ঢাকা,  রোববার
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজে ২২পদে নিয়োগ জানেন না কর্তৃপক্ষ

নীলফামারী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ৯ নভেম্বর ২০২৪

সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজে ২২পদে নিয়োগ জানেন না কর্তৃপক্ষ

ছবি : মেসেঞ্জার

প্রশাসনকে না জানিয়েই ২২ জন শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজে। নিয়োগ নিয়ে মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্যকে আড়াল করতেই এই অনিয়ম করেছেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

অপকর্ম জায়েজ করতে এবং পরীক্ষার স্বচ্ছতা দেখাতে শুধুমাত্র ডিজি প্রতিনিধি হিসেবে একজন সরকারি কলেজ অধ্যক্ষকে উপস্থিত রেখে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি। 

কলেজ সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে ২২টি পদে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে নতুন পরিচালনা কমিটি। এর মধ্যে কলেজ শাখায় প্রভাষক পদে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ১ জন, আইসিটি বিষয়ে ১ জন ও কৃষি শিক্ষা বিষয়ে ১ জন। আর স্কুল শাখায় বাংলা, গণিত, ভৌত বিজ্ঞান (পদার্থ ও রসায়ন), আইসিটি, ইংরেজি ও সাধারণ শিক্ষক পদে ৩ জন করে এবং শারীরিক শিক্ষক পদে ১ জন।

এসব পদের বিপরীতে মোট ২৪৭ জন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) ও শনিবার (৯ নভেম্বর) স্কুল ক্যাম্পাসে এই পরীক্ষা নেয়া হয়। এই দুইদিন পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান। তার সহযোগী হিসেবে একই প্রতিষ্ঠানের আরও ৮ জন শিক্ষক ছিলেন।

কিন্তু এই পরীক্ষা বা নিয়োগ বিষয়ে ডিসির প্রতিনিধি তথা স্থানীয় প্রশাসনের কোন প্রতিনিধি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা অফিসের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। অভিযোগ রয়েছে এই নিয়োগে মোটা অংকের বাণিজ্য করা হয়েছে। তাই স্থানীয় কোন কর্তৃপক্ষকেই বিষয়টি জানানো হয়নি।

আরও অভিযোগ রয়েছে যে, ২২টি পদে প্রায় ৫ শতাধিক প্রার্থী আবেদন করেছিল। প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে ৮শ' টাকা করে ব্যাংক ড্রাফট নেয়া হয়েছে। অথচ পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ২৪৭ জন। এতেও হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। আর সম্ভাব্য নিয়োগপ্রাপ্তদের সাথেও মোটা অংকের টাকা নেয়ার চুক্তি হয়েছে।

এবিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, লায়ন্স স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ ও এ সংক্রান্ত পরীক্ষা নেয়া বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমাদের অগোচরেই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। তবে নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়ে থাকলে তা সুনির্দিষ্ট প্রমান পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একইভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, জানিনা কিভাবে লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে অবগত না করেই এত বড় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। নিয়োগ বাণিজ্য বা পরীক্ষা গ্রহণ বিষয়ে আইনের ব্যত্যয় ঘটে থাকলে তা খতিয়ে দেখে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

পরীক্ষক নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাকে নিমন্ত্রণ করায় এসেছি এবং পরীক্ষা নিচ্ছি। পরীক্ষায় কোন প্রকার অসদুপায় অবলম্বন করা হয়নি। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে থাকলে সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। এটি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে ডিজি, ডিসি প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার বাধ্য বাধকতা বিষয়ে আমার জানা নাই।

উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি সফিয়ার রহমান শুধু কতজন পরীক্ষা দিচ্ছেন এই তথ্য দেন। কিন্তু মোট আবেদনকারীর সংখ্যা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আর নিয়োগ পরীক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগের কেউ নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের প্রয়োজন নাই। কারণ এখানে এমপিওভুক্ত কোন শিক্ষক নেয়া হচ্ছেনা।

তিনি আরও বলেন, আমরা ইচ্ছে করলে কাউকেই না জানিয়ে নিজেদের পছন্দমত লোককে নিয়োগ দিতে পারি। তবুও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষসহ ৮ জন শিক্ষককে দিয়ে পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

এসময় নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি অশোভন আচরণ করে বলেন, আপনাদের কি করার আছে করেন। আমি দেখে নিবো। এতে সংবাদ কর্মীরা প্রতিবাদ জানালে তিনি মেনন নামে কমিটির একজন সদস্যের মাধ্যমে উপঢৌকন দিয়ে ম্যানেজ করার অপচেষ্টা চালান।

মেসেঞ্জার/রিপন/তারেক