ছবি: মেসেঞ্জার
দোতারা একটি বঙ্গীয় লোকজ বাদ্যযন্ত্র। দুটি তারের সাহায্যেই এতে এক সপ্তকের সব সুর বাজানো যায় বলে একে দোতারা বলা হয়। উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া গানেদো তারা বাজানোর ঐতিহ্য প্রায় পাঁচ শত বছরের পুরনো।
ভাওয়াইয়া গানের শিল্পীদের দোতারার চাহিদাও দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে নিজের বাড়িতে প্রতি চার থেকে পাঁচ শত দোতারা তৈরি করছেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর ও রংপুরের পীরগঞ্জের সীমন্তবর্তী দশমৌজা পানেয়া গ্রামে আতাউর রহমান ও চাঁন রুবি দম্পতি।
সম্প্রতি এই দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় আঙ্গিনা উঠোন এমন কি ঘরের ভিতরে বাহিরে সব খানে ছড়ানো ছিটানো বাহারি ডিজাইনের দোতারা। আতাউর-রুবি দম্পতি'র বাড়িটি এলাকায় দোতারার বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বেশ আগে থেকেই।
সময়ের পরিক্রমায় সংগীতচর্চার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্রে পরিবর্তন হলেও এতোটুকু কমেনি দোতারার আবেদন। প্রায় দুই যুগেররও বেশী সময় ধরে মাটির গন্ধমাখা শেকড়ের সুর তুলে জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হিসেবে দোতারার কারখানা গড়ে তুলেছেন আতাউর-রুবি দম্পতি।
শুরুর গল্পটাও ভিন্ন। ভালো মানের দোতারা না পেয়ে নিজেই একটি দোতারা তৈরি করেন দোতারা বাদক আতাউর রহমান। সেই থেকে সহধর্মীনী, রংপুর বেতারের ভাওয়াইয়া শিল্পী চাঁন রুবির সহায়তায় দোতারা তৈরি আর বাজারজাত শুরু। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের।
ভাওয়াইয়ার জনপদ রংপুর ছাড়াও আশেপাশের জেলা, রাজধানী ঢাকা এমনকি লালনের ভিটে কুষ্টিয়াতেও জায়গা করে নিয়েছে আতাউর আর চাঁন রুবি দম্পতির কারখানায় তৈরি দোতারা। এক হাজার-বারোশো থেকে আকার ও ডিজাইনভেদে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন একেকটি দোতারা।
প্রতিমাসে প্রায় পাঁচশ দোতারা বেচাকেনা করেন তারা। তাদের দাবী দেশের দোতারার চাহিদার একটা বড় অংশই পূরণ করেন তারা। নিজেদের পাশাপাশি এলাকার বেকার তরুণরাও দোতারার কারখানায় কাজ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।
সংগীত শিল্পী সাজ্জাদ জাহির নাজিম বলেন, লোকগানের সঙ্গে প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র দোতারার যোগ অবিচ্ছেদ্য। সংগীতচর্চা ও বাদ্যযন্ত্রে পরিবর্তন ঘটলেও দোতারার মতো লোকবাদ্যের আবেদন নি:শেষ হবে না কখনোই।
মেসেঞ্জার/সিয়াম/আজিজ