ঢাকা,  মঙ্গলবার
২২ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

আশুলিয়ায় ৩১ ঘন্টা ধরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার 

প্রকাশিত: ১৮:৩৫, ২২ অক্টোবর ২০২৪

আশুলিয়ায় ৩১ ঘন্টা ধরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ

ছবি : মেসেঞ্জার

ঢাকার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় তিন মাসের বকেয়া বেতন ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে ২য় দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন জেনারেশন নেক্সট নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এতে নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা জানান, এক মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রেখে দুই মাস আগে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। টানা তিন মাস তারা বেতন-ভাতা না পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন।

সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে শ্রমিকেরা আশুলিয়ার বাইপাইল ত্রি-মোড় এলাকায় জড়ো হয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাতেও শ্রমিকেরা রাস্তায় ছিলেন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালে আরও অনেক শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেন। এ প্রতিবেদন লেখার সময় বিকাল ৫টার দিকে শ্রমিকদের অবরোধ কর্মসূচি চলছে।

ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আশুলিয়া শিল্প পুলিশ ও আশুলিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। তাঁরা শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও শ্রমিকেরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

দীর্ঘ ৩১ ঘন্টা ধরে শ্রমিকদের টানা অবরোধের মুখে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে সড়কটি। একইসঙ্গে ওই এলাকা থেকে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কটিতেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও।

অবরোধের মুখে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ১৬ কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ অফিসগামী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়াও বিভিন্ন কাঁচামালবাহী ট্রাক ও মূল্যবান মালামাল আটকে থাকায় বড় ধরনের লোকসানের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শ্রমিকরা জানান, প্রায় তিন মাসের বকেয়া বেতন না দিয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মালিকপক্ষ একাধিকবার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু কথামতো কাজ করেনি। এ ছাড়া ৪-৫ মাস ধরে কারখানার স্টাফদেরও বেতন দেয়নি কর্তৃপক্ষ। আমরা কাজ করতে চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই সমস্যা সমাধান না হবে ততক্ষণ আমরা অবরোধ তুলবো না।

কারখানাটির একজন পুরুষ শ্রমিক বলেন, বেতন পরিশোধের জন্য আমাদের ছয়বার সময় দিয়েছে। বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয়, সচিবালয় সব জায়গায় গেছি। মালিকপক্ষ বলেছিল (১৭ অক্টোবর) নাহলে (২০ অক্টোবর) লাঞ্চের পরে বেতন দেওয়া হবে কিন্তু বেতন দেয়নি। আমরা এরপরও সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। অবশেষে রাস্তা অবরোধ করেছি।

আরেক নারী শ্রমিক বলেন, তিন মাস ধরে বেতন পাই না। অন্য কোথাও চাকরি পাচ্ছি না। রুম ভাড়া দিতে পারি না, বাচ্চার স্কুলের বেতন দিতে পারি না। দোকানের বাকির টাকা দিতে পারি না। মালিক কোনো কথা বলছেন না। বেতন না পেলে কীভাবে চলব।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানা সংশ্লিষ্ট একজন জানান, কারখানার চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব শেট্টি ভারতীয় নাগরিক। তিনি দেশে ফিরে গেছেন। ফলে বিষয়টি এখনও সমাধান হয়নি। কারখানাটির প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। বিভিন্ন খাতে প্রায় ১৩-১৪ কোটি টাকার বকেয়া রয়েছে। সরকার বা ব্যাংক ঋণ টাকা দিলে কারখানা পুনরায় চালু করা যাবে।

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী বলেন, সোমবার থেকে বকেয়া বেতন ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সড়ক ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। 

ওসি আরও বলেন, নবীনগর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী গাড়ি সোমবার রাত থেকে কোনাবাড়ী, ধামরাই, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো ব্যবহার করছেন।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সারোয়ার আলম বলেন, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড নামে কারখানার শ্রমিকেরা সোমবার থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দুজনেই বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। কারখানাটির অন্য পরিচালক যারা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বকেয়া বেতন পরিশোধের চেষ্টা চালাচ্ছি।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, বিষয়টি বিজিএমইএ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মেসেঞ্জার/নোমান/তারেক