ছবি: মেসেঞ্জার
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বড় মানিক এলাকায় ছোট যমুনা নদী ওপর একটি নতুন গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
আগের পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি ভেঙে ফেলে তার পাশেই নদী পারাপারের জন্য পারাপারে দুই লেনের কাঠে একটি বিকল্প সেতু নির্মাণ করেছিল নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রায় নয় মাস আগে তৈরী করা ওই কাঠের সেতুর খুঁটি দেবে গিয়ে কাঠের সেতুটির মাঝখানের পাটাতন বেঁকে হেলে পড়েছে। এখন কাঠের সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
কাঠের সেতু ছাড়া নদী পারাপারে আর কোন বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। একারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাঠের সেতু পারাপারের বারনের করার কথা কেউ শুনছেন না। ওই পথে চলাচলকারী লোকজন ঝুঁকি নিয়ে কাঠের সেতু পারাপার হচ্ছেন। দুই লেনের কাঠে কাঠের সেতুটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে রিকশা-ভ্যান ছাড়া ভারী কোন যানবাহনও চলাচল করতে পারবে না। গত নয় মাস ধরে ওই পথে সরাসরি ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ওই পথে চলাচলকারী লোকজনের অভিযোগ, পুরাতন সেতু ভেঙে তার পাশে বেইলি সেতু করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কাঠের সেতু করা হয়েছে। সেই কাঠের সেতুও নিম্নমানের। রিকসা-ভ্যান উঠলেই কাঠের সেতুটি কাঁপত। এখন খুঁটি দেবে গিয়ে হেলে পড়েছে। নতুন সেতু নির্মাণের নির্ধারিত সময় দেড় বছরের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সময় চলে গেছে। অথচ এখন নতুন সেতুর দৃশ্যমান কাজ হয়নি। নির্ধারিত সময়ে নতুন সেতু হবে না বলে আশঙ্কা তাদের।
তবে এলজিইডির প্রকৌশলী ও নিয়োজিত ঠিকাদার লোকজনেরা বলছেন, বিকল্প হিসেবে কাঠের সেতুই বরাদ্দ ছিল। বেইলি সেতুর বরাদ্দ ছিল না।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে গিয়ে দেখা গেছে, কাঠের বিকল্প সেতুর পূর্ব দিকে হ্যান্ড মাইকে কাঠের সেতু দিয়ে সকল ধরণের রিকসা-ভ্যান চলাচলে নিষেধ করা হচ্ছিল। কাঠের সেতুর দুই পাশের মুখে চালকেরা যাত্রীদের নেমে দিয়ে খালি রিকসা-ভ্যান কাঠের সেতু দিয়ে পার করছিলেন। লোকজন পায়ে হেঁটে পার হচ্ছিলেন। এসময় রিকসা-ভ্যানচালক ও পায়ে হেঁটে কাঠের সেতু পারাপার হওয়া লোকজনেরা সেতুর ঠিকাদার ও আওয়ামী লীগ দলকে গালিগলাজ করতে শোনা গেছে।
কাঠের সেতুতে গিয়ে দেখা গেল, দুই লেনের কাঠের সেতুতে একপাশে দিয়ে একটি করে রিকশা-ভ্যান যাওয়ার রাস্তা আছে। এক লেনে এক একই সঙ্গে রিকসা ও সাইকেল চলাচল করতে পারবে না। ইউক্যালিপটাস গাছ দিয়ে খুঁটি করা হয়েছে। সেতুর মাঝখানে খুঁটি দেবে গিয়ে এক পাশে বেঁকে সেতু নিচে দেবে গেছে। ঠিকাদারের নিয়োজিত লোকজন দেবে যাওয়া কাঠের সচলের চেষ্টা করছিলেন।
ধরঞ্জী এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক মোরশদুল ইসলাম বলেন, নতুন সেতু হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতা প্রভাষক মাসুদ রেজা সেতুটির নির্মাণকাজ করছেন। তখন তিনি দলীয় ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের প্রভাব খাটিয়ে যেনতেনভাবে কাঠের একটি বিকল্প সেতু করে দিয়েছেন। এখন সেতু বেঁকে গেছে। যাত্রী তো দূরের কথা খালি গাড়ি নিয়ে যেতেই ভয় লাগছে।
আরেক ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক বলেন বাবু মিয়া বলেন, পুরাতন সেতু ভেঙে তার পাশে লোহার বেইলি সেতু করার কথা বলা হয়েছিল। বেইলি সেতুর টাকা মেরে দিয়ে কাঠের সেতু করেছে। এখন কাঠের সেতুর নড়বড়ে অবস্থা। আওয়ামী লীগ চোরের সরকার ছিল। জনগণের সব টাকা চুরি করে খেয়ে পালিয়েছে।
কড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা বাছেদ আলী বলেন, নয় মাস আগে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক পাশে পিলার হয়েছে। বিকল্প কাঠের সেতুর অবস্থাও খারাপ যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। আমরা চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।
নির্মাধীন সেতু নির্মাণের পূর্ব পাশে টাঙানো একটি সাইনবোর্ডে সেতুর সর্ম্পকিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাতে সকল তথ্য থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানার ছকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা লেখা নেই। ওই সাইনবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেজ কর্মসূচির আওতায় পাঁচবিবি উপজেলার বড় মানিক এলাকায় ছোট যমুনা নদীর ওপর ৯০ দশমিক ৬ মিটার দীর্ঘ গার্ডার সেতু নির্মাণ হচ্ছে। ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৮ জুলাই কাজের মেয়াদ শেষ হবে। এ কাজের চুক্তি মুল্যে ৮ কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৭৭২ টাকা। সেতু নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা পাঁচবিবি এলজিইডির উপসহকারী সঞ্জিত চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, 'ছোট যমুনা নদীর বড় মানিক গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ জয়েন্ট ভেঞ্চারে যশোহরের ঠিকাদারের নাম রয়েছে। তবে জয়পুরহাটের প্রভাষক মাসুদ রেজা এ সেতুর নির্মাণের কাজ করছেন'।
প্রভাষক মাসুদ রেজা রেজা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদে আছেন। তিনি সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের ঘনিষ্ট। জেলার এলজিইডির বড়-বড় কাজ তিনি করছেন। তবে ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রভাষক মাসুদ রেজা বড় মানিক সেতু নির্মাণের সাইডে আসছেন না। তার নিয়োজিত লোকজন কাজ দেখভাল করছেন। তবে সেতু নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে বলে পাঁচবিবি এলজিইডির সূত্রে জানা গেছে।
বড় মানিক সেতু নির্মাণের সাইড দেখভাল করছেন পলাশ নামে একব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘বিকল্প কাঠের সেতুটি এক লেন করার কথা ছিল। মানুষ এক দিক দিয়ে আসবে, এক দিক দিয়ে যাবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা ভেবে এটি দুই লেন করা হয়। হঠাৎ নদীর পানি বাড়ায় তীব্র স্রোতের মধ্যে গাছের গুঁড়ি, বর্জ্য পলিথিন, কচুরিপানা সেতুতে ধাক্কা খাওয়ায় এটি একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য মানুষ চলাচলে একটু বিঘ্ন হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে মাইকিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা সংস্কার কাজ শুরু করেছি। পানি বেশি থাকার কারণে কাজ দ্রুত করা যাচ্ছে না।
পাঁচবিবি উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী সঞ্জিত চন্দ্র চৌধুরী বলেন, ছোট যমুনা নদীর বড় মানিক এলাকায় একটি গার্ডার নতুন সেতু নির্মাণ হচ্ছে। একারণে পুরাতন সেতু ভেঙে অনেক আগেই ঠিকাদার কাঠের দুই লেনের বিকল্প সেতু তৈরী করে দিয়েছেন। ছোট-ছোট যানবাহন কাঠের সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছিল। কিন্তু নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় কাঠের সেতুটি দেবে গেছে। এ কারণে চলাচলের সমস্যা হচ্ছে। বেইলি সেতু নির্মাণ বরাদ্দ ছিল বলে এলাকার লোকজন আমাদের প্রশ্ন করেন। আসলে বেইলি নয় কাঠের সেতুর বরাদ্দ ধরা ছিল। বরাদ্দের বাহিরে তো ঠিকাদার কাজ করতে পারবে না।
পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা সুলতানা বলেন, ছোট যমুনা নদীর বড় মানিক এলাকায় নতুন সেতু নির্মাণ হচ্ছে। বিকল্প কাঠের সেতু ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কথা জানার পর এলজিইডির সঙ্গে কথা বলেছি। প্রকৌশলী কাঠের সেতু পরির্দশন করেছেন। ওই পথে অনেক মানুষ চলাচল করেন। দ্রুত কাঠের সেতুটি ঠিকঠাক করতে বলেছি।
ছবি আছে।
মেসেঞ্জার/রমি/আজিজ