ছবি: মেসেঞ্জার
লুসাই পাহাড়ের বুক চিরে প্রবাহিত কর্ণফুলির তীর ঘেঁষে অবস্থিত প্রচ্যের রানী চট্টগ্রাম শহরতলীর ঐতিহ্যবাহী বোয়ালখালী উপজেলা। শিক্ষা, শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতিতে সম্ভাবনাময় এ উপজেলায় রয়েছে প্রখ্যাত অলী বু-আলী কালান্দর শাহ (রাঃ) আস্তানা, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী মেধস মুনির আশ্রম, কালাচাঁদ ঠাকুর বাড়ি, বৌদ্ধবিহারসহ অসংখ্যা ধর্মীয় তীর্থস্থান। বোয়ালখালীর পশ্চিমে দেশের একমাত্র বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম, পূর্বে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় করলডেঙ্গা পাহাড়, দক্ষিনে বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্যসেন,প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জন্মভূমি বৃহত্তর পটিয়া, উত্তর পূর্বে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং বান্দরবান পার্বত্য অঞ্চল। বোয়ালখালী উপজেলাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম তথা দক্ষিণনাঞ্চলের জনগণের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম বৃটিশ আমলে কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত রেল সেতু। এ সেতু একদিকে যেমন যাতায়াত ব্যবস্থা করেছে সহজতর অপরদিকে এ উপজেলাকে করেছে আরও আকর্ষনীয় ও সৌন্দর্যমন্ডিত। বিশেষ করে তীর্থস্থানের জন্যই এই উপজেলাটি দেশ বিদেশে বেশ পরিচিত একটি উপজেলা।
বোয়ালখালী উপজেলার শেষ ভাগে পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে রয়েছে সে তীর্থস্থানগুলো। উপজেলার করলডেঙ্গা ইউনয়নটির শেষ ভাগ পাহাড়ে অবস্থিত হিন্দু ধর্মালম্বীদের দূর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল মেধস মুনি আশ্রম ও মুসলিম ধর্মালম্বীদের এক মহান সুফিসাধক হযরত বু-আলী কালান্দর শাহ্ এর আস্তানা শরীফ এবং পোপাদিয়া ইউনিয়নে রয়েছে কালাচাঁদ ঠাকুর বাড়িসহ অসংখ্য তীর্থস্থান। এগুলো শুধু তীর্থস্থান নয় বরং এক একটি ইতিহাসও বটে। এসব তীর্থস্থানের জন্যই খ্যাত এই বোয়ালখালী উপজেলা।
শুরুটা করছি মেধস মুনি আশ্রম দিয়ে। দূর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল হলো এই মেধস মুনি আশ্রম। করলডেঙ্গা ইউনিয়নের সন্ন্যাসী পাহাড়ের শীর্ষে হাজার হাজার বছর আগে মেধস মুনি নামের এক মহাযোগী সাধনায় নিমগ্ন হয়েছিলেন। সে স্থান এখন ভক্ত ও পর্যটকদের কাছে মেধস আশ্রম নামে পরিচিত। প্রচলিত আছে, সত্য যুগে এ আশ্রমেই সুরথ নামের রাজ্যহারা এক রাজা আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি মেধস মুনির নির্দেশে আশ্রমে দশভুজা মূর্তি বানিয়ে বসন্তকালে দুর্গাপূজা শুরু করেন। এখান থেকেই বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজার শুরু বলে অনেকে মনে করেন। হারানো প্রকৃতি যেন খুঁজে পাবেন মেধসমুনি আশ্রমে গেলে। পাহাড়ের চূড়ায় চারপাশের নিবিড় গাছপালা। ছায়াঢাকা সুদীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে উঠতে চারপাশে সবুজের বিস্তারটুকু এক নজরে দেখা যায়। ৬৮ একর এলাকা জুড়ে ১৪০টি সিঁড়ির ধাপ পেড়িয়ে প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতায় রয়েছে মেধস আশ্রমের মূল মন্দির। প্রতি বছর মহালয়ার সময় শত শত পুণ্যার্থী, পূজার্থী, ভক্তের সমাগম হয় এ আশ্রমে।
দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হয় এইদিনে। ভক্তদের মধ্যে কেউ কেউ আসেন মনস্কামনা পূর্ণ করতে। জনশ্রুতি আছে আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর আগে মেধস মুনি এখানে সাধনা শুরু করেন। আগেকার দিনে মুনিঋষি আর ভক্তরা এই পাহাড়ের চূড়ায় গাছের লতা বেয়ে ওপরে উঠতেন। সিঁড়ি হয়েছে ২০-২৫ বছর আগে। এখন সহজে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা যায়। হাজার বছর আগের এ আশ্রম নতুন করে খুঁজে পান বেদানন্দ স্বামী নামের এক যোগী পুরুষ। তিনি একটি প্রাচীন পুথিতে মর্ত্যলোকে দেবী দুর্গার প্রথম পূজার স্থান মেধস মুনির আশ্রমের অবস্থান সম্পর্কে ইঙ্গিত পান। পবিত্র এ স্থান খুঁজে পেতে তিনি হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত সমগ্র ভারতবর্ষ ভ্রমণ করেন। বেদানন্দ স্বামী অবশেষে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আসেন। সেই পাহাড়ে যোগসাধনা শুরু করেন। আজ থেকে ১২৪ বছর আগে ১৯০০ সালে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের অগ্নিকোণে চট্টগ্রাম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে বোয়ালখালী থানার পূর্ব দিকে করলডেঙ্গা পাহাড়ের অঞ্চলে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন এই মেধস আশ্রম। ধীরে ধীরে স্থানটি প্রচার হতে থাকে। এক সময় দূর দূরান্ত থেকে দুর্গাপূজার উৎসবে এখানে অনেক পুণ্যার্থীরা আসেন। কালক্রমে এই মেধস আশ্রমের কথা ছড়িয়ে পড়ে দেশ-দেশান্তরে। বিভিন্ন দেশের পূজার্থীরা মনের বাসনা পূর্ণ করতে মেধস আশ্রমে যান।
দেবী চণ্ডীর মন্দিরের পাশে রয়েছে সীতার পুকুর। ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে দেখা যায় দুর্গামূর্তি, কামাখ্যামূর্তি, কালীমূর্তি, শিব, তারা, রামকৃষ্ণ ও গঙ্গামূর্তি। সব কটি মন্দিরেই ভক্তদের ভিড় থাকে সব সময়। চণ্ডীমন্দিরের পাশে একটি গাছের চারপাশে ধূপকাঠি ও মোমবাতি জ্বালান ভক্তরা। সেই গাছের নিচে ১০ থেকে ১২টি রঙিন কচ্ছপ দেখা যায়। চণ্ডীমন্দিরের পাশে আছে অতিথিশালা। দূর থেকে আসা পুণ্যার্থীরা এখানে অবস্থান করতে পারেন। মহালয়ার দিনে উলুধ্বনি, ঢাকের বাদ্য, মানুষের কোলাহল, পুণ্যার্থীদের আরাধনায় যেন সবাই মাতিয়ে থাকে।
মেধস আশ্রমের প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে প্রখ্যাত সুফি সাধক হযরত বু-আলী কালান্দর শাহ্'র আস্তানা শরীফ। অনেকে এটাকে মাজার মনে করলেও মূলত এটি আস্তানা শরীফ হিসেবে পরিচিত। তিনি ভারতে বসবাস করতেন। তিনি বু-আলী কালান্দর নামে পরিচিত হলেও তাঁর আসল নাম শেখ শরফুদ্দিন পানিপথি। তাঁর পিতার নাম হযরত শেখ ফখর উদ্দিন (রহ.)। সে সময়ে তাঁর বাবা একজন মহান পণ্ডিত এবং দরবেশ ছিলেন। তাঁর মাতা বিবি হাফিজা। যিনি মাওলানা সৈয়দ নিয়মতউল্লাহ হামদানি (রহ.) এর কন্যা। হযরত শেখ শরফুদ্দিন বু-আলী (রহ.) ৬০৬ হিজরির ১২০৯ সালে ভারতের পানিপথে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার জন্মস্থান গাঞ্জায়, যা বর্তমান আজারবাইজানে। তাঁর পিতা হযরত শেখ ফখরউদ্দিন (রহ.) ৬০০ হিজরিতে আজারবাইজান থেকে ভারতে চলে আসেন এবং পানিপথে বসতি স্থাপন করেন। হযরত শেখ শরফুদ্দিন (রহ.) ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ.) এর বংশধর ছিলেন। শেখ শরফুদ্দিন আসল নাম হলেও বু আলী ছিলেন তাঁর উপাধী। বিভিন্ন তথ্যমতে জানা যায় হযরত মুহাম্মদ (দঃ) স্বপ্নে তার ইচ্ছার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি হযরত আলী হতে চাই। মহাম্মদ (দঃ) বলেন সেটি অনেক আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে। এরপর তিনি আলীর সুবাসের আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয় এবং বু আলী উপাধী দেন হযরত মুহাম্মদ (দঃ)। বু আলী শব্দের অর্থ হলো আলীর সুবাস। তাঁর শরীর থেকে হযরত আলীর ঘ্রাণ পাওয়া যেতো বলে জনশ্রুতি আছে। তবে তার মাজার ভারতে হলেও করলডেঙ্গা পাহাড়ে তার আস্তানার সন্ধান মিলেছে। তার আস্তানা কখন কিভাবে সনাক্ত হয়েছে তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে লোকমুখে শুনা যায় আহলা দরবার শরীফের সুফিসাধক হযরত আসাদ আলী (রহঃ) তার আস্তানা সনাক্ত করেছিলেন।
এরপর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে তার আস্তানায় জেয়ারতের উদ্দেশ্যে ভক্তরা আসতে থাকে। ১৯০০ সাল থেকে এ আস্তানাকে ঘিরে প্রতিবছর ২ ও ৫ ফাল্গুন ওরশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ আস্তানাকে ঘিরে রয়েছে এক অলৌকিক ঘটনা। যা প্রতি বছর দৃশ্যমান হয়। ওরশের দিন র্সূয ডুবার সময় গরু-মহিষ জবাই করা হয়। আর এ সময় আস্তানার চারপাশের গাছপালার উপর দিয়ে শির শির করে ধোঁয়া বের হয়। এসব ধোঁয়াকে অনেকে বলেন অলৌকিক ধোঁয়া, আবার অনেকে এক ধরনের পোকা বলে অভিহিত করেন। তবে যাই হোক না কেন সেটাকে অলৌকিকই ধরে নেন স্থানীয়রা। এই অলোকিক দৃশ্য দেখার জন্য ওরশের সময় বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার-হাজার নর-নারী ও ভক্তরা জড়ো হয় আস্তানা প্রাঙ্গণে।
লোকমুখে প্রচার আছে বোয়ালখালীর নামকরণ করা হয়েছে হযরত বু আলী কালান্দর (রহঃ) এর নামানুসারে। বু আলী থেকেই বোয়ালখালী বলে নামকরণ হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে।
বু-আলী কালান্দর শাহ্'র আস্তানার পশ্চিমে কয়েক কিলোমিটার দূরে পোপাদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত হিন্দু ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান কালাচাঁদ ঠাকুর বাড়ি। প্রায় তিনশত বছর আগের কথা। চট্টগ্রাম জেলার অর্ন্তগত হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ এলাকার (বর্তমান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এর অন্তর্ভুক্ত কুলগাঁও) এর প্রান্তভাগে কালাচাঁদ নামে জনৈক বৈষ্ণব বাস করতেন। তাাঁর বাড়ীর সন্নিকটে একটি প্রকান্ড দীঘি ছিল। ভক্ত কালাচাঁদের প্রতি একদিন স্বপ্নে আদেশ হয়-“তুমি যদি দীঘির ধারে নিম্ববৃক্ষের নিচে প্রত্যুষে গিয়ে কীর্ত্তন করতে থাক, তাহলে দেখবে স্বয়ং লক্ষীনারায়ণ তোমার নিকট আসার জন্য ঐ দীঘির জলে ভেসে উঠবে। তুমি তখন তাঁদের লিও। স্বপ্নাদেশ বিশ্বাস করে কালাচাঁদ অতি প্রত্যুষে দিঘীর ধারে সেই নিম্ববৃক্ষের নীচে গিয়ে কীর্তন আরম্ভ করতেই দেখতে পেলো, সত্যিই দীঘির জলে দুই মূর্তি ভেসে উঠেছে। দীঘির চারপাশে পদ্মবন ছিল।
ভক্ত কালাচাঁদ সেই কন্টকবন অতিক্রম করে মূর্তির কাছে গিয়ে বাম হাতে লক্ষী ও ডান হাতে নারায়ণের মূর্তি স্পর্শমাত্র সুবর্ণময়ী লক্ষীমূর্তি জলে ডুবে গেলো। অতঃপর বৈষ্ণব দুই হস্তে চতুর্ভুজ নারায়ণ মূর্তি ধারণপূর্বক দীঘির পাড়ে এনে নিম্ববৃক্ষের নিচে রাখলেন এবং লক্ষীমূর্তি
আবার ভেসে উঠবেন এই আশায় কীর্ত্তন করতে লাগলেন। বহুক্ষণ কীর্তনের পরও যখন মূর্তি ভেসে উঠলেন না, তখন “মা মা” বলে ভক্ত বৈষ্ণব দীঘির জলে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হলে, দৈববাণী হল-“তুমি বাম হাততে প্রথম মাতৃমূর্তি স্পর্শ করলে বলে মা অন্তর্হিত হলেন । তুমি এখন আমাকে ঘরে নিয়ে যাও; বৃথা অনুশোচনা করিও না।” তখন বৈষ্ণব কালাচাঁদ নিজেকে বহু ধিক্কার দিয়ে প্রস্তর নির্মিত বিষ্ণুমূর্তি নিজগৃহে নিয়ে গেলেন। বৈষ্ণব কালাচাঁদ বিষ্ণুমূর্তি গৃহে এনে দিনের পর দিন কীর্তনানন্দে বাসুদেব নারায়ণের পূজা করতে লাগলেন। এমন সময় হাওলা (বর্তমান বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রাম) নিবাসী পরম ভক্ত দৈবজ্ঞ ব্রাহ্মণ রামহরি আচার্য্য এর প্রতি স্বপ্নযোগে আদেশ হল “আমাকে তোমার নিকট এনে রাখ এবং ভক্ত কালাচাঁদ এর নামে নামকরণ করে আমার পূজা কর।” ভক্ত কালাচাঁদের প্রতিও তদানুযায়ী স্বপ্নাদেশ হলে কালাচাঁদ স্বয়ং রামহরি আচার্য্যের গৃহে গিয়ে বিষ্ণুমূর্তি স্থাপন পূর্বক সপ্তাহকালের মধ্যে বৈকুণ্ঠ লাভ করলেন ।
কথিত আছে কালাচাঁদ আর রামহরি আচার্য্য সম্পর্কে গুরুশিষ্য । কে গুরু আর কে শিষ্য তা এখনো জানা জায়নি। অতঃপর তখন থেকে বিষ্ণুমূর্তি “শ্রী শ্রী কালাচাঁদ ঠাকুর” নামে অভিহিত হয়ে নিত্য পূজা পাচ্ছে ও মন্দিরটি “শ্রী শ্রী কালাচাঁদ ঠাকুরবাড়ী” নামে পরিচিতি পায়।
মন্দিরের দক্ষিণে (পিছনে) যেখানে বর্তমানে শিবমন্দির ও দুর্গা মন্দির অবস্থিত রয়েছে। সেখানেই প্রথম শ্রী শ্রী ঠাকুরের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। তখন পাকা মন্দির ছিল না। ছিল না ঘেরা বেড়া। বাঁশের ভাঙ্গা ঘরে ঠাকুরের পূজা হতো। এখানেই ঘটে অলৌকিক ঘটনা। ব্রাহ্মণ, ঠাকুরের পূজা শেষ করে সন্ধ্যায় ঠাকুরকে শয্যা দিয়ে দরজা বন্ধ করে যথারীতি নিজগৃহে চলে যান। সকালে ব্রাহ্মণ এসে দরজা খুলে দেখেন দক্ষিণমুখী বিষ্ণুমূর্তি উত্তরমুখী হয়ে আছে। ব্রাহ্মণ মনে করেন কেউ হয়তো দুষ্টুমী করে এ-কাজ করেছে। আবার বিষ্ণুমূর্তিকে দক্ষিণমুখী করে পূজা সেরে সন্ধ্যায় সন্ধ্যারতি দিয়ে ভাল করে দরজা লাগিয়ে ব্রাহ্মণ নিজগৃহে চলে যান। পরদিন সকালে এসে দেখেন একই অবস্থা। ঠাকুর উত্তরমুখী হয়ে গেছে। আবার দক্ষিণমুখী করে ব্রাহ্মণ ঠাকুরের পূজা করলেন। ৩য় দিনও বিগ্রহ ফিরে যায় উত্তর দিকে। ঠাকুরের এমন অবস্থানের কারণে রামহরি ধ্যানমগ্ন হলেন। তিনি অনুভব করলেন,'উত্তরমুখি বিষ্ণু তাঁরই পরম ভক্ত ফতেয়াবাদ গ্রামের কালাচাঁদের দিকে চেয়ে আছেন।' পূজক রামহরি এখন প্রয়াত। তাঁর অর্চিত বিগ্রহ এখনো উত্তরমুখী হয়ে আছেন। তবে জরাজীর্ণ সেই গৃহটি আর নেই। এই বিগ্রহকে ঘিরে ৫ একরেরও বেশি জমি জুড়ে বোয়ালখালীর পোপাদিয়ায় গড়ে উঠেছে কালাচাঁদ ঠাকুর বাড়ি। বর্তমান মূল মন্দির নির্মিত হয়েছে ৬৫ বছর পূর্বে। এরপর অন্যান্য স্থাপনাগুলো গড়ে ওঠে গত ৩৪ বছরের মধ্যে।
বর্তমানে যেখানে শিব মন্দির রয়েছে, সেদিকেই ছিল কালাচাঁদ ঠাকুরের বিগ্রহ। কিন্তু আপনা-আপনি দিক পরিবর্তনে এখন উত্তরমুখী হয়ে ঠাকুর কালাচাঁদ পূজা পাচ্ছেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধেও মন্দিরটি অক্ষত ছিল। পাঞ্জাবী সৈন্যরা একবার মন্দিরে প্রবেশ করে লোহার সিন্দুক ভেঙ্গে লুটপাট চালায়। এরপর বিষ্ণুমূর্তিটিকে নির্দিষ্ট স্থান থেকে ফেলে দেয়। এতে বিগ্রহের কিছু অংশে ফাটল সৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে সেই ফাটল আপনা থেকেই জোড়া লেগে যায়। কিন্তু যেসব সৈন্য মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করেছিল, তারা তৎকালীন গোমদণ্ডী ক্যাম্পে যাবার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নেয়া হলে গণহারে মারা যায় আক্রমনকারী সব সৈন্য। এ ঘটনার পর আর কোন সৈন্য মন্দিরে আসার সাহস পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসেও ঠাকুরের নিত্য পূজা চলেছে, এখনও চলছে।
তীর্থস্থান হিসেবে বোয়ালখালী উপজেলা খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও বেশ পরিচিতি লাভ করেন। তীর্থস্থানগুলো
হাজার বছর আগের হলেও বর্তমানে চোখে পড়ার মত কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। উন্নয়ন আর সংস্কার করা হলে ধর্মীয় আরাধনার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দর্শনার্থীরা আসবে বলে মনে করছেন বোয়ালখালীবাসী।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১০ সালের ২৯ আগস্ট বোয়ালখালী থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালে এ থানাকে বোয়ালখালী উপজেলায় উত্তীর্ণ করা হলে বোয়ালখালীকে উপজেলার সদর করা হয়। এর আগে এ অঞ্চল পটিয়া মহকুমার অংশ ছিল। পরবর্তীতে ২০১২ সালের অক্টোবরে বোয়ালখালী পৌরসভা গঠিত হলে এ উপজেলা শহর পৌরশহরের মর্যাদা লাভ করে।
মেসেঞ্জার/নাঈম/ফামিমা/এসকে