ছবি: মেসেঞ্জার
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম বলেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যক্ষ্মা বেশি হয়। যক্ষ্মা বেশি আক্রান্ত হয় গরীব অসহায় শিশু ও কর্মক্ষম নারীরা। দরিদ্র পরিবারের নারীদের বেশী সুষম খাদ্যের অভাব হয়। পরিবারের অন্যদের দিকে খেয়াল করতে যেয়ে, তাদের খাওয়া ঠিক মতো হয় না। সেজন্য তারা রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। একজন পুরুষ আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও একজন নারী আক্রান্ত হলে তার অবস্থা খারাপ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় না। যক্ষ্মা রোগীর প্রধান লক্ষণ হাঁচি-কাশি। সাধারণত কাশি হলে পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে কিছু দিন ভালো থাকে। কিন্তু সে যদি যক্ষ্মার জিবাণু থাকলে সে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বৈষ্যম্যের শিকার হচ্ছে। যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা পরিবারের সদস্যরা, শিশু, বয়োবৃদ্ধ, বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। অক্টোবর মাসে সাতক্ষীরা জেলায় ৫ হাজার ৪০৭ জনকে পরীক্ষা করে ৩৯১ জন যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। যার অধিকাংশ নারী ও শিশু। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে জেলায় ৪ হাজার ৮৯৮ জনকে পরীক্ষা করে ৩৬৭ জন যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।
সেই হিসেবে জেলায় যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টি আমরা পজেটিভভাবে দেখছি। যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী লুকিয়ে থাকলে তার দ্বারা আরও অনেক মানুষ আক্রান্ত হবে। পজেটিভ রোগীকে সনাক্ত করতে পারলে রোগী ছড়াতে পারবে না।
বুধবার সকাল ১১টায় সিএসসিএস ও সম্প্রীতি এইড ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে সাতক্ষীরা শহরের অদূরে একটি কনফারেন্স রুমে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণে যক্ষ্মা রোগীদের অধিকার, জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক যক্ষ্মা পরিষেবা শীর্ষক অ্যাডভোকেসি কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, যক্ষ্মা রোগ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াই। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব মানলেই যক্ষ্মা থেকে বাচা সম্ভব। পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে তাকে দুরে ঠেলে দিলে হবে না। ভালোবাসা দিয়ে নিয়মিত ওষুধ সেবন করলেই যক্ষ্মা রোগীকে দ্রুত সুস্থ করা সম্ভব। সাধারণত ধরা হয়, প্রতি এক লাখ জনগোষ্ঠির প্রতিবছর কমপক্ষে ২১৮ জন টিবি রোগী পাওয়া যাবে। সেই হিসেবে সাতক্ষীরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক কম। প্রতিটি কাশির পরীক্ষা করতে সরকারের খরচ হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। কিন্তু দেশের সব জায়গায় বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেয়া হয়।
তাই এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত তা শনাক্ত করে চিকিৎসা নিতে হবে। যক্ষ্মা হলে শরীরে ক্ষয় বেশি হয়। মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। তাই দ্রুত শনাক্তের পর চিকিৎসা নেয়া অনেক বেশি জরুরি। যক্ষ্মার এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত। যক্ষ্মা প্রতিরোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আমাদের কর্মীর প্রতিটি ইউনিয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের কর্মীরা সরাসরি রোগীর মুখে ওষুধ তুলে খাইয়ে দেয়। আমাদের সচেতনার বিকল্প নেই। যক্ষ্মা রোগী সন্তাক্ত করার পাশপাশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নজর দিতে হবে এবং সবাই সচেতন হলেই ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশকে যক্ষ্মা মুক্ত করা সম্ভব হবে।
সম্প্রীতি এইড ফাউন্ডেশনের সহ সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ গাইন সভাপতিত্বে ও এ্যাডভোকেসি অফিসার দিপা রাণীর পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের, সিভিল সার্জন অফিসের রোগ নিয়ন্ত্রক মেডিকেল অফিসার ডাঃ জয়ন্ত সরকার, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ফরহাদ জামিল, সম্প্রীতি এইড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সভারঞ্জন শিকদার, হেডের নির্বাহী পরিচালক লুইস রানা গাইন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নারায়ন চন্দ্র মন্ডল, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর প্রোগ্রাম অফিসার ফাতেমা জোহরা প্রমুখ। ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন মেডিকেল অফিসার ডাঃ ইসমত জাহান সুমনা।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে যক্ষ্মা ঝুঁকিপূর্ণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান যষ্ঠ। বাংলাদেশের আগে আছে ভারত, চীন ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০২০ সালের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রতি লাখে ২২১ জন য´া রোগী সনাক্ত হয়েছে। স্টপ টিবি পার্টনারশীপের প্রতিবেদন অনুসারে ২০২০ সালে বাংলাদেশের য´া পরিস্থিতি আনুমানিক ৩৬০০০ লোক টিবিতে আক্রান্ত, তাদের মধ্যে ৩০০০০ শিশু ছিল। ১২৯৯১০ টিবি আক্রান্ত ব্যক্তি যক্ষ্মা সেবার বাইরে ছিল এর মধ্যে ২০৬৩৭ জন শিশু ছিল। ৭১০ জন ব্যক্তি যারা একই সাথে যক্ষা ও এইচআইভি সংক্রমিত হয়েছিল। ৪৪০০০ মানুষ যক্ষ্মায় মারা গেছে যার মধ্যে ৫৫০০ জন শিশু।
সভায় বক্তারা বলেন, যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের সাথে কোন প্রকার বৈষম্য করা যাবে না। সঠিকভাবে ওষুধ সেবন করলে দুই মাসে সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু ওষুধ ছয় মাস পর্যন্ত ওষুধ সেবন না করলে আবারও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তখন দুই বছরের বেশি সময় ধরে ওষুদ সেবন করতে হবে। এই রোগ থেকে দ্রুত সুস্থ হতে এবং মুক্ত থাকতে আমাদের সচেতন হতে হবে। এছাড়া পরিবার পাশে থাকলে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী দ্রুত সুস্থ হবে। এটি কোন মরণঘাতী রোগ নয় নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিলে এটি সুস্থ হওয়া যায়।
আসুন আমরা সকলে মিলে যক্ষ্মা রোগীদের অধিকার ও জেন্ডার বৈষম্যহীন যক্ষা পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করি।
মেসেঞ্জার/তারেক