ঢাকা,  সোমবার
২৫ নভেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

গাইবান্ধায় দুই দশক ধরে বন্ধ ১০ শয্যার হাসপাতাল 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ২০:৩৫, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

গাইবান্ধায় দুই দশক ধরে বন্ধ ১০ শয্যার হাসপাতাল 

ছবি: মেসেঞ্জার

ধ্বসে পড়া দেওয়ালের মাঝে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন আগাছা।  ঘুনে ধরা দরজা - জানালা আর পরিত্যাক্ত পাঁচ ছয়টি উঁচু ভবনের ভৌতিক পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি হাসপাতাল।  জীর্ণ দশার এমন হাসপাতালটির অবস্থান গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামন্দ্রপুর ইউনিয়নের বালুয়া বাজার এলাকায় । হাসপাতালটিতে  অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও  নানা সংকটের অজুহাতে দীর্ঘ দুই দশক ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে ১০ শয্যার অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা সেবা

হাসপাতালটির  অভ্যন্তরীণ সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এখানে প্রতি বছর প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এখনও ১০ জন স্টাফ এখানে বহাল রয়েছে। তাদের মধ্যে ডেপুটেশনে একজন চিকিৎসক, চারজন নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট, ও দুইজন সুইপার রয়েছে। হাসপাতালের কার্যক্রম না থাকা সত্ত্বেও এসব স্টাফ কেন এখানে নিয়োজিত রয়েছে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে এখানে কর্মরত কেউই সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। জবাবদিহিতা না থাকায় অনেক সময়  দুপুর একটার পর ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট ও নার্সরা হাসপাতাল ত্যাগ করেন এতে চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি  ফিরে যেতে হয় রোগীদের।

জানা যায়, তৎকালীন গাইবান্ধা মহকুমার পার্বতীপুর মৌজায় ১৯৬২ সালে প্রায় ৬ একর জমির ওপর পল্লীর অসহায় জনগণের চিকিৎসার জন্য রামচন্দ্রপুর পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র নামে ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল স্থাপন করে পাকিস্তান সরকার।

এরপর ১৯৮৪ সালে গাইবান্ধাকে মহকুমা থেকে জেলায় রুপান্তরিত করা হলে শহরে গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় এতে  রামচন্দ্রপুর পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সেখানে পদায়ন করা হয় এরপর থেকেই নানা অজুহাতে হাসপাতালটি থেকে বিভিন্ন পদের জনবলকে অন্যত্র বদলি করা হয় এতে ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়ে ৬২ বছরের পুরনো গাইবান্ধার প্রথম আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সুবিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা হাসপাতালটির চারদিকে রয়েছে ডাক্তার ও অন্যান্য কর্মকর্তা - কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা ভবনগুলো এখন মাদকসেবীদের দখলে । নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালের মূল্যবান আসবাবপত্রসহ প্রায় সব কিছু চুরি হয়েছে।

হাসপাতালটিতে কর্মরত ফার্মাসিস্ট মাহাবুবুর রহমান বলেন , ২০০৭ সালে হাসপাতালটির অভ্যন্তরীণ শয্যায় চিকিৎসা সেবা প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয় এরপর থেকে আর চালু করা সম্ভব হয়নি । দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন এখানে বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসে । সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ পদের ঔষধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।

হাসপাতালটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভঙ্গুর  উল্লেখ করে তিনি বলেন আমাদের এখানে কোন নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় হাসপাতালের মূল্যবান আসবাবপত্রসহ প্রায় অনেক কিছুই চুরি হয়ে যাচ্ছে কিছুদিন আগে আমাদের বৈদ্যুতিক ক্যাবলগুলো চুরি হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নিকট কয়েক দফা সাহায্য চেয়েও কোন সাড়া মেলেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ কানিজ সাবিহা বলেন , চিকিৎসকসহ নানাবিধ সংকটে বন্ধ থাকা ১০ শয্যা বিশিষ্ট রামচন্দ্রপুর পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির সংস্কার ও পুনরায় চালুর বিষয়ে আমি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি  মন্ত্রণালয় খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

মেসেঞ্জার/তাসলিমুল হাসান/তারেক