ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩১ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

বগুড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

বগুড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট

ছবি : মেসেঞ্জার

বগুড়া জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে অর্ধেকেই সংকট। বগুড়া জেলায় ১ হাজার ৬০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৫৫টি স্কুলে দীর্ঘদিন থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

এরমধ্যে ২৪২টি স্কুলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষক চলতি দায়িত্ব হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ৫১৩টি স্কুলে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জেলা বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদগুলো শূন্য থাকায় পাঠদানসহ দাপ্তরিক কাজে বিদ্যালয়গুলোতে নানা সমস্যার পাশাপাশি সার্বিক শিক্ষায় বিঘ্ন ঘটছে।

বিভিন্ন কারণে এসব পদে শিক্ষক সংকট নিরসন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কার্যালয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার ১৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৭টি বিদ্যালয়েই দীর্ঘদিন থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ৩৮ জন এবং ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে ৩৯টি বিদ্যালয়।

আদমদীঘি উপজেলায় ৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ওই স্কুলগুলো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে। প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ১৫টি স্কুলে। মাত্র ৪৪টি স্কুলে রয়েছে প্রধান শিক্ষক। কাহালুতে ১১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৪টি স্কুলেই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

এরমধ্যে ১২টি স্কুলে চলতি দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক রয়েছেন এবং ৪২টি স্কুল চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ৮৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ১৫টি বিদ্যালয়ে এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে ১৯টি বিদ্যালয়। ধুনট উপজেলায় ২০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৪টি বিদ্যালয়ের শূন্য পদের মধ্যে ৩১টি চলছে চলতি দায়িত্ব দিয়ে এবং ৮৩টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে।

শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৬২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৯টি শূন্যপদের মধ্যে ২৭টি চলছে চলতি দায়িত্ব দিয়ে এবং ২২টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে। সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১৬৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৬টিতেই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ৪৭টি বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্ব এবং ৬৯টিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে চলছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলায় ১০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৬টি শূন্যপদের মধ্যে ২ টিতে চলতি দায়িত্ব এবং ৫৪টি ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। বগুড়া সদর উপজেলার ১২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৮টিতে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে। এরমধ্যে ৪টি চলছে চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক দিয়ে এবং ২৪টি বিদ্যালয়ে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

শেরপুর উপজেলার ১৩৭টির মধ্যে ৬৯টি বিদ্যালয়ে শূন্য পদ রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি চলছে চলতি দায়িত্ব দিয়ে এবং ৫৬টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে।

সোনাতলা উপজেলায় ১২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬১টি বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ২৩টি চলছে চলতি দায়িত্বের প্রধান দিয়ে এবং ৩৮টি চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে। শাজাহানপুর উপজেলায় ১২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫টি চলতি দায়িত্ব দিয়ে এবং ২৮টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবসর, মৃত্যু, পদোন্নতি ও সরাসরি প্রধান শিক্ষককের পদে নিয়োগ না থাকায় পদগুলো শূন্য হয়ে পড়েছে। কোথাও জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন কোথাও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বহুবিদ দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান করাতে পারছেন না। জানা গেছে, আইনি জটিলতার কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে পারছে না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারণ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা প্রধান শিক্ষক পদে নিজেদের পদোন্নতি চেয়ে আদালতে মামলা করে রেখেছেন। 

তথ্য মতে, সহকারী শিক্ষকদের করা রিটের জের ধরে বন্ধ ছিল প্রধান শিক্ষক নিয়োগ। ২০২৩ সালে ওই রিটের নিষ্পত্তির পর বাধা কেটে যায়। তবে আরেক রিটের কারণে আটকে যায় পদোন্নতি। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ নিয়ে সাবেক রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের করা একটি রিটের কারণে পদোন্নতির ওপর স্থগিতাদেশ দেন উচ্চ আদালত।

বগুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রেজোয়ান হোসেন জানান, জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সংকট আছে। সেগুলোতে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে। জেলায় বিভিন্ন সময়ে ৭৫৫টি প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে।

এরমধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ২৪২টি স্কুলে সহকারি শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ৫১৩টি বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে। ওই বিদ্যালয়গুলোতে ২০১৬ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক চেয়ে কয়েক দফা প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই সংকট দূর হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।

মেসেঞ্জার/আলমগীর/তারেক