ঢাকা,  বুধবার
১৩ নভেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

রাজশাহীতে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের চেয়ার দখলের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ১৮:২০, ১০ নভেম্বর ২০২৪

রাজশাহীতে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের চেয়ার দখলের অভিযোগ

ছবি: মেসেঞ্জার

রাজশাহীর কাটাখালীর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ার দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির এক বহিষ্কৃত নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত সিরাজুল হক একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। গত এপ্রিলে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কাটাখালী পৌরসভার উপনির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, কলেজের ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় শিক্ষার্থীরা সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল। এবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ৯ আগস্ট তিনি কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনকে কার্যালয়ে ঢুকতে দেননি। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা চালিয়েছেন অধ্যক্ষের বাড়িতে। ফলে অধ্যক্ষ ভয়ে কলেজে যেতে পারছেন না। কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া এবং বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগে জয়নাল আবেদীন থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

ফলে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন কলেজের একজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু পরদিনই অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করেছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা সিরাজুল হক। এরপর থেকে কলেজের অধ্যক্ষ পদ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে গত ২৮ অক্টোবর ইউএনও সোহরাব হোসেন জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।

এর আগে অধ্যক্ষকে কলেজে ঢুকতে না দেওয়া এবং তাঁর বাড়িতে হামলার ঘটনায় ২০ অক্টোবর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনারকে চিঠি দেন। তবে এখনো কলেজে যেতে পারেননি জয়নাল আবেদীন। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে পারেননি বদরুল আমিন সরকার।

জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিরাজুল হক গত ৯ আগস্ট বহিরাগতদের সহায়তায় তাকে কলেজে ঢুকতে বাধা দেন। তার বাড়িতে হামলা চালান। কলেজে গেলে তাকে পিটিয়ে হত্যার ভয় দেখানো হয়েছে। ফলে তিনি কলেজে যেতে পারেছেন না। এখন শুনছি সিরাজুল হক অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করেছেন।

শিক্ষকরা জানান, সিরাজুল হকের অধ্যক্ষ হওয়ার খায়েশ এবারই প্রথম নয়। অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে অধ্যক্ষকে দীর্ঘদিন ধরেই নানাভাবে হয়রানি করছিলেন সিরাজুল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে চেয়ার দখল করেন তিনি। সিরাজুলের বিরুদ্ধে অন্তত ১০ জন ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বলেও দাবি করেন কলেজের শিক্ষকরা।

তবে অধ্যক্ষের চেয়ার দখলের অভিযোগের বিষয়ে সিরাজুল হক বলেন, ‘এলাকার লোকজন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাকে এই সম্মান দিয়েছে। তাদের অনুমতিতেই তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েছেন। অধ্যক্ষ পালিয়ে থাকলে তো কলেজ চলবে না। তাই স্বেচ্ছায় এই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তিনি উল্টো দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল। তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।

সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষকে কলেজে ঢুকতে না দেওয়া এবং অধ্যক্ষের চেয়ার দখলের চেয়ার দখলের বিষয়ে বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহসম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি কখনো অবৈধ ও অনৈতিক কাজ সাপোর্ট করে না। কেন্দ্রীয়ভাবেও সতর্ক করা হয়েছে, দলের নাম ব্যবহার করে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ করার সুযোগ নেই। এসব কারণে কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, ‘অধ্যক্ষের অনুপস্থিতে আমরা একজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে চাই।

তখন সিনিয়র পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করা হলে প্রথম তিনজন অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সিরাজুল হক সিনিয়ল শিক্ষক হলেও তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নসহ ছয়টি মামলা রয়েছে। তাই তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে পরদিনই সিরাজুল নিজেই অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেছেন। এ বিষয়ে করণীয় জানতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছি। জেলা প্রশাসক বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানান তিনি।’ 

মেসেঞ্জার/ফামিমা