ছবি : মেসেঞ্জার
ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো পরীক্ষামূলক ট্রেন। (২৪ নভেম্বর) রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হওয়ার পর ঢাকার কমলাপুর রেল ষ্টেশন থেকে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি ভাঙ্গা উপজেলার বামনকান্দা রেল জংশনে এসে পৌছায়। পরে এটি ১০টা ৪০মিনিটে খুলনার উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়।
এ সময় বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা ও উৎসুক জনতা স্বাগত জানায়। (১ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। প্রতিদিন ৩টি ট্রেন ঢাকা থেকে খুলনায় চলাচল করবে। ঢাকা থেকে খুলনা পৌছাতে সময় লাগবে মাত্র ৩ ঘন্টা। সাধারণ যাত্রীরা বাস ভাড়ার চেয়ে কম খরচে এবং কম সময়ে গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারবে। ইতিমধ্যেই রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নতুন করে টিকিটের বুথ বাড়ানো হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, যাত্রীদের চাপ বিবেচনা করে ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচল করবে তিনজোড়া ট্রেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চালু হওয়ার খবরে সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দ ও উৎফুল্লতা দেখা গেছে।
এর আগে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা-ফরিদপুর-রাজবাড়ী হয়ে খুলনার দূরত্ব ছিল ৩৬৭ কিলোমিটার। বর্তমানে ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত যাওয়ার ফলে এর দূরত্ব কমে দাড়াচ্ছে ১৭২ কিলোমিটার। এর ফলে খরচ ও সময় ২টিই সাশ্রয় হবে।
প্রাথমিকভাবে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেসসহ খুলনা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত প্রতিদিন তিন জোড়া করে ট্রেন চলাচল করবে বলে জানা গেছে। প্রতিদিন ভোর ৬টা, বেলা সাড়ে ১২টা, দুপুর আড়াইটা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় খুলনা থেকে ছেড়ে যশোর, নড়াইল, ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে। এতে সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। প্রস্তাবনায় সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫০ টাকা। নতুন রুটে ট্রেন চালুর খবরে দারুণ উচ্ছ্বসিত ভাঙ্গা সহ খুলনা অঞ্চলের সাধারণ যাত্রীরা।
বামনকান্দা রেলস্টেশনে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঢাকা থেকে ফেরা বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। তাদের চোখে মুখে উচ্ছাসের ছাপ। এদের মধ্যে আদনান বাপ্পি ও সোহেল বারী নামে দুইযাত্রী জানান, কাজের জন্য প্রতি সপ্তাহে তাদের ঢাকায় যেতে হয়। বাসে যাওয়ার চেয়ে ট্রেনে যাতায়াত বেশ আরামদায়ক।
শায়লা খন্দকার নামে আরেক যাত্রী জানান, খুলনা থেকে ঢাকায় ট্রেনে করে যেতে আগে সময় লাগত প্রায় ৮ ঘণ্টা। এখন খুলনা থেকে ঢাকা যাওয়া যাবে মাত্র তিন ঘণ্টায়। এটা সত্যিই দারুণ খবর। আমরা সহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ খুবই আনন্দিত। আমাদের খরচ ও সময় দুটিই সাশ্রয় হবে।
স্থানীয় সাংবাদিক অধ্যাপক দীলিপ দাস জানান, ‘খুলনা থেকে ঢাকায় নতুন এই রুটে ট্রেন চলাচলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। এলাকার সাশ্রয়ী খরচে যাতায়াত ও পন্য পরিবহন করতে পারবে। ফলে মানুষের অর্থনৈতিকভাবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বামনকান্দা রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. সাকিবুর রহমান আকন্দ জানান, আজ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে (২৪ নভেম্বর) ঢাকা থেকে খুলনা পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু হয়েছে । (১ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিভাবে উদ্বোধন করা হবে। প্রতিদিন থেকে ৩টি ট্রেন ঢাকা থেকে খুলনায় চলচল করবে।
এতে পৌছাতে সময় লাগবে মাত্র ৩ ঘন্টায়। আবার খুলনা থেকে ঢাকা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা চলাচল করবে। এ জন্য আমদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। নতুন করে টিকিটের বুথও বাড়ানো হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের পদ্মবিলা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনটি চলবে। এদিকে পরীক্ষামূলক ট্রেনে যাত্রী হিসেবে ছিলেন রেলপথ বিভাগের সচিব আ. বাকি, রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত হোসেন, রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চলের প্রধান কর্মকর্তা মামুনুর রহমান সহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, চায়না রেলওয়ে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহ কর্মকর্তাবৃন্দরা।
পদ্মবিলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে যশোরের সিঙ্গিয়া হয়ে খুলনা পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনটির চলার কথা রয়েছে।রাজবাড়ী রেলওয়ের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শফিকুর রহমান জানান, পরীক্ষামূলক ট্রেনটির যাত্রা নিরাপদ করতে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেসেঞ্জার/নাজিম/তারেক