ছবি: মেসেঞ্জার
চলতি বছরের ভরা মৌসুমে সিরাজগঞ্জের চলন বিলাঞ্চলে পেঁয়াজ ও রসুন বীজের দাম বেশি হওয়ায় চাষাবাদে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। তারা বলছেন, এক বিঘা রসুন চাষে ৩০ এবং পেঁয়াজে ৫৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। মৌসুমে রসুন-পেঁয়াজের আবাদে বীজের চড়া দামের কারণে উৎপাদন খরচে কৃষকের মাথায় বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো অবস্থা হচ্ছে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) তাড়াশ উপজেলার নাদোসৈয়দপুর, সগুনা ইউনিয়নের কাটাবাড়ি ও হেমনগর গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে রসুন আবাদে ৩ মণ ভালো মানের বীজ লাগে। এর দাম চলতি বছরে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। অথচ গত বছর ২২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। এবার শুধু বীজের খরচ বাড়ছে বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। অপরদিকে, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদের জন্য ৮ মণ ভালো মানের বীজ প্রয়োজন হয়। এর দাম চলতি বছর ৫৫ হাজার টাকা। গত বছর ২৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সেই হিসাবে এবার বীজ বাবদ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা বেশি লাগছে। ভরা মৌসুমে এ দুই ফসলের বীজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলে ৭৫০ হেক্টর জমিতে রসুন ও ১৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাষীরা জানান, চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় বিনা চাষে রসুন এবং পেঁয়াজের বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হয়। তবে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বীজ বাজার থেকে কেনা। পেঁয়াজ-রসুন ওঠার পর কৃষক কিছু অংশ বাছাই করে বীজ হিসেবে রাখেন। এগুলো আট থেকে ৯ মাস বাড়িতে সংরক্ষণ করেন। সেগুলোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার মসলা জাতীয় ফসলের আবাদে বিপ্লব ঘটে। এতে আবাদের ধারাবাহিকতাও রয়েছে। তবে মৌসুমে বীজের চড়া দাম কৃষকদের ভোগাচ্ছেন।
তাড়াশের হেমনগর গ্রামে পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ করেন বাবুল আকতার। তিনি বলেন, চলনবিল অঞ্চলে এখন আগাম পেঁয়াজ ও রসুনের বীজ রোপণ চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাষাবাদ শেষে ফসল ঘরে তোলা শুরু হবে। তিনি আরও জানান, বীজের অস্বাভাবিক দামে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরেক চাষি নাদোসৈয়দপুর গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, শুধু বীজে যদি এত টাকা লাগে, তাহলে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ওষুধ, সেচ, কৃষি শ্রমিকসহ অন্য খরচ জোগানো অনেকের সাধ্যের বাইরে চলে যায়।
চলনবিল অঞ্চলে এ দুই ফসলের বীজের জন্য প্রসিদ্ধ চাঁচকৈড়, কাছিকাটা, নওগাঁ, হান্ডিয়াল, ধামাইচ হাট, সিংড়া ও কালীগঞ্জ। এই হাট-বাজারে গত শুক্র ও আজ শনিবার প্রতি মণ রসুন বীজ বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার ৬০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়। গত বছর ছিল সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এ বছর পেঁয়াজ বীজ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৮০০ টাকা মণ, যা গত বছর ছিল সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
নওগাঁ হাটে রসুন বীজ বিক্রেতা শুক্কুর আলী বলেন, এ বছর পেঁয়াজ-রসুনের দাম বেশি। সব সময়ই খাবারযোগ্য পেঁয়াজ-রসুনের চেয়ে বীজের দাম বেশি থাকে। আগামী ১৫ দিন থেকে এক মাসের মধ্যে পুরোদমে এ দুই ফসলের আবাদ শুরু হবে। তখন দাম আরও বাড়তে পারে।
কাটাবাড়ি গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, চলনবিল অঞ্চলে এক বিঘা জমিতে ভালো ফলন হলে রসুন ৩৮ থেকে ৪০ মণ এবং পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ মণ পাওয়া যায়। এর দামও অনেক। তিনি বলেন, পেঁয়াজ-রসুন তোলার সময় এত দাম থাকে না। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ধারদেনা করে আবাদ করায় ঋণ শোধ করতে ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অল্প দামে বিক্রি করে দেন। যখন দাম বাড়ে, তখন কৃষকের গোলায় কিছুই থাকে না।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজ-রসুনের বীজের দাম বেশি। তবে এ আবাদে ভালো ফলন হলে কৃষক পুষিয়ে নিতে পারবে।
তিনি বলেন, বীজসহ সব ধরনের পণ্যের দাম ঠিক রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। কেউ যদি যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি নেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মেসেঞ্জার/অদিত্য/ফামিমা