ছবি: মেসেঞ্জার
২৭২ বছরের প্রথা মেনে দিনাজপুরের কাহারোলে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী কান্তনগর (কান্তজিউ) মন্দির প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী রাস উৎসব শুরু হয়েছে। এই উৎসবকে ঘিরে মাসব্যাপী চলে মেলা। ১৭৫২ সাল থেকে এখানে রাস উৎসব উদযাপন হয়ে আসছে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে মাসব্যাপী রাস উৎসবের উদ্বোধন করেন কাহারোলের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন। এসময় রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রনজিৎ সিংহ, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বরুপ কুমার বকশী বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল, ডাঃ ডি সি রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাস উৎসব ও মেলায় বিভিন্ন জেলাসহ দেশ-বিদেশের ভক্ত-পুণ্যার্থী ও পর্যটকরা ভিড় জমান।
রাস উৎসবে নওগাঁ থেকে আসা অর্নব কুমার পাল বলেন, অনেক দিন থেকেই ঐতিহ্যবাহী কান্তজী মন্দিরে রাস উৎসবে আসার পরিকল্পনা ছিল । আজকে পরিবারসহ এসেছি। এখানে অনেক দূর দুরান্ত থেকে ভক্তরা এসেছেন। মন্দির ও মেলার পরিবেশ অনেক ভালো। এখানে এসে পরিবার ও দেশের মানুষের জন্য মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেছি। প্রথমবার আসলাম, অনেক ভালো লাগছে।
কুড়িগ্রাম থেকে রানী সরকার বলেন, রাস উৎসবে রাধাকৃষ্ণের রাস ঘুরানো হয় রাতে। আমরা এখানে পরিবারসহ এসেছি। এখানে এসে অনেকের সাথে দেখা হয়েছে। এখানে কোন কিছু চাইলে তার মানস কামনা পূর্ণ হয়। এজন্যই অনেক ভক্ত ছুটে আসেন।
রাজ দেবোত্তর এস্টেটের সদস্য ডাঃ ডি সি রায় বলেন, ১৭৫২ সাল থেকে আজ অবধি সনাতন সংস্কৃতি মেনে রাস পূর্ণিমার দিনে রাস উৎসব পালন করা হয়। আমাদের কমিটির পক্ষ থেকে ভক্তদের থাকা, পূজা অর্চনা, নিরাপত্তা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে রাস উৎসব পালনে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
কাহারোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বোরহান উদ্দিন বলেন, ভক্তদের সার্বিক নিরাপত্তা, মেলার সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে উপজেলা, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মেলার পরিবেশ সুষ্ঠু ভাবে বজায় রাখতে কাজ করবেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দির প্রতিষ্ঠার পর হতে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর আগের দিনে পূণর্ভবা নদীপথে নৌবহরে করে কান্তনগর মন্দিরে থাকা কান্তজিউ বিগ্রহ দিনাজপুরের রাজবাড়ী মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৩ মাস থাকার পর আবার কার্তিক মাসের পূর্ণিমার একদিন আগে ভক্ত-পুণ্যার্থীদের অংশগ্রহণে পায়ে হেটে কান্তজিউ বিগ্রহ ফের কান্তনগর মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। রাস উৎসব উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণ ও আশেপাশে একমাস ব্যাপী রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে দেশের প্রায় সব জেলা ছাড়াও ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকেও শত শত নারী-পুরুষ ভক্ত-পুণ্যার্থী ও পর্যটকরা আসেন।
জনশ্রুতি আছে, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথ রায় ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরে ১৭৫২ সালে তারই পালক পুত্র রামনাথ রায় মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। কান্তজিউ মন্দির বা কান্তনগর মন্দির নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত। ১৮ শতকে নির্মিত এই মন্দিরটি ৩ তলা বিশিষ্ট ছিল এবং এর ৯টি চূড়া বা রত্ন ছিল। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পের ফলে চূড়াগুলো ভেঙে যায়। পরবর্তীতে মন্দিরটির সংস্কার করা হলেও চূড়াগুলো আর যথাস্থানে স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
মেসেঞ্জার/কুরবান/ফামিমা