা প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া সেউজগাড়ী পালপাড়ায় একটি স্পটে ফেনসিডিল বিক্রি হচ্ছে। একই সাথে সেউজগাড়ী রেলওয়ে মাঠের কাছে আরও একটি স্পটে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি হয়। এসব স্থানে পুলিশের তেমন অভিযান নেই বললেই চলে।

স্টেশন সড়কে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ের পেছনে সুইপার পট্টির আশেপাশে মাদকের রমরমা বাণিজ্য চলে। সেখানে চোলাই মদ ও গাঁজার কারবার বেশি হচ্ছে। সেখানে তিনটি স্পট ছাড়াও ভ্রাম্যমাণভাবে এসব মাদক বিক্রি হয়ে থাকে। সেই ভোর থেকে রাতভর সেখানে মাদক কেনাবেচা হয়।

আগের বছরগুলোতে পুলিশের কঠোর নজরদারিতে মাদক এবারের মত সয়লাব করতে পারেনি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর পুলিশিং কাযক্রম এখনও স্বাভাবিক না হওয়ার কারণেই অতীত বছরগুলোর চেয়ে এবার বগুড়ায় বেশি মাদক দ্রব্য মজুদ করেছে কারবারিরা। বগুড়া শহরের আরও একটি বড় মাদক স্পট চকসুত্রাপুরের হাড্ডিপট্টি। সেখানে তিনটি স্পটে ভ্রাম্যমাণভাবে ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ও গাঁজাসহ সব ধরণের মাদক বিক্রি হচ্ছে। 

এছাড়া শহরের চকসুত্রাপুর সুইপার পট্টির আশেপাশে চোলাই মদ বিক্রি হয়। বছর দু’য়েক আগে মদের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সেখানে ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত হয়। এছাড়া আরও এক যুবক ছুরিকাঘাতে আহত হয়। তবুও মদ কেনাবেচা থেমে নেই।

এসব স্পটগুলো ছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। মুঠোফোনে অর্ডার পাওয়ার সাথে সাথে কারবারিরা বাড়ি গিয়ে সেবনকারিদের কাছে মাদক পৌঁছে দিচ্ছে। মোটর সাইকেলে করে ভ্রাম্যমাণভাবেও ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, গাঁজা ও হেরোইন পৌঁছে দেওয়া হয়ে থাকে। এদিকে, শুধু শহরেই নয়, গ্রামে গ্রামে হানা দিয়েছে মাদক।

একটি মেসে থাকা ৪ জন শিক্ষার্থী রান্না করার জন্য কাজের লোক খোঁজার জন্য শহরের হাড্ডিপট্টি যায়, সেখানে তাদের দাড়িয়ে থাকা দেখে মাদক ব্যবসায়ী এক মহিলা বলে মাল দিচ্ছে না, মাল আছে দাম একটু বেশি হবে। নিলে আমার সাথে আসো। এসব শুনে শিক্ষার্থীরা হেসে বলে আমরা মাল নেওয়ার জন্য আসেনি, আমরা কাজের লোক খোঁজার জন্য এখানে এক মহিলার সাথে কথা বলে দাঁড়িয়ে আছি। এমন চিত্র বগুড়ার মাদক কারবারিদের।

বগুড়া সদর ছাড়াও শাজাহানপুর, কাহালু, নন্দীগ্রাম, আদমদিঘী, দুপচাঁচিয়া, শিবগঞ্জ, গাবতলী, সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি, শেরপুর ও ধুনট উপজেলার গ্রামে গ্রামে, বন্দরে বন্দরে মাদকের রমরমা বাণিজ্য চলছে। পাশাপাশি বাড়ছে মাদকসেবির সংখ্যাও।

আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কারবারিরা মদসহ সব ধরণের মাদকের চাহিদা মেটাতে মজুদ গড়ে তুলছে। (২৯ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়েও আলোচনা করা হয়।

সভায় পূজা চলাকালে আশেপাশে মাদক, হাউজি ও জুয়ার আসর বসতে না পারে সেজন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও  স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে পূজায় সকল প্রকার লাইসেন্সপ্রাপ্ত মাদকের দোকানে পারমিট ছাড়া কেউ যেন মাদক কেনাবেচা করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া নবমী ও দশমীর তিনদিন আগে থেকেই মাদকের কেনাবেচা বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

গত সপ্তাহ থেকে জেলার পুলিশের মোকামতলা, শিবগঞ্জ, শেরপুর থানা, ও ডিবি পুলিশসহ কয়েকটি দল কয়েকটি স্থান থেকে মাদকদ্রব্যসহ ৮/১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার জানান, মাদককারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সেইসাথে মাদকের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। ইতিমধ্য কয়েকটি স্থান থেকে মাদকদ্রব্যসহ বেশ কয়েকজন কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বগুড়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাজিউর রহমান বলেন, মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারিদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাঝেমধ্যেই মাদকসহ কারবারিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

মেসেঞ্জার/আলমগীর/তারেক