ছবি : মেসেঞ্জার
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারি ওষুধ সাপ্লাই না থাকার অজুহাতে বাইরে থেকে কিনে আনার জন্য স্লিপ লিখে দেয়া হলেও ওয়ার্ডের ভেতরেই সরকারি ওষুধ বিক্রি নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। এ ঘটনায় রোগির স্বজনরা ২জনকে আটক করলেও আনসারদের বিরুদ্ধে তাদের ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় ৩নং পুরুষ ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটেছে। যাদেরকে আটকের পর ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তারা হলেন, হাসপাতালের র্কমচারী আনজুআরা বেগমের পুত্র মমিনুর রহমান রিপন। তিনি হাসপাতালের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছিলেন। অপরজন হলেন, বেসরকারী সেবা ডায়াগোনোস্টিক সেন্টারের কমিশন এজেন্ট আরমান আল।
ভুক্তভোগি কারমাইকেল কলেজের ছাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘আমি বুধবার সন্ধায় আমার মামা তোফাজ্জল হোসেনকে ঠাঁকুরগাও থেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ৩নং ওয়ার্ডে ভর্তি করাই। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আমাকে হাসপাতালে মজুদ নাই জানিয়ে সাদা কাগজে ওষুধের প্রেসক্রিপিশন লিখে তা বাইরে থেকে আনতে বলেন।
আমি বাইরে ওষুধ কিনতে আনার জন্য বেড থেকে উঠা মাত্রই সেখানে থাকা মমিনুর রহমান রিপন ও আরমান আলী আমার কাছ থেকে সাদাকাগজের স্লিপ নেন এবং বলেন তার কাছে সরকারি ওষুধ আছে। অর্ধেক কমিশনে তিনি তা বিক্রি করতে চান আমার কাছে। আমি তার কাছে দামদর করে ওষুধগুলো ক্রয় করি।
এরমধ্যে আমি আমার বন্ধুদের বিষয়টি মাসেজে জানালে তারা হাসপাতালে আসেন এবং তাদের আটক করেন। সরকারি ওষুধ হাসপাতালে নাই, কিন্তু তারা কোথায় পেলেন জানতে চাইলে তারা জানায়, হাসপাতাল ঝাড়ু দেয়ার সময় তারা পেয়েছেন।’
সেখানে উপস্থিত সিহাব ইসলাম জানান, ‘আমরা তাদের দুইজনকে আটক করে সেখানে থাকা আনছার সদস্যদের কাছে সোপর্দ করি। কিন্তু আনসার সদস্যরা তাদের আটক করে কর্তৃপক্ষের কাছে না দিয়ে উল্টো ছেড়ে দেন।
তিনি আরও জানান, আমরা আটক করায় তারা আমাদের তেড়ে আসেন। উল্টো আমাদের ভিডিও করে তা ছাত্র সমন্বয়কদের কাছে পাঠান এবং ঘটনা মিমাংসার জন্য চাপ দেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগিদের স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে বাইরে থেকে ওষুধ আনতে। আর ওয়ার্ডের ভেতরেই সেই সরকারি ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। এরসাথে পুরো হাসপাতালের স্টাফরা জড়িত বলে দাবি তার।’
তবে আটকদের ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঘটনার সময় থাকা ২ আনসার সদস্য। তাদের একজন বাবুল হোসেন জানান, আমরা হাসপাতালে নতুন এসেছি। ভ্রাম্যমান ডিউটিতে ছিলাম। কয়েকজনের কথাকাটাকাটি দেখেই সেখানে যাই। এসময় তারা কথাকাটাকাটি ও ভিডিও করছিলেন। আমরা তাদের জিজ্ঞেস করতে করতেই তারা বের হয়ে যায়। আমরা পিছু পিছু গিয়েও তাদের আটক করতে পারিনি।
ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স মোস্তফা আবিদ জানান, ‘এ ধরণের ঘটনা সচরাচর ঘটে না। আমরা ওষুধপত্র বিশেষ করে এন্টিবায়েটিক সবগুলো সরকারিভাবেই দিয়ে থাকি। কিন্তু রিসেন্ট সাপ্লাই না থাকায় যারা গরীব রোগি তারা হয়তো অল্প টাকায় ওষুধ তাদের কাছ থেকে নিয়ে থাকে। কিন্তু সরকারি ওষুধ কিভাবে ওয়ার্ডেই বিক্রি হয় এই প্রশ্নের কোন উত্তর দেন নি তিনি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আ. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিকেল পাঁচটার সময় অফিস শেষ করে চলে এসেছি। এ বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। পরিচালক স্যার জয়েন করেছেন কালকে এসে উনার সাথে কথা বলেন।
হাসপাতালটির রোগি ও স্বজনরা জানান, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে হাসপাতালের সরকারি ওষুধ বিক্রির। রোগিদের সরকারি ওষুধ সাপ্লাই নাই বললেও সেখানে তাদের নিযুক্ত দালালরা ওপেনে ওয়ার্ডের ভেতরেই সরকারি ওষুধ বিক্রি করছেন। শুধু তাই নয়, এরা খুবই শক্তিশালী। যারা এর প্রতিবাদ করছেন। তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে তারা ছাত্র সমন্বয়কদেরও ব্যবহার করছেন।
মেসেঞ্জার/মান্নান/তারেক