ঢাকা,  রোববার
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

চরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘স্বাতন্ত্র্য মডেল’ তৈরির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ৫ নভেম্বর ২০২৪

চরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘স্বাতন্ত্র্য মডেল’ তৈরির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ছবি : মেসেঞ্জার

প্রান্তিক জনপদে শিশু-কিশোরদের মাঝে শিক্ষার মত মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। এজন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘স্বাতন্ত্র্য মডেল’ সৃষ্টির পরামর্শ দিয়েছেন বক্তারা। সোমবার ৪ নভেম্বর, গাইবান্ধার ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে “দুর্গম চরাঞ্চলে শিক্ষার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ: প্রেক্ষিত ফ্রেন্ডশিপ শিক্ষা কর্মসূচি” নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় এ পরামর্শ দেন তারা।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা অফিসার রোকসানা বেগম জানান, মূল ভূখন্ডের তুলনায় যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চল বেশ দুর্গম। এখানে স্বাস্থ্য-শিক্ষার মত মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা কঠিন। কারণ বছরজুড়ে চরবাসীকে মোকাবিলা করতে হয় বন্যা, নদী ভাঙ্গন, খরা, টর্ণেডো, প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এমন প্রতিবন্ধকতায় শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কঠিন। দুর্গম চরাঞ্চলের জন্য প্রয়োজন বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রমের স্বাতন্ত্র্য মডেল। যার অনেকটাই বাস্তবায়ন করেছে ফ্রেন্ডশিপ।

কর্মশালায় ফ্রেন্ডশিপের শিক্ষা কর্মসূচি সম্পর্কে বর্ণনা দেন জানান, সংস্থার জ্যেষ্ঠ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ইলিয়াস ইফতেখার রাসুল। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মসূচি চালিয়ে আসছে ফ্রেন্ডশিপ। কোমলমতি শিশু-কিশোরদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে, নিজস্ব উদ্ভাবিত “শিক্ষা মডেল” মেনে ৪৪টি প্রাথমিক এবং ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছে দেশের বৃহত্তম সামাজিক সংস্থা ‘ফ্রেন্ডশিপ’। চরাঞ্চলে তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ফ্রেন্ডশিপের শিক্ষা কর্মসূচি। এগুলো হচ্ছে - নদী ভাঙ্গন ও বন্যা থেকে বাঁচতে স্বল্প সময়ে স্থানান্তরযোগ্য বিদ্যালয় স্থাপনা, আইসিটি সুবিধা সম্বলিত ক্লাস রুম এবং চরবাসীর মধ্য থেকে শিক্ষক নির্বাচন। ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়মিত বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলেও জানান তিনি।

দুর্গম চরাঞ্চলে শিক্ষা’র বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করেন, গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট সাদিয়া অফরিন বিজলী, ফ্রেন্ডশিপের সহকারী পরিচালক রেজা আহমেদ, এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার আমিনুর ইসলাম, প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট সাখাওয়াত ফেরদৌস, সিনিয়র প্রোগাম ম্যানেজার নেয়ামত উল্লাহ, সিনিয়র শিক্ষা অফিসার জামিয়া রহমান খান তিসা, প্রমুখ। কর্মশালায় যোগ দেন গাইবান্ধা জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস প্রতিনিধি, সমমনা উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

কর্মশালায় জানানো হয়, দেড়দশক ধরে পরিচালিত ফ্রেন্ডশিপ শিক্ষা মডেলের উল্লেখযোগ্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চরাঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা অব্যাহত রাখা, এলাকাবাসীকে শিক্ষার গুরুত্বের প্রতি সচেতন করা এবং বাল্যবিবাহ রোধ করা। ইতোমধ্যে ফ্রেন্ডশিপ স্কুলগুলো থেকে ৫৩৮০ শিক্ষার্থী পিইসিই (২০১১ - ২০২১), ৫৩০ জন শিক্ষার্থী জেএসসি (২০১৭ - ২০২১) এবং ২০১ জন শিক্ষার্থী এসএসসি (২০২১ - ২০২৪) পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে। পাশাপাশি ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে ২০২১ সালে চালু করা হয় ফ্রেন্ডশিপ ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেল (সিজিসি)। সিজিসির প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত জন উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হয়েছে ১৫৪ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ১৬ জন মেয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (অটড), ২৩ জন ছেলে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ১১৫ জন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজে লেখাপড়া করছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়েছে ১৮২ শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ১৩৯ শিক্ষার্থী আছে সম্মানজনক কর্মক্ষেত্রে।

মেসেঞ্জার/সিয়াম/দিশা