ছবি: মেসেঞ্জার
গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) বাড়াবো না। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর ফলে ট্যাক্স দেওয়া হয়নি। সোমবারের সভায় সব আবেদন বাতিল করে আগের হোল্ডিং ট্যাক্সে ফিরে যাব। এছাড়া নগরবাসীকে সেবা দিতে নিয়োগ দেওয়া পরিচ্ছন্ন কর্মীরা যদি কাজ না করে তাদের বাতিল করে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে। মশক নিধনের যে ওষুধ ও স্প্রে আছে সেটা কার্যকর কি না পরীক্ষা করা হবে। চট্টগ্রাম নগরকে হেলদি সিটিতে রুপান্তর করতে সকল কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরের গোল পাহাড় মোড়ে আমিরবাগ আবাসিক কল্যাণ সমিতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র শাহাদাত বলেন, আমি কোনো হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াবো না। তবে যারা হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছেন না, সিটি করপোরেশনকে সাবলম্বী করতে চাচ্ছেন না, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো। আপনারা দিয়ে দেবেন। আমি প্রতিটি বিভাগের সঙ্গে ইতিমধ্যে বসেছি। রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে বসে আমি দেখেছি প্রচুর হোল্ডিং ট্যাক্স বাকি। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর ফলে অনেক আবেদন এসেছিল। সেগুলো মিটমাট না হওয়া পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স দেওয়া হয়নি। আমি একটি সভা সোমবারে দিয়েছি। সব আবেদন আমি বাতিল করে আগের হোল্ডিং ট্যাক্সে ফিরে যাব। আপনার হোল্ডিং ট্যাক্স দিলেই আমি সিটি করপোরেশনকে সাবলম্বী করতে পারব। সততা, দেশপ্রেম ও নিষ্ঠা যদি থাকে তাহলে এটা অসম্ভব কিছু নয়। প্রথম দিন থেকেই আমি ৪৫০ কোটি টাকা দেনা নিয়ে শুরু করেছি। আমি সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে এ দেনা শূন্যতে নিয়ে আসব।
চট্টগ্রামের মানুষকে ময়লামুক্ত শহর উপহার দেওয়ার কথা জানিয়ে মেয়র শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রামকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেখানে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ, নৈরাজ্য ও দুর্নীতি থাকবে না। একটি সুন্দর ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটি চট্টগ্রাম বাসীকে উপহার দিতে চাই। ক্লিন মানে শুধু ময়লা পরিষ্কার করবো তা না, মানুষের মনও পরিষ্কার করব।
রাজশাহী পুরো শহর গ্রিন ও ক্লিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি রাজশাহী গিয়েছি। সেই শহরের মানুষকে বুঝালে তারা বুঝে। ময়লা ফেলতে বারণ করলে তারা ফেলে না। আমাদের চট্টগ্রামের মানুষ অতিথি পরায়ন। বড় হৃদয়ের অধিকারী। তাদের বুঝালে তারাও অবশ্যই বুঝবে। এজন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে ডেঙ্গু জনসচেতনতার পাশাপাশি নালা নর্দমায় ময়লা না ফেলতে অনুরোধ করবো। জনগন সচেতন না হলে যতই নালা পরিষ্কার করি বা জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নেই না কেন কিছুতেই কিছু হবে না।
সেবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগের কাউন্সিলররা প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ৫০ থেকে ৬০ জন লোক নিয়োগ দিয়ে রেখেছে, যারা বিভিন্ন কাজ দেখে। এলাকায় এলাকায় গিয়ে তদারকি করবো জনগণ সেবা পাচ্ছে কি না। নালা পরিষ্কার এবং মশক নিধন হচ্ছে কি না। নগরবাসীর দায়িত্ব, নিয়োগ করা ওসব লোকেরা ঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা আমাকে জানানো। যদি কেউ কাজে গাফিলতি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আমি কোনো ছাড় দেব না। আমি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাব। এ ছেলেগুলোর চেহেরা দেখব । ৪১ ওয়ার্ডে দুই হাজারের অধিক পরিচ্ছন্নকর্মী আছে, যারা কাজ করার নামে টাকা নিচ্ছে। কাজ না করলে নতুন নিয়োগ দেব। অনেকেই চাকরির জন্য ঘুরাফেরা করছে। চাকরি নেই। কিন্তু চাকরি পেয়েও যারা জনগণের সেবা করছে না তাদেরকে রাখা উচিত হবে না বলে আমি মনে করি।
ওয়ার্ড অফিসে অভিযোগ বক্স দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নগরবাসী কোনো দুর্ভোগে পড়লে আমাকে জানাবেন। প্রতিটি ওয়ার্ড অফিসে আমি অভিযোগ বক্স দিয়ে দেব। ওয়ার্ড সচিবরাও যদি কোনো গাফিলতি করে তাদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব। আমি সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনে অফিস করি। এ সময়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অফিসে ভীড় না জমায় স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমার দলের নেতাকর্মীরা প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত সিটি করপোরেশন আসেনি। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
আমিরবাগ আবাসিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি লোকমান হোসেন তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা একরামুল করিম। আমিরবাগ রিক্রিয়েশন ক্লাবের সার্বিক সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আবাসিক এলাকা জামে মসজিদের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার আসাদ উল্লাহ, ডা. শামীম বক্স, ডা. আবু ইউছুপ, মো. আলী, মসজিদ কমিটির সভাপতি মীর আবদুস সালাম, বিএনপি নেতা এস এম সাইফুল আলম, শাহ আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, আবদুল মান্নান, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, মশিয়ুল আলম স্বপন, মসজিদ কমিটির শফিউল আলম বাদশা, সরওয়ার আলম খান, মো. শাহীন, রিক্রিয়েশন ক্লাবের মাহফুজুর রহমান, ইফতেখার নিবরাজ, ফারদিন ফারাবী প্রমুখ।
মেসেঞ্জার/রিমন/ফামিমা