ছবি: এম ফয়সাল এলাহী
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “জনপ্রতিনিধিত্বহীন কোন সরকার জনগণের কথা বুঝবে না, জনগণের কষ্ট বুঝবে না। কারণ বুঝতে হলে জনগণের কাছ যেতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে হবে।”
শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় বিপ্লব এবং সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রা ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশ গণতন্ত্রের অবস্থায় ফিরিয়ে আসুক। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশবাসী তাদের ভোটে যাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, সংসদে যাবে, সরকারে যাবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। জবাবদিহিতাহীন কোন সরকার বাংলাদেশের কল্যাণ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, “আন্দোলনে নিজেদের জীবন দিতে হয়েছে, আমাদের নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে, চাকরি হারাতে হয়েছে, ব্যবসা হারাতে হয়েছে, পঙ্গু হতে হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে। তোমরা কয়জন? সব হিসাব করলে কিন্তু অসুবিধা আছে! আমরা কিন্তু হিসাব করতে চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছিলাম, সবাই মিলে শেখ হাসিনাকে বিদায় করে দিতে।”
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “তারেক রহমানের নেতৃত্বে সমস্ত দেশ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। সেই পটভূমি যদি সৃষ্টি না হতো, সেই অবস্থা যদি সৃষ্টি না হতো তাহলে শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর সুযোগ ছিল না। এখন অনেক গল্প শুনছি, শেখ হাসিনার পতনের গল্পের শেষ নেই। প্রত্যেকদিন নতুন নতুন গল্প শুনছি। ওরা নাকি এটা করেছে, সেটা করেছে। ১৫ বছর যখন আমরা রাস্তায় আন্দোলন করেছি, জীবন দিয়েছি, গুম-হত্যার শিকার হয়েছি, জেলে গিয়েছি বারবার; তখন তো তোমাদের এসব গল্প দেখিনি। তোমাদের ছিল কেউ, আমাদের সঙ্গে তো তখন কেউ আসেনি।”
তিনি বলেন, “এখন আবার আরেক বয়ান। এই বয়ানের অর্থ হচ্ছে- বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে তা এ বয়ানের মধ্যে নেই। বাংলাদেশের জনগণ কবে ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করবে সেই বয়ান নেই। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হবে সেই বয়ান নেই। বয়ান হচ্ছে, সংস্কারের বয়ান। যে কয়েকটি সংস্কার, জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে হবে সেগুলো দ্রুত করে ফেলুন। এরপর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান এবং যে সংস্কারে ঐক্যমত হবে না সেটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিবে আগামী দিনে। নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ হবে তারা সিদ্ধান্ত নেবে, সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। এর বাইরে অনির্বাচিত কারো কোনো অধিকার নেই। জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু হবে সহসা সমাধান করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জাতি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি দেখতে চায়। তাদের নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। এ কারণেই ঐক্য ঘটানো হয়েছে।”
“শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দিয়ে, বিএনপির সাত লাখের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন, গুম, হত্যা, জেলহত্যা, পুলিশের হেফাজতে হত্যা; এর মাধ্যমে সেদিন বাংলাদেশে আবারো একটি নিরাপত্তাহীন জনগণের জন্য পরাধীন জাতি সৃষ্টি করেছিল। সেখানে আবারো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রুখে দাঁড়িয়েছিল। রুখে দাঁড়ানোর কারণে তাকে জেলে যেতে হয়েছে, জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে, চিকিৎসা না দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল,” বলেন আমীর খসরু।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আমীর খসরু বলেন, “রাজনীতি বদলে গেছে, ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকতে হবে। আগের রাজনীতি এখন নেই। যারা সুশৃঙ্খলভাবে রাজনীতি করতে পারবে তাদের ভবিষ্যৎ আছে। উচ্ছৃঙ্খল, চাঁদাবাজ, দখলদার, ভূমিদস্যুর জায়গা বিএনপিতে হবে না।”
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিকেল ৪টায় বের করা হয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি কাজির দেউড়ি, লাভ লেন, আমতল হয়ে নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
মেসেঞ্জার/এসকে/ইএইচএম