ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
১৭ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

পা দিয়ে লিখে এইচএসসি তে গোল্ডেন পেল অদম্য মেধাবী মানিক

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

পা দিয়ে লিখে এইচএসসি তে গোল্ডেন পেল অদম্য মেধাবী মানিক

ছবি : মেসেঞ্জার

হাত না থাকার পরও পা দিয়ে লিখেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন বুকে লালন করে এগিয়ে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের চন্দ্রখানা গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ময়নার ছেলে অদম্য মেধাবী মানিক রহমান।

মানিক রহমান এবার বিজ্ঞান বিভাগে সৈয়দপুর বিঞ্জান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পা দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে জিপি-এ গোল্ডেন প্লাস পেয়েছে। তার পরীক্ষার রোল নম্বর ১৪৮৪৬৯। তার পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর হচ্ছে ১৩৩৬। 

অদম্য মেধাবী মানিক রহমানের এইচএসসিতে পা দিয়ে লিখে জিপিএ- গোল্ডেন প্লাস অর্জনে তার জন্ম স্থান ফুলবাড়ীতে আনন্দ দেখা দিয়েছে। মানিকের পরিবারে নেমেছে খুশির বন্যা। পরিবারের লোকজন মানিকের স্বপ্ন পূরণে সিঁড়ি বেয়ে উপরের ওঠার যোগ্যতা চোখে দেখছেন।

মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ময়না জানান, আমার প্রতিবন্ধী ছেলে মানিক কষ্ট করে পা দিয়ে পরীক্ষায় খাতায় লিখে পিএসসিতে জিপিএ-৫,জেএসসিতে জিপিএ-৫, এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ গোল্ডেলন প্লাস ও এবার এইচএসসিতে জিপিএ গোল্ডেলন প্লাস অর্জন করে আমাদের বুক আনন্দে ভরে দিয়েছে।

তিনি আরও জানান, মানিক রহমান ভবিষ্যতে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন লালন করে চলছে। এবারের এইচএসসিতে জিপি-এ গোল্ডেন প্লাস পাওয়ার মধ্য দিয়ে সে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের যোগ্যতা অর্জন করেছে। এখন বুয়েটে ভর্তি হওয়ার জন্য মানি ঢাকায় কোচিং করছে। আমি তার স্বপ্ন পূরণে দেশবাসী সকলের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।

উল্লেখ্য, ৪-১২-২০০৫ ইং সালে জন্ম নেয়া শিশু মানিক রহমানের জন্ম থেকেই দুই হাত ছিলনা। তার ডান পায়ের চেয়ে বাম পা টি জন্ম থেকেই ছোট। জন্মের সময় থেকে তার ঠোঁট ও তালু কাটা থাকলেও পরে ঠোঁট ও তালু অপারেশন করে কাটা অংশটি ভালো করা সম্ভব হয়।

মানিক জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী হলেও সে নিজেকে স্বাভাবিক মনে করে পথ চলছে। তার দু’হাত না থাকলেও সে পা দিয়েই প্রায় সব কিছুই করতে পারে। শধু খাওয়া, গোসল, টয়লেটে বাবা মাকে সাহায্য করতে হয়। মানিক রহমান পা দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে জেএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করে। একইভাবে পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ অর্জন ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে। এসএসসি পরীক্ষায় ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ গোল্ডেলন প্লাস অর্জন করে।

এবার বিজ্ঞান বিভাগে সৈয়দপুর বিঞ্জান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পা দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে জিপি-এ গোল্ডেন প্লাস পেয়েছে। অদম্য মানিক রহমান গান গাওয়া ও কবিতা আবৃত্তিতেও পারদর্শী। স্থানীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে গান ও আবৃত্তি পরিবেশন দেখা যায়।

অদম্য মেধার অধিকারী মানিক রহমান জানান, আমি একজন প্রতিবন্ধী অস্বাভাবিক মানুষ। হাত না থাকলেও পায়ে কলম ধরে আমি পরীক্ষার খাতায় লিখে যাচ্ছি। আমি আমার ইচ্ছা পুরণে বাবা-মা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রেরণায় আমি লেখাপড়া করে ভালো ফল করার চেষ্টা করছি।

এবার এইচএসসিতে আমি জিপিএ-গোল্ডেন প্লাস পেয়েছি। তবে পরীক্ষার খাতার মার্ক যা পেয়েছি এর চেয়ে আরও বেশি পাওয়া উচিত ছিল আমার। তার পরেও আলহামদুলিল্লাহ। আমার বাবা মা আমার পরীক্ষার রেজাল্টে খুশি। আমি ভবিষ্যত একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এখন আমি বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঢাকায় কোচিং করছি। আমি বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় আরেকটি ভালো ফলাফল করে বা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। এজন্য আমি সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।

মেসেঞ্জার/আনন্দ/তারেক