ছবি : মেসেঞ্জার
স্বপ্নে পাওয়া ঔষধ নিতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছে হুজুরের দোকানে। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার বিনামূল্যে দেয়া হয় স্বপ্নে পাওয়া ঔষধ। এ ঔষধ যে কোন রোগের কাজ করে, এমনটাই দাবি করেন চিকিৎসক (মুদি দোকানদার হুজুর মোহাম্মদ হোছেন) এবং আশপাশ ও দূর-দূরান্তর হতে আসা লোকজন।
ইতিমধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে মোহাম্মদ হোছেন (৫৫) হুজুরের স্বপ্নে পাওয়া এই ঔষধের খ্যাতি। সপ্তাহে দুইদিন শনি ও মঙ্গলবার মুদি দোকানদার মোহাম্মদ হোছেনের বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাইতং বাজারস্থ হেডম্যান পাড়ার সামনে মুদি দোকানে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
সপ্তাহের দুইদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে ঔষধ নিতে ভিড় জমায়। নারী, পুরুষ ও শিশুদের লম্বা লাইন যেন চোখে পড়ার মত।
এবিষয়ে কথা হয় ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে। তিনি বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পেরে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোছেন প্রকাশ কবিরাজ হুজুর কে ডাকি। তার কাছ থেকে জানতে চাই। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে স্বপ্নে এই ঔষধের সম্পর্কে অবগত হন। তারপর তিনি বাড়ির আশপাশ থেকে বিভিন্ন গাছগাছাড়ি ও লতাপাতা নিয়ে ঔষধ তৈরি করে মানুষকে দিচ্ছেন। পাশাপাশি পানি পড়াও দেন। কোন টাকা পয়সা নিচ্ছেননা।
তবে ফাইতং বাজার জামে মসজিদ ও তার বাড়ি পেকুয়া এলাকার একটি মসজিদের দুইটি দানবাক্স রাখা হয়েছে। আশপাশ ও দূর-দূরান্তর হতে আসা লোকজন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিয়ে মনের খুশিতে যা ইচ্ছে দান করে যান মসজিদের জন্য। এক সপ্তাহে ফাইতং বাজার জামে মসজিদের দান বাক্সে ৩৫ হাজার টাকা পড়েছিল।
মোহাম্মদ হোছেন একসময় প্রবাসে ছিলেন। তার এক ছেলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার। তার নিজ বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায়। তিনি ফাইতং বাজারে দীর্ঘদিন যাবৎ মুদিমালের ব্যবসা করেন। ১/২ মাস ধরে স্বপ্নে পাওয়া এই ঔষধ দিয়ে মানুষকে চিকিৎসা করছেন।
মোহাম্মদ হোছেন প্রকাশ কবিরাজ হুজুর বলেন, স্বপ্নে পাওয়া ঔষধ ও পানিপড়া দিয়ে যে কোন রোগের চিকিৎসা করি। ভালো হয় বলেই মানুষ আসে। একজনের মুখ থেকে শুনে আরেকজন আসছে। এইভাবে সর্বত্র সাড়া পড়েছে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে এসেছে। ফাইতং বাজার এলাকায় এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে নারী পুরুষ সাড়িবদ্ধ ভাবে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতে অপেক্ষা করছে। অল্প কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সেবা দিতে আমরা হিমসিম খাচ্ছি।
ফাইতং বড় মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা মো. নুরুচ্ছফা হুজুর থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর অনেক দিনের হাঁটুব্যাথা ছিল। ঊনার চিকিৎসায় ভালো হয়ে গেছে। আমার নিজেরও দীর্ঘদিনের গ্যাস্টিকের সমস্যা ছিল। ঊনার পানিপড়া খেয়ে ১৫ দিন যাবৎ ভালো আছি।
ফাইতং বড় মুসলিম পাড়ার সর্দ্দার মো. হেলাল বলেন, আমি ঊনার চিকিৎসা নিয়ে ভালো পেয়েছি। ফাইতং এলাকার ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি বলেন, কক্সবাজারের ডুলহাজারা থেকে আমার শাশুড়ি এই হুজুর থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। এদিকে ফাইতং বাজারের কয়েকজন বলেন, বাজারে বেলাল নামে এক প্রতিবন্ধী আছে। তাকে এই হুজুর ঝাঁড়-ফু ও ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করেছে। সে কিন্তু ভালো হয়নি। সে আগের মতই আছে।
সরজমিনে ফাইতং বাজার হুজুরের দোকান যায় প্রতিবেদক টিম। সেখানে চট্টগ্রামের পটিয়া হতে পরিবার নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা মো. হামিদ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ঊনার অনেক সু-খ্যাতি শুনেছি। তাই আসলাম। আমার স্ত্রী ও সন্তানকে দেখাবো।
একইভাবে টেকনাফ থেকে আসে প্রবাসী মো. ইসমাইলের স্ত্রী আসমাউল হোসনা (মীম)। তিনি বলেন, আমাদের পাশের কয়েকজন হুজুরের চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন শুনে আমি আসলাম। ছোট একটি বাজারে হাজার হাজার মানুষের ভিড় হওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেকে জানান, চিকিৎসার নামে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
মেসেঞ্জার/রফিকুল/তারেক