ছবি : মেসেঞ্জার
ঢাকার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শ্রমিক চম্পা খাতুন মারা গেছেন। রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক।
নিহত চম্পা খাতুন (৩০) রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার আমোদপুর গ্রামের চান্দু মিয়ার মেয়ে। তিনি আশুলিয়ার জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বলেন, বুধবার আশুলিয়ায় শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় আহত শ্রমিক চম্পা খাতুনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে। আরেকজন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক মারুফা। তিনি বলেন, যতটুকু দেখেছি শারীরিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
নিহতের বোন শম্পা বলেন, আমার বোন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেডের সেলাই মেশিন অপারেটরদের কাজ করতো। (২৩ অক্টোবর) চার মাস ধরে তাদের বেতন দেওয়া হত না। এই আন্দোলন করতে গেলে পুলিশ গুলি করে।
এ সময় আমার বোনের পেটে ও বাম হাতে গুলি লাগে। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এসে চিকিৎসা দিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার আজ মৃত্যু হয়।
নিহত চম্পা খাতুনের খালা রাশেদা খাতুন বলেন, বুকে গুলি লাগার কারণে মাইয়াটা আমার বাঁচল না। বাম হাতে গুলি লাইগা মাংস ছিঁড়ে গেছে। চম্পার দেড় বছরের একটা মাইয়া আছে। অকালে মাইয়াটারে এতিম করল। তিনি জানান, তাঁরা চম্পার মরদেহ রংপুরে দাফন করবেন।
বুধবার সকাল ১১টার দিকে আশুলিয়ার নরসিংহপুর-কাশিমপুর সড়কের গোরাট বাংলাবাজার এলাকায় বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া তিন মাসের বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা।
একপর্যায়ে তারা আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান এবং ওই কারখানাগুলো লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক ও পুলিশ সদস্য আহত হন।
আহত শ্রমিকদের মধ্যে আছেন, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেডের প্রিন্টিং অপারেটর মোর্শেদা বেগম (৩৫), সুইং অপারেটর চম্পা খাতুন (৩০), শ্রমিক ববিতা আক্তার এবং সুসুকা গার্মেন্টসের শ্রমিক হালিমা খাতুন। তাদের মধ্যে 'গুলিবিদ্ধ' মোরশেদা ও চম্পাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তাদের সহকর্মীরা।
ঘটনার দিন আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। কোনো ধরনের গুলি ছোড়া হয়নি। দৌড়াদৌড়ির সময় ইটের টুকরোর আঘাতে কেউ আহত হয়ে থাকতে পারেন।
মেসেঞ্জার/নোমান/তারেক