ছবি: মেসেঞ্জার
সকালের সূর্য ওঠার পর থেকেই গাইবান্ধার পাল পাড়ার পরিবারগুলোতে শুরু হয় কর্মব্যস্ততা। বিশেষ করে নারীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। মাটির কাঁদা তৈরি থেকে সাজে ফেলে বিভিন্ন আকৃতির হাঁড়ি তৈরি করা। এরপর মসৃণ করে রোদে শুকাতে দেওয়াসহ মৃৎশিল্পের প্রতিটি ধাপই এখন নারীরাই করে থাকেন।এ কাজে পুরুষদের অনীহা ও অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় অস্তিত্বের লড়াইয়ে মৃৎ শিল্পের হাল ধরেছেন গাইবান্ধার নারীরা।
মাটির নানা পণ্য তৈরি থেকে শুরু করে বিক্রি, সব কাজই করছেন নারীরা। কয়েক দশক আগে এ কাজে তারা পুরুষদের সহযোগী হিসেবে থাকলেও বর্তমানে তারাই মূল ভূমিকায়। নারীর হাতে শত বছরের পুরনো মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখার এমন লড়াইয়ের দেখা মিলবে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাথ পুর ইউনিয়নের ভেলাকোপা গ্রামে।
এখানে প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে মাটির পণ্য তৈরি করে আসছে। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠানে সারি সারি সাজানো রয়েছে বিভিন্ন আকৃতির মাটির পণ্য।
পাল পাড়ার কনিকা রানী পাল বলেন, মা-বাবার কাছ থেকে শিখে এসে ২৬ বছর এই কাজ করছি। হাঁড়ি, ঢাকনা, পিঠার সরা, কলস, টাকা জমানোর ব্যাংকসহ বিভিন্ন জিনিস বানাই। এই পেশায় আমাদের পূর্বপুরুষেরা কাজ করতেন। আয়-রোজগার কমে যাওয়ার কারণে তারা অন্য পেশায় চলে গেছে। সংসারের অন্যান্য কাজ সেরে অলস সময় বসে না থেকে আমাদের বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি।
দ্রপদী রানী নামের এক মৃৎ শিল্পী বলেন , মাটির জিনিসপত্র তৈরি করা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রথমে একটি মাটির পণ্য তৈরির জন্য কাঁদা তৈরি করে শুকানোর পর রং দিয়ে বাড়ির খালি জায়গায় সাজিয়ে রাখি। বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে দেখে পছন্দ হলে তা কিনে নিয়ে যান। এসব জিনিস ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ টাকা পর্যন্ত পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে পারি।
বৃদ্ধ প্রভাষ পাল বলেন , আমার দুই ছেলে বর্তমানে কৃষি কাজ করছে আর তাদের স্ত্রীরা মাটির জিনিসপত্র তৈরি করার কাজ করছে। আগে এই ব্যবসায় প্রচুর আয় হতো তখন পুরুষরাই এই পেশার প্রধান ভুমিকা পালন করত । প্লাস্টিক ও বিভিন্ন সহজলভ্য সিরামিক পণ্য এসে মাটির পণ্যের বাজার নষ্ট করে ফেলছে তবুও কিছু রুচিশীল মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে মাটির জিনিস ব্যবহার করছে ।
এই পেশায় আমরা আনন্দ খুঁজে পাই । আমরা যেহেতু অন্য কোন কাজ পারি না তাই হাজার কষ্ট থাকলেও কাদা মাটি থেকে যখন একটি হাঁড়ি সম্পুর্ন প্রস্তুত হয় তখন সেটা দেখেই অনেক ভালো লাগে।
মৃৎশিল্পী মালা রানী পাল বলেন, পূর্ব পুরুষদের পেশা টিকিয়ে রাখতে নিরলসভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। কারণ মৃৎশিল্পীরা ইচ্ছা করলেই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না। তাই জীবনযুদ্ধে পরাজিত হতে নারাজ আমরা। যে করেই হোক পৈতৃক পেশা টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম চালিয়ে যাব। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরাও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। এ শিল্পও গর্বের সঙ্গে টিকে থাকবে।
মেসেঞ্জার/তাসলিমুল/তারেক