ঢাকা,  বুধবার
১৬ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

সেতু নির্মাণের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা, কাজ ফেলে চলে গেছে ঠিকাদার

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২১:২৩, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

সেতু নির্মাণের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা, কাজ ফেলে চলে গেছে ঠিকাদার

ছবি : মেসেঞ্জার

খুলনার কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া খালের দুই পাড়ের খাস জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি দোকানপাট ও পাকা স্থাপনা। অবৈধ এই স্থাপনাগুলো প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠেছে খালের উপরে সেতু নির্মাণে। প্রায় দুই বছর ধরে প্রতিবন্ধকতা সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটির নির্মাণ কাজ ফেলে রেখে চলে গেছে ঠিকাদার।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ‘উপজেলা সদর থেকে হায়াতখালি জিসি হয়ে গিলাবাড়ি জিসি সড়কের ৪ হাজার ২৫৫ চেইনেজে ৩৬ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জন্য দরপত্র আহবান করা হয়।

দরপত্রে অংশ নেওয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ‘এসএ-জেডটি জেভি’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২২ সালের (৩ আগষ্ট) কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের (১৮ ডিসেম্বর) কাজ শেষ হওয়ার কথা।

এলজিইিডির উপসহকারি প্রকৌশলী আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, সেতুটির নির্মাণ কাজের শুরুতেই জায়গা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। খালের দুই পাড়ে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তির পাকা স্থাপনা সরাতে বলা হলে তাঁরা তালবাহানা শুরু করেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও সমাধান না হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখে চলে যান।

এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরিত আবেদন ও স্থানীয় কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর আগে ওই স্থানে সেতু ছিল। এলাকার মানুষ সেটিকে ‘বড় ব্রীজ’ হিসেবে জানতো। ২০০৯ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে শাকবাড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙে সেতুটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এতে দুই ইউনিয়নের মানুষের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

পরে খালের দুই পাশে মাটির বাঁধ দিয়ে মাঝখানে সিমেন্টের পাইপ বসিয়ে পানি সরবরাহের পথ তৈরী করা হয়। এতে খালের দুই পাড়ে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় প্রতিবছর আমন মৌসুমে বাঁধ কেটে পানি সরবরাহের পথ প্রশস্তের চেষ্টা করে কৃষকরা।

এ কারণে ওই পথে মানুষের যাতায়াত বিঘ্নিত হয়। কয়েক বছর ধরে সেখানে যানবাহন চলাচল সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন যাতায়াতকারিরা। এ কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরুর দাবী জানিয়েছেন মানুষ।

মহারাজপুর গ্রামের সালাম কারিগর, মুনসুর গাজী, আবুল কাশেম, কালনা গ্রামে মহসীন মোল্লা, সালাম মোল্লাসহ শতাধিক কৃষক জানান, সেতুর স্থানে মাটির বাঁধ থাকায় বর্ষা মৌসুমে এলাকার কৃষি জমির পানি সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ফলে প্রতি বছর কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল আবাদ নিয়ে প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় কৃষকদের। এ কারণে সব প্রতিবন্ধকতা দুর করে দ্রুত সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর দাবী তাদের।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম খোকা বলেন, দীর্ঘদিন ওই খালটি ইজারা নিয়ে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি আল আমীন মাছ চাষ করে আসছিলেন। তার অনুসারি কিছু লোকজন খালের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। সেতু নির্মাণ কাজের শুরুতেই তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে ঠিকাদার। যে কারণে ঠিকাদারকে কাজ ফেলে চলে যেতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

কয়রা উপজেলা মৎস্য ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ বিশ্বাস বলেন, এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা জরুরী। সেতু না থাকায় দীর্ঘ দিন এ পথে পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ব্যবসায়িদের।

কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী দারুল হুদা বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটি নির্মাণের জন্য খালের দু’পাশের স্থাপনা সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ওই সময়ে স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার অসহযোগীতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ওই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

মেসেঞ্জার/কামাল/তারেক