ছবি : মেসেঞ্জার
চলতি বছর ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে দফায় দফায় সিরাজগঞ্জের চলনবিলে পানি বৃদ্ধি পায়। তবে সময় গড়িয়ে গেলেও বিলের পানি এখনও নামতে পারে নাই। একারণে বিলাঞ্চলের প্রায় ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ১০ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে রয়েছে। এসব জমিতে রবিশস্য চাষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এখন রবিশস্যের ভরা মৌসুম। এই মৌসুমে সরিষা, রসুন, পেঁয়াজ, ধনিয়া, কালোজিরাসহ মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ করা হয়। এছাড়াও শীতকালিন সবজি, খেসারি, চিনাবাদাম, গম-ভুট্টাও ও আলু চাষ হয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দ্রুত বিলের পানি জমি থেকে না নামলে সরিষাসহ রবিশস্য আবাদ ব্যাহত হতে পারে।
জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত সিরাজগঞ্জের চলনবিলে সবচেয়ে বেশি সরিষার চাষ হয়। জেলার উল্লাপাড়া তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও শাহজাদপুরের প্রায় ৫০টি বিলের জমিতে সরিষা আবাদ হয়। গত মৌসুমে এই জেলায় শুধু সরিষা আবাদ হয়েছিল ৮৫ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে। এ বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯০ হাজার হেক্টর এবং অন্য রবিশস্য চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৬ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, চলনবিলের উর্বর মাটিতে রবিশস্য আবাদ ভালো হয়। প্রতি বছরই সরিষার, রসুন, পেঁয়াজ ও শষার বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। মূলত নভেম্বরের শুরু থেকেই কৃষকরা রবিশস্য আবাদ শুরু করেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে বিলের ফসলি জমি পানির নিচে থাকায় রবিশস্য আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা। সময়ে-অসময়ে বিলে পানি ঢুকে পড়ায় নামতে দেরি হওয়ায় চলনবিলের কৃষকরা এই চাষাবাদে শঙ্কায় পড়েছেন।
তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের কৃষক কুসা শেখ, সুজাদ আলী, কুড়ার তালুকদার জানান, চলনবিল ঘিরে ছোট ছোট অসংখ্য নদী, খাল ও বিল ছিল। নদীর মধ্যে বড়াল, আত্রাই, গুমানী, ইছামতি, করতোয়া, গোহালা, ভদ্রাবতী, বিলসূর্য, গাড়াদহ, কাকন-কানেশ্বরী, সরস্বতী, মুক্তাহার, নাগর, শালিকা, তুলসীগঙ্গা, বারণী, ফুলজোড় নদী বয়ে গেছে। বর্ষায় এসব নদীর পানি উপচে বিলে পানি ঢুকে। আবার এসব নদী হয়েই বিলের পানি গড়িয়ে পড়ে যমুনায়। কিন্তু নদীতে অবৈধ মাছ শিকারের জন্য পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করা, যত্রতত্র পুকুর খনন, নদী দখল, কচুরিপানা জমে থাকাসহ নানা কারণে বিলের পানি ধীরগতিতে নামছে। ফলে চলতি মৌসুম শুরু হলেও এসব বিলের বেশিরভাগই এখানো পানির নিচে রয়েছে। একারনে রবি শস্য আবাদের চাষ শুরু করতে পারছে না এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (উপ-পরিচালক) আ: জা: মু: আহসান শহীদ সরকার জানান, এখন রবিশস্য চাষের ভরা মৌসুম। তবে রবি মৌসুম শুরু হলেও বিলের জমি জলমগ্ন থাকায় চাষাবাদ শুরু করতে পারেনি কৃষকেরা। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পানি না নামলে রবিশস্য আবাদ নিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন কৃষক।
মেসেঞ্জার/দিশা