ঢাকা,  মঙ্গলবার
২২ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

টাঙ্গাইলে

১৪"শ অসহায় নারী মাশরুম চাষে স্বপ্ন বুনছে

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

১৪

ছবি: মেসেঞ্জার

টাঙ্গাইলে ১৪"শ অসহায় নারী মাশরুম চাষে স্বপ্ন বুনছে যমুনা উন্নয়ন সংগঠনের দলনেতা উদ্যোক্তা হালিমার মাধ্যমে। এদিকে ১৪"শ নারীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা। 

দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম হালিমা খাতুনের। অর্থের অভাবে ২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি। অভাব অনটনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন কালিহাতি উপজেলার বাবা হাতেম আলী। পরীক্ষার খরচ না দিতে পেরে বাবা বাল্য বিয়ে দিয়ে দেন। 

আজ সেই হালিমা খাতুন উদ্যোক্তা হয়ে মাসে প্রায় লক্ষ টাকা উপার্জন করছেন মাশরুম চাষে।  

অপরদিকে উদ্যোক্তা এই হালিমা খাতুন যমুনা উন্নয়ন সংগঠনের অসহায় ১ হাজার ৪০০ জন নারীকে নিয়ে স্বপ্ন বুনছে মাশরুম চাষে। তাদেরকে নিয়ে তার বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে শিল্পের কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করছেন। 

ইতিমধ্যে ১ হাজার ৪০০ জনের মধ্যে ৩০ জন অসহায় নারী মাশরুম চাষ করে প্রত্যকেই মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা করে উপার্জন করছেন। 

এদের মধ্যে রয়েছেন বৃষ্টি, সিজা,নাফিজা, শিল্পী নাজনীন, নমিতা, নাজমা, পারুল সহ অনেকেই। 

সরেজমিনে দেখা যায় টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের রাবনা নয়াপাড়া মোয়াজ্জেম হোসেনের স্ত্রী হালিমা। ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশেই তার শশুর বাড়ি। সেই বাড়ির সামনেই মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ একটি ব্যানার। সেই ব্যনারের সামনে একটি টিনের ঘরে সারিবদ্ধ তাক তাক করে মাশরুমের প্যাকেট সাজিয়ে রাখছে।

জানা যায়, কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে সাভারে মাশরুমের উপরে একটি প্রতিষ্ঠানে তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে পাঁচটি মাদার মাশরুম বিনামূল্যে সেখান থেকে দেন। এরপর সেই পাঁচটি মাদার মাশরুম চাষ করে স্বজনদের মাঝে খাবারের উপযোগী করে প্রচারের জন্য বিলিয়ে দেন। যাতে গ্রামের মানুষের মাঝে বেঙের ছাতা মনে করে বিভ্রান্তি না করে। 

পর্যায়ক্রমে আবার শতাধিক মাদার মাশরুম নিয়ে এসে খাবারের উপযোগী করে তোলেন। এইভাবে এখন প্রতিমাসে প্রায় ১৫"শ মাদার মাশরুম চাষ হচ্ছে। এতে মাসে প্রায় লাখ টাকার মুনাফা অর্জন হয়ে থাকে। 

প্রতি প্যাকেট খরচ হয় প্রায় বিশ টাকা। একেকটি প্যাকেট থেকে মাশরুম বিক্রি আসে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ শত টাকা। আবার কোন কোন সময় তারও বেশি বিক্রি হয়। একটি প্যাকেট ২০ দিন পর পর তিনবার উত্তোলন করা যায়। এছাড়াও প্যাকেটে প্রতিবারে ১থেকে থেকে দেড় কেজি মাশরুম উত্তোলন করে বলে জানা যায়। 

স্থানীয় মালেক বলেন কয়েক জন কর্মচারী তার মাশরুম চাষে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও নারী উদ্যোক্তা হালিমা এই মাশরুম চাষের পাশাপাশি তিনি শতশত অসহায় মহিলাদেরকে হাতে কলমে বিভিন্ন শিল্পের কাজ করে স্বাবলম্বী করে তুলছেন।

তিনি এসব অসহায় মহিলাদের দিয়ে পাটের ব্যাগ,চটের ব্যাগ,সিমেন্ট বস্তা কেটে বাজারের ব্যাগ, ফুলদানিসহ হস্তশিল্প ও কঠির শিল্পের কাজ করাতেন।এতে মহিলারা স্বাবলম্বী হচ্ছে। 

বৃষ্টি, শিল্পী, পারুল নমিতা বলেন,নারী উদ্যোক্তা হালিমা তার নিজের সংসারের সচ্ছলতা ফিরে এনেছে। তেমনি আমাদের সংসারের সচ্ছলতা ফিরে আনার জন্য পথ তৈরি করে দিয়েছে। 

এখন স্বামীকে একটু আর্থিক সহায়তা করতে পেরে নিজেকেও ভালো লাগছে। তবে তিনি মনে করেন সহজ শর্তে সরকারি ঋণ পেতে পারলে নিজের ব্যবসা আরো লাভবান করতে পারবেন।

নারী উদ্যোক্তা হালিমা বেগম বলেন প্রথমে অল্প পরিসরে অল্প জায়গাতে মাশরুমের চাষ শুরু করি। গ্রাম অঞ্চলের মাশরুমের বেশি প্রয়োজন। কারণ হচ্ছে গ্রামের মহিলারা অসুস্থতা ও দুর্বলতায় ভোগে। মাশরুমটা হচ্ছে আদর্শ খাবার। এই মাশরুমের ভিতরে সব ধরনের পুষ্টি রয়েছে। গ্রামের মহিলাদের পুষ্টিহীনতা দুর করতে আমার এই উদ্যোগ। 

শুধু তাই না আমি সাভার থেকে তিন মাসের ট্রেনিং নিয়ে এসে ৩০ জন অসহায় নারীকে মাশরুম চাষে সহযোগিতা করছি। তারাও আজ মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা উপাযন করছে। 

এছাড়াও তিনি বলেন আমার যমুনা উন্নয়ন সংগঠন আছে। সেই সংগঠনে অসহায় ১৪০০শ নারী রয়েছে। এইসব নারীদের আমি মাশরুম চাষে উৎসাহিত করবো। তাদেরকে খাওয়াইয়া বুঝাইতে চেষ্টা করছি যে মাশরুম কতটা উপকার। তাদের ডিম দুধের অভাব পূরণ হচ্ছে এই মাশরুম।  তিনি আরো বলেন অসহায় ১ হাজার ৪০০ নারীকে স্বাবলম্বী করতে সরকারের সহজ শর্তে ঋণের প্রয়োজন। তাই সরকারের কাছে তার দাবি সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।  

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কবির হোসেন জানান,হালিমা খাতুন পরিশ্রম ও দক্ষতার গুনেই একজন সফল উদ্যোক্তা। তার প্রকল্পে আমি গিয়েছি তিনি শুধু মাশরুম চাষ করেই সফলতা হননি। তিনি জৈব সার উৎপাদনেও একজন সফল।

তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে তার দলের প্রতিটি সদস্যদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলবো। যাতে অসহায় নারীরা প্রত্যেকেই উদ্যোক্তা হতে পারে। 

মেসেঞ্জার/উজ্জল/আজিজ