শোকাহত পরিবার, আত্মীয়,স্বজন, প্রিয়জন, শুভানুধ্যায়ী এবং সহপাঠীদের চোখের জল আর আহাজারিতে চির বিদায় নিলেন গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) পিকনিকের দোতলা বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়া মুবতাছিন রহমান মাহিন। ঘটনাটিকে স্বজনরা অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা জনিত দুর্ঘটনা উল্লেখ করে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের যথাযথভাবে আইনের আওতায় আনার দাবি করেছেন।
রোববার (২৪ নভেম্বর) বাদ জোহর রংপুর মহানগরীর জুম্মাপাড়ার নুরুল উলুম করিমিয়া মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাজা শেষে মাহিমকে মুন্সিপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজা এবং দাফনে তার সহপাঠী,-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীসহ সাহসরাধিক মানুষ অংশ নেন। এর আগে শনিবার দিবাগত রাত দেড়টায় মাহিনের কফিন বাহি অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছায় রংপুর মহানগরীর জুম্মাপাড়াযর বাড়িতে। এরপর সিটি কর্পোরেশনের লাশবাহী ফ্রিজিং এম্বুলেন্সে রাখা হয় তার লাশ। তাকে দেখতে এসে স্বজন, প্রিয়জন,পাড়া-প্রতিবেশী সবার চোখে জল। কেউই মেনে নিতে পারছে না এই মৃত্যু।
মাহিনের চাচা হাসানুর রহমান জানান, এই মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নেয়ার নয়। এটি অবহেলা জনিত দুর্ঘটনা। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন দায়ী। তিনি বলেন, যেহেতু ওই সড়কে দোতালা বাস চলাচল সম্ভব ছিল না। তাহলে কি টাকা বাঁচানোর জন্য নড়ে বড়ে দোতালাবাস ভাড়া করেছিল প্রশাসন। ওআইসির তত্ত্বাবধায়নের পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কাণ্ডজ্ঞানহীন ভূমিকার জন্য যারা জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।
হাসানুর রহমান দাবি করেন, " দোতলা বাসের কারণে তারগুলো সরিয়ে বাসগুলোকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তার মানে দুর্ঘটনার আশংকা ছিল। তাহলে কেন বাস থেকে সকল শিক্ষার্থীকে নামানো হয়নি। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা সবাই আশা করেছিলাম দায়িত্বপ্রাপ্তরা সবাই হবেন যথাযথ দায়িত্বশীল। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা গেল চরম দায়িত্ব অবহেলা। যে পিকনিক স্পটটিতে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন সেই স্পটের আশেপাশের রাস্তা গুলোতে এভাবে তার ঝুলিয়ে থাকা বিষয়টি মেনে নেয়া যায়না। শুধু পল্লী বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সাতজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এটাকে আলোর মুখ দেখাতে হবে। একই সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে ভবিষ্যতে যেন এমন মৃত্যু না হয় তা নিশ্চিত দায়িত্ব সরকারের। সেটি যদি করা যায় তাহলে এই তাজা তিনটি প্রাণ ঝরে যে পরিবারগুলোতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তারা অন্তত শান্তি পাবেন।
মাহিনের পিতা ইমতিয়াজ রহমান ইমন জানান, " আমরা চাইনা আমার ছেলের লাশ কাটা ছেঁড়া করা হোক। কিন্তু আমরা চাই যাদের অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার।" মাহিনের পিতা ইমতিয়াজুর রহমান আরব বাংলাদেশ ব্যাংক (এবি ব্যাংকের) নীলফামারীর সৈয়দপুর শাখার ব্যবস্থাপক। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন মাহিন। অপর ভাই ইহান রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী। মাহিন আইইউটির মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালি গ্রামে তাঁকে বহন করা বিআরটিসির দোতল বাসটি পৌঁছালে ঝুলে থাকা তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে মাহিনসহ আইইউটির তিন শিক্ষার্থী মারা যান। এ ঘটনায় আহত হন আরও তিন জন।
মেসেঞ্জার/মাজহারুল/ইএইচএম