ঢাকা,  শনিবার
২৩ নভেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

ক্ষমতার হাতবদল  নয়, দরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন: বাসদ

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশিত: ২০:১৯, ২২ নভেম্বর ২০২৪

ক্ষমতার হাতবদল  নয়, দরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন: বাসদ

ছবি: সংগৃহীত

রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০৬ তম বার্ষিকী ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে  চট্টগ্রাম জেলা শাখার সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল নগরীর পুরাতন বটতলী রেলস্টেশন চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বাসদ চট্টগ্রাম জেলা ইনচার্জ আল কাদেরী জয়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড নিখিল দাস, বাসদ কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরাম সদস্য ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহবায়ক শ্রমিক নেতা খালেকুজ্জামান লিপন, জেলা সদস্য স.ম ইউনুচ, আহমদ জসীম, ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদে চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য সচিব মনির হোসেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলা শাখার আহবায়ক হেলাল উদ্দিন কবির, সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন, বাসদ জেলা সদস্য মহিন উদ্দিন, নুরুল হুদা নিপু, শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম মাস্টার, ফিরোজ আলমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। 

সমাবেশে বক্তারা বলেন,“১০৭ বছর আগে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণী বিশ্বের বুকে সংঘটিত সর্বহারা বিপ্লব, নির্মাণ করে প্রথম মেহনতি মানুষের রাষ্ট্র। এযাবতকালে মানবজাতির ইতিহাস শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস- মহামতি কার্ল মার্ক্সের সেই মহান শিক্ষা নিয়ে কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি গড়ে তোলে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা।ব্যক্তি মালিকানার সমাজ পাল্টিয়ে নির্মান করতে হবে সামাজিক মালিকানার মানবিক বিশ্ব। সেই বিপ্লবের  বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ দল ঘোষণা করে শ্রেণিবিভক্ত সমাজে শোষণের উচ্ছেদ ছাড়া  বৈষম্য নিরসন ও মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়। গণআন্দোলনকে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে পরিণত করার আহবান জানিয়ে বাসদ তার জন্মলগ্ন থেকে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন ধারায় লড়াই করে আসছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি  বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।”

বক্তারা আরো বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি প্রায় উপনিবেশিক শাসক-শোষকদের জনগণ পরাজিত করেছিল কিন্তু সচেতন সংগঠিত নেতৃত্বের অভাবে শোষিতশ্রেণি বিজয় ধরে রাখতে পারে নাই। ক্ষমতায় এসেছে বুর্জোয়াশ্রেণি ও তার সহযোগীরা। এরা দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশের সম্পদ পাচার করেছে, মেগা প্রকল্পের নামে বিদেশি ঋণের জালে দেশকে বেঁধে ফেলেছে, নিবর্তনমূলক কালোআইনে জনগণের কণ্ঠ রুদ্ধ করেছে, ব্যবসায়ী তোষণ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযন্ত্রণা বাড়িয়েছে, ন্যায্য মজুরি থেকে শ্রমিক এবং ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে কৃষককে বঞ্চিত করেছে। মাদকের নেশায় যুবসমাজকে যেমন আচ্ছন্ন করেছে, তেমনি ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার স্বার্থে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে শক্তিশালী করে মানুষের যুক্তিবাদী মনকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালিয়েছে। নির্বাচনকে ভোট ডাকাতি ও টাকার খেলায় পর্যবসিত করেছে আর সংসদকে বানিয়েছে ব্যবসায়ীদের বিনোদন ও ব্যবসার ভাগ বাটোয়ারার প্রতিষ্ঠানে। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে সংবিধানকে সংশোধন করে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সংকুচিত করেছে। এরা শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মুনাফার পণ্যে পরিণত করেছে, বেকারত্ব দূর না করে সন্তায় শ্রমিক পাওয়ার ব্যবস্থা চালু রেখেছে।

বাসদ নেতারা আরও বলেন, শ্রমিক-কৃষক দেশে সম্পদ তৈরি করে, প্রবাসীরা কষ্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায় আর শোষকশ্রেণি লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার করে। গত ৫২ বছরে বুর্জোয়াদের শাসনে এই লুন্ঠন।তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে।মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে চাই বাম বিকল্প শক্তি। লুটপাটের এই ব্যবস্থা বদলের মাধ্যমে শ্রমিক-কৃষক মেহনতী মানুষের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করার জন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াই সময়ের প্রয়োজন। শোষণমুক্তির আশায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ আহ্বান জানায় আসুন '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, '৯০ এর গণ অভ্যুত্থান ও ২০২৪ এর গণ অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে।” 

সমাবেশে পূর্বে ইজিবাইক ও ব্যাটারি রিকশার লাইসেন্স ও নীতিমালা প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন, সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য কমানোসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে একটা বিশাল মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

মেসেঞ্জার/এসকে/ইএইচএম