ছবি : মেসেঞ্জার
নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষ শুধু নয়, মধ্যবিত্তরাও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। কারন আয় ও ব্যয়ের সমীকরণে এখন ব্যায়ের পাল্লায় ভারী হচ্ছে। যে সকল কর্মজীবী মানুষ দিনে ৪০০ টাকা আয় করেন তাদের প্রতিদিন গড়ে ৬০০ টাকা করে মাসে অন্তত ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
ফলে নানাভাবে ব্যয় কাটছাঁট করেও সাধারণ মানুষ পেরে উঠছে না। কারণ জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও সেভাবে আয় বাড়েনি। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারগ তাদের আর্থিক চাহিদা মেটানোর জন্য দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে।
অটো রিকশা চালক সাইফুল ইসলাম (৪৫) বলেন প্রতিদিন অটো চালিয়ে সব খরচ বাদ দিয়ে তিন থেকে চারশত টাকা আয় হয়। কিন্তু বাজারে গেলে ৪০০ টাকার মধ্যে সব কিছু কেনা যায় না। দেখা যায় বাজারে গেলে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ তো আছেই।
বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি অথচ আমার এখন মাসে খরচ হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। বেতন বাদে ঘাটতির এই টাকা ধার দেনা করে মেটাই।
একই অবস্থা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর। সামাজিক মর্যাদা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় এই শ্রেণীর লোকজন একদিকে যেমন সব পেশায় জড়িয়ে পড়তে পারছে না অন্যদিকে আর্থিক দৈন্যতাও সহ্য করতে পারছে না ফলে তারা পড়েছে উভয় সংকটে।
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের খরচ মেটাতে উপার্জনকারী ব্যাক্তির সংখ্যা বাড়ছে। আগে যেখানে পরিবারের একজন সদস্য কাজ করে অর্থ উপার্জন করত এখন সেখানে দুই থেকে তিন জন সদস্য কাজ করছে।
সরেজমিনে গাইবান্ধার হাটবাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। একইভাবে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকা ছিল, বর্তমানে তা ১২৫ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৫০ টাকা, আর এখন তা ৫৫ টাকায় ঠেকেছে। প্রতি কেজি রসুন ২২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪০ টাকা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০, মুখি কচু ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫, ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৭০ টাকা, বিআর-২৮ জাতের চাল ৫২ টাকা থেকে ৫৬, চিকন চাল ৫৫ টাকা থেকে ৬০ এবং প্রতি হালি ডিম ৪৮ টাকা থেকে বেড়ে ৫২ টাকা হয়েছে।
প্রতি কেজি দেশি মুরগির দাম ছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, বর্তমানে তা ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৮০ টাকা এবং প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মসুর ডাল, লবণ ও সয়াবিন তেলের দাম অপরিবর্তিত আছে।
সবজির দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে গাইবান্ধা হকার্স মার্কেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সবজি বিক্রেতা বলেন, বেশি দামে সবজি কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে বর্তমানে কিছু সবজির দাম কমেছে। আরও কমার আশা করছেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পরেশ চন্দ্র বর্মন জানান, নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
মেসেঞ্জার/সিয়াম/তারেক