ছবি : মেসেঞ্জার
লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় তাফসীরুল কুরআন মাহফিল বন্ধ করে দিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা এই মাহফিলে জামায়াত ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমকে প্রধান অতিথি করেন মাহফিল কতৃপক্ষ।
এ নিয়ে আপত্তি করেন পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মো. আলমগীর হোসেন। পরে রাতে তিনি মাহফিল বন্ধ করার জন্য মাহফিল স্থনে বালুর ট্রাক, বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ও মাহফিল বাস্তবায় কমিটির লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি দমকি প্রদান করেন।
এতে বিএনপি নেতার বাঁধায় মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটি শুক্রবার মাহফিল স্থগিত ঘোষণা করেন। লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ড যুব সমাজ ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদ ময়দানে এই তাফসীরুল কুরাআন মাহফিল ও ইসলামী সংগীত সন্ধ্যা অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল।
এদিকে মাহফিল বন্ধ হওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় এনিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকাও করছেন এলাকাবাসী। সরজমিনে শুক্রবার দুপুরে মাহফিলস্থলে গেলে দেখা যায় বালুর ট্রাক রাখা আছে মাহফিলের মাঠে। মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটি ও স্থানীয়রা জড় হয়ে রয়েছেন সেখানে।
তখন মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটি ও স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ১০-১২ বছর দরে এই স্থানে তারা তাফসীরুল কুরআন মাহফিল করে আসছেন। আওয়ামী স্বৈরাচারের সময়ও তারা সকল বাঁধা উপেক্ষা করে মাহফিল করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মাহফিলে লক্ষ্মীপুর সদর উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমকে প্রধান অতিথি করা হয়।
আর এনিয়েই আপত্তি করেন বিএনপি নেতা আলমগীর। বিএনপি নেতা আলমগীর তাদেরকে বলেন, আমার বাড়ির সামনে মাহফিল এখানে অতিথি হলে হবেন বিএনপি নেতা। জামায়াত নেতা এখানে কি করে অতিথি হয়। মাহফিল করতে হলে বিএনপি নেতাকে অতিথি করতে হবে না হয় মাহফিল বন্ধ।
তখন মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটি বলেন ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমকে সদর উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। তিনি একজন ইসলামীক স্কলার। জামায়াত নেতা হিসেবে ওনাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তার পরেও বিএনপি নেতার একই দাবি, হয় রেজাউল করিমকে বাদ দিতে হবে না হয় মাহফিল বন্ধ করতে হবে।
পরে তিনি রাতের বেললায় মাহফিলের মাঠে বালুর ট্রাক রেখে দেন ও মাহফিলের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেন এবং মসজিদের ইমাম সাহেবকে ডেকে গালমন্দ করেন এবং হুমকি প্রদান করেন মাহফিল না করার জন্য। এছাড়া সকালে মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটির লোকজনকে ডেকে নিয়ে বলেন লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে বিএনপির এমপি প্রার্থী (কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক এবং লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য) শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি তাকে ফোন করে বলেছে তার এলাকায় জামায়াত নেতা কি করে মাহফিলে প্রধান অতিথি হয়।
তিনি থাকতে এটা কি করে সম্ভব হলো। তাই তিনি মাহফিলে রেজাউল করিমকে না আনার জন্য বলেছেন। রেজাউল করিম না আসলে মাহফিল করতে দিবেন বলেও মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটিকে জানান তিনি। মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জামাল উদ্দিন কবির ও মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদের খতিব আহছান হাবিব বলেন, কয়েকদিন থেকে আমরা মাহফিল নিয়ে কাজ করছি।
বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেনের বড় ভাই সেলিম উদ্দিন কন্ট্রাক্টর এই মাহফিলের সভাপতি। তাকে জানিয়ে সকল কিছু করা হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে আলমগীর কমিশনার মাহফিল বন্ধ রাখতে বলেন। এ্যানিকে দাওয়াত না দেওয়ায় তিনি এটি বন্ধ করেছেন বলে জানান।
তার (আলমগীর) দাবি ছিল, এ্যানি চৌধুরী তাকে ফোনে জানিয়েছে মাহফিল বন্ধ করতে। এতে তিনি মাহফিলের প্যান্ডেলের কাপড় খুলে নিয়েছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ ও মাইকের তার কেটে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিশৃঙ্খলা এড়াতে মাহফিল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারী ড. রেজাউল করিম লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের এমপি প্রার্থী। মাহফিলে রেজাউল করিমকে অতিথি করা হয়েছে। আমার বাড়ির সামনে মাহফিলে অতিথি হবেন বিএনপি নেতা। রেজাউল করিম আসলে মাহফিল হবেনা। আর তিনি না আসলে মাহফিল হবে। এখানে একটাই সমস্যা রেজাউল করিম। এছাড়া এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে প্রতিবছর দাওয়াত দেওয়া হয়। এবার আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।
মেসেঞ্জার/শিবলু/তারেক