ঢাকা,  বুধবার
২৭ নভেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

শার্শায় বিএনপির সমাবেশে দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১৫

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

শার্শায় বিএনপির সমাবেশে দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১৫

ছবি: মেসেঞ্জার

যশোরের শার্শায় বিএনপির সমাবেশে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বোমাবাজিও হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় গ্রুপের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরের দিকে উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের গোড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, সমাবেশের আগে থেকেই উত্তেজনা ছিল। তবে, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আহতরা হলেন, তৃপ্তি গ্রুপের শার্শা উপজেলা যুব দলের যুগ্ন আহবায়ক আল মামুন বাবলু (৪৮), আব্দুল আজিজ (৫৫), আব্দুল হামিদ (৩৬) ও আসাদুল ইসলাম (৩০), হাবিব (৩২), বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শহীদুল ইসলাম শহিদ (৩৪), স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সুমন (৩২)। আবুল হাসান জহির গ্রুপের আহতরা হলেন, নাসির (৪৫), আবু বক্কর (৪০), হাফিজুর রহমান (৪৮) ও আরিফ (৩২)।

আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য নাভারন হাসপাতালে নেয়া হলে আবুল হাসান জহিরের লোকজন হাসপাতাল গেইটে অবস্থান নিয়ে দ্বিতীয় দফা হামলার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে যশোরের নাভারন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং শার্শা ও বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধর্শতাধিক পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এদিকে হাসপাতালে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে লাঠি সোঠা হাতে একটি গ্রুপের লোকজন দাঁড়িয়ে ছিল। তারা সাংবাদিক দেখে বলে এখান থেকে চলে যান। কোন প্রকার হাসপাতালে প্রবেশ করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন।

জানা যায়, বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও শার্শার সাবেক এমপি মফিকুল হাসান তৃপ্তির সমর্থকরা মঙ্গলবার শার্শার গোড়পাড়া স্কুল মাঠে বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির দোয়া মাহফিলে জন্য তার লোকজন মঞ্চ তৈরি করে। প্রতিপক্ষ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবুল হাসান জহিরের সমর্থকরা ও একই মাঠে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। সোমবার থেকেই সমাবেশ নিয়ে গোড়পাড়া এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ কারণে সকাল থেকে সমাবেশ স্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু দুপুরের দিকে উপজেলা বিএনপির হাসান জহির গ্রুপ মফিকুল হাসান তৃপ্তি গ্রুপের সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায়।

এ সময় তারা সমাবেশ মঞ্চ ও চেয়ার টেবিল ভাংচুর করে। একই সাথে অন্তত ১২টি ককটেল বোমার বিস্ফোরণ করা হয়। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। মফিকুল হাসান তৃপ্তি গ্রুপের নেতাকর্মীদের দাবি হামলায় তাদের ৮/৯ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। নিজামপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মুক্ত জানান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবুল হাসান জহিরের সমর্থিত সশস্ত্র লোকজন দুপুরের দিকে মঞ্চ ভাংচুর করে এবং মঞ্চে হাতবোমা ছুড়ে মারে।

এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিকালের দিকে তৃপ্তি গ্রুপের লোকজন হাসান জহিরের কয়েকজন কর্মীকে পিটিয়ে আহত করেছে। এঘটনায় গোটা উপজেলা জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এদের মধ্যে গুরুতর আহত নাসিরকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, তিনি নিয়মিত জনসংযোগ ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির দোয়া মাহফিলের জন্য গোড়পাড়া বাজারে স্থানীয় বিএনপির কর্মিরা মঞ্চ তৈরি করে। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবুল হাসান জহিরের সশস্ত্র লোকজন মঞ্চ ভাংচুর করে তাঁর কর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্য বোমা হামলা করে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা গত ১০ আগে দিন নিজামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ তরফদারের বাড়িতেও চড়াও হয়ে তাঁর স্ত্রী এবং ছেলের বৌকে লাঞ্চিত করে। বিষয়টি তিনি সেদিন জেলা পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছিলেন। হাসান জহিরের লোকজন বিভিন্ন ইউনিয়নে তাঁর কর্মীদের মারধর করছে বলে তিনি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য শার্শা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবুল হাসান জহিরকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা আহবায়ক খায়রুজ্জামান মধু বলেন, ‘আমি গতকাল সোমবার ঢাকায় চলে এসেছি। গতকাল শুনেছিলাম, দুই পক্ষ একই জায়গায় একই সময়ে সমাবেশের উদ্যোগ নিয়েছে। তখন উভয় পক্ষের সমাবেশ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলাম। সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে, কিন্তু তারা আমার পরামর্শ শোনেনি।

খায়রুজ্জামান মধু বলেন, ‘বিএনপির ব্যানারে মফিকুল হাসান তৃপ্তি সমাবেশের উদ্যোগ নেন। আমি দলের আহবায়ক অথচ আমাকে ওই সমাবেশে থাকার জন্য কেউ বলেননি।’
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির আব্বাস বলেন, বিএনপির দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে তবে কেউ থানায় এখনো অভিযোগ দায়ের করেনি। পরিবেশ শান্ত রাখার জন্য পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। পুলিশের হস্তক্ষেপে নাভারন হাসপাতালের সামনে লাঠি সোটা নিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা তারা চলে গেছে বলে জানান।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ান জানান, সমাবেশকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকে উত্তেজনা ছিল। তবে পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 

মেসেঞ্জার/জামাল/তারেক