ছবি : ডেইলি মেসেঞ্জার
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ভিসার জন্য দেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে মনজুর আলম বাবুল (৪০) নামের এক ব্যক্তি হত্যা হয়েছেন। পিতাকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন ছেলে মোহাম্মদ আরকান (১৬)।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ১০ টার দিকে ছনুয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ছেলবন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ছনুয়া ইউনিয়নের মধুখালী এলাকার মৃত দলিলুর রহমানের ছেলে মনজুর আলম বাবুলকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা নেন ছেলবন এলাকার মোহাব্বত আলী সিকদারপাড়ার মাস্টার মোহাম্মদ আলমের ছেলে মো. সোহেল রানা (২৬)। পরে মনজুর আলম বাবুল সৌদি আরবে যান। কিন্তু সেখানে ভালো চাকরি না পাওয়ায় তিন মাসের মাথায় তিনি দেশে ফিরে এসে মামলা করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদে সালিসি বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠকেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি।
পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে শুক্রবার সকালে মনজুর আলম বাবুলকে ডেকে নেন মাস্টার মোহাম্মদ আলম। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে সোহেল হাতে থাকা ছুরি দিয়ে বাবুল ও তার ছেলে আরকানকে আঘাত করেন। ঘটনাস্থলে বাবুল লুটিয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত বাবুলের ছেলে আরকান পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। নিহত মনজুর আলম বাবুল অভিযুক্ত সোহেল রানার চাচাতো বোনের স্বামী। সোহেল চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র।
পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাবুলের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর অভিযুক্ত সোহেল রানাকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিক বাঁশখালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সেনাবাহিনীকে খবর দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর টিম না আসা পর্যন্ত সোহেলকে উদ্ধার করে পুলিশ একটি ঘরে আটকে রাখে। পরে সেনাবাহিনীর টহল টিম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং সোহেলকে থানায় নিয়ে যায়।
নিহতের ছোট ভাই হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ মনছুর আলম বলেন, আমার বড় ভাই সোহেল থেকে তিন বছর আগে ৩ সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে একটি ভিসা কিনে নেন। তবে ভিসা ক্রয় করার সময় কথা ছিল ওমান গিয়ে ভালো চাকরি দেবে। কিন্তু তা না করে সেখানে বেকার বসিয়ে রাখে। একবেলা খেতে দিলেও দুই বেলা খেতে দিতো না। এমনকি বাসার যে ওয়াইফাই লাইন ছিল তাও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। যাতে বাংলাদেশ পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, এভাবে তিন চার মাস অপেক্ষা করার পরও যখন ভিসার কথা মতো চাকরি দিচ্ছে না, উপায় না দেখে আমার ভাই বাসার পাশে কিছু লোকজনকে উক্ত বিষয়টি শেয়ার করে। পরে রাউজান উপজেলার কিছু ভাইদের সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসে।
এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ছুরিকাহত মনজুরকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার আগে তার সাথে হওয়া ঘটনা পরিবারের সদস্যদের কাছে বলে যান।
এদিকে নিহতের লাশ সুরতহাল প্রতিবেদনের জন্য পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
পেকুয়া থানার ওসি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, বাঁশখালী থানার আবেদনের প্রেক্ষিতে নিহতের লাশ আমরা পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি।
মেসেঞ্জার/সজিব