ঢাকা,  বুধবার
১৩ নভেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

আশুলিয়ায় সরকারি রাস্তা দখল করে অর্ধশতাধিক দোকানপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার 

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

আশুলিয়ায় সরকারি রাস্তা দখল করে অর্ধশতাধিক দোকানপাট

ছবি : মেসেঞ্জার

ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া-জিরানী আঞ্চলিক সড়কের শিমুলিয়া বাজার এলাকায় সরকারি রাস্তা দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে সরকারি সড়কের উভয় পাশ দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বাবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি সরকারি রাস্তার উপরে স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা অপসারনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছেন। এছাড়া সম্প্রতি তিনি আশুলিয়া এসিল্যান্ড অফিসেও আবেদন করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিমুলিয়া বাজার থেকে শিমুলিয়া শ্যামা প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের আগে কালভার্ট পর্যন্ত এবং শিমুলিয়া বাজার থেকে নতুন বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারি রাস্তার উভয় পাশেই রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানপাট।

দোকানগুলোর মধ্যে রয়েছে 'স' মিল, মুদি দোকান, চায়ের দোকান, কাপড়ের দোকান, মিষ্টির কার্টুনের দোকান, রড সিমেন্টের দোকান, টেইলার্স, সেলুন, ফ্লেক্সিলোড, বিভিন্ন মনিহারিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানপাট। এসব কারণে রাস্তাটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং ভ্যান-রিকশা, অটোরিকশা সহ কোন যানবাহন রাস্তার পাশে রাখা যায়না। যার ফলে যানবাহনগুলো জটলা বেঁধে থাকে সবসময়। জরুরী কোন রোগী থাকলে তাকে নেয়া দুস্কর হয়ে পড়ে। 

শিমুলিয়া বাজারের বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিমুলিয়া বাজার থেকে শিমুলিয়া শ্যামা প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের আগে কালভার্ট পর্যন্ত রাস্তার আরএস দাগ নং ১৩৫০, বিআরএস দাগ নং ৮৪১৪ এবং শিমুলিয়া বাজার থেকে নতুন বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত আরএস দাগ ১৮২৭, বিআরএস ৮৪২১ নং দাগের রাস্তার উভয় পাশ দখল করে বিভিন্ন দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে।

সরকারি এ রাস্তা দখল করে শিমুলিয়া তীর্থঘাট এলাকার মৃত হামেদ আলীর ছেলে ইয়ার হোসেন, সাইদুর রহমান, তার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক সাদ্দাম হোসন, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ফরহাদ হোসেন, মৃত মজিবুর রহমান গং সহ ১০/১২ জন দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া হিসেবে হাতিয়ে নিচ্ছেন।

এছাড়া আবার ইয়ার হোসেন প্রভাব খাটিয়ে ১২০ ফিট লম্বা করে টিন দিয়ে ঘর নির্মাণ করছেন। আওয়ামী লীগ পরিবারের লোকজন হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। শিমুলিয়া বাজারের সবকিছুই চলে তাদের ইশারায়। প্রতিবাদ করার সাহসটুকুও কেউ পায় না বলে দাবী করেন তারা।

এলাকাবাসী আরো জানান, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন স্কুল-কলেজগামী শত শত ছাত্র-ছাত্রী, পোশাক শ্রমিকসহ এলাকার হাজারো মানুষ প্রতিনিয়ত চলাচল করে। এছাড়া রাস্তাটি দিয়ে প্রচুর যানবাহনও চলাচল করে।

স্থানীয় ভূমিদস্যু ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রেকর্ডীয় সরকারি রাস্তাটির উভয় পাশ অবৈধভাবে দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে নিজেরা ব্যবসা করছে এবং দোকানপাট ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। রাস্তা দখলে নিয়ে দোকানপাট নির্মাণ করে চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। রাস্তাটি দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিমুলিয়া শ্যামা প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন শত শত লোকজন, শিক্ষার্থী, পোশাক শ্রমিক, যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু রাস্তা দখল করে উভয় পাশে দোকানপাট করে রাস্তা সংকীর্ণ করে ফেলেছে।

ফলে এখান দিয়ে চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি মহল জোরপূর্বক অনেক দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয় সরকারি রাস্তা ভরাট করে বিশাল আকৃতির একটি অটোরিকশা রাখার গ্যারেজও তৈরী করেছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন এই শিক্ষক।

স্থানীয় বাবুল হোসেন জানান, একের পর এক ঘর করে ভাড়া দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয় ইয়ার হোসেন সরকারি রাস্তা ভরাট করে টিন সেডের বিশাল একটি ঘর নির্মাণ করছেন।

তিনি জানান, এসব বিষয় বিবেচনা করে এরই মধ্যে এলাকাবাসির পক্ষে তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসক এবং আশুলিয়া এসিল্যান্ড বরাবরে আবেদন করেছেন। সেই সাথে এলাকাবাসী রাস্তা উদ্ধারে গণস্বাক্ষর প্রদান করেছে। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেন নি। এতে তাদের কারো মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ মোহাম্মদ জুবায়ের জানান, দোকানগুলো অনেক আগের। তবে আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। খোঁজ নিয়ে দেখবো।

মেসেঞ্জার/নোমান/তারেক