ছবি : মেসেঞ্জার
দেশসেরা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি আজও মেলেনি। ফলে মরিচা ধরা ছেনি দিয়ে মাথার খুলি খোলা ও ছুরি বাটাল দিয়ে মৃতদেহ কাটার কাজ চলছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলছেন, আধুনিক যন্ত্রপাতির চাহিদাপত্র একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো বরাদ্দ মেলেনি।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা, রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, রোগীদের সন্তুষ্টি ও আস্থা অর্জন, চিকিৎসক, সেবিকা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন, হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত, সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্যসেবার সার্বিক দিকে বিশেষ অবদান রাখার কারণে সারাদেশের জেলা পর্যায়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ৩য় স্থান অর্জন করে। জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষ অবদান রেখে দেশসেরার খ্যাতি অর্জন করে। গত ২০২২ সালের ২ নভেম্বর মেলে আরও দুটি দেশসেরার অ্যাওয়ার্ড।
বর্তমানে সরকারি এই হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসাসেবা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা হয়েছে। মান্ধাতার আমলের সকল যন্ত্রপাতি বাদ দিয়ে চলছে ডিজিটাল মেশিনে কার্যক্রম। কিন্তু দেশসেরা হাসপাতাল মর্গের দিকে করো নজর নেই। দীর্ঘ দিনেও এখানে সরবরাহ করা হয়নি ময়নাতদন্তের কাজে ব্যবহৃত আধুনিক কোন যন্ত্রপাতি। অথচ যশোর জেলার সকল উপজেলায় যে কেউ হত্যা বা রহস্যজনক মৃত্যুর শিকার হলেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠানো হয় এই মর্গে। প্রতিটি লাশ কাটা হয় মরিচা ধরা ছেনি, ছুরি ও বাটাল দিয়ে।
ময়নাতদন্তকারী বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালের মর্গ হলো নামমাত্র। মর্গটি যেনো নিজেই মৃত। তারই ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। সরকারি এই হাসপাতালের মর্গে কোন ধরণের আধুনিক সুযোগ সুবিধা এখানে নেই। অনেক পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রতিনিয়ত লাশ কাটা হচ্ছে। সেদিকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোন খেয়াল নেই। মর্গে যন্ত্রপাতির বেহাল অবস্থার কারণে গায়ের জোর প্রয়োগ করে লাশ কাটার কাজ করছেন। সেখানে কোন প্রকার আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। এটা বড়ই দুঃখজনক।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে দায়িত্বরতরা স্বাচ্ছন্দে ময়নাতদন্ত কার্যক্রম করতে পারেন না। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর ইলেকট্রিক্যাল করাত, এক্সবালিনসহ উন্নতমানের যন্ত্রপাতি চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কয়েকবার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই দায়িত্বরত তত্ত্বাবধায়ক ১৪ প্রকারের ১৪৯ টি যন্ত্রপাতি চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছিলেন। যন্ত্রপাতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্রাউন্ডার মেশিন ৩ টি, ছেনি ৪টি, ১২ ইঞ্চি চাকু ৪টি , ৮ ইঞ্চি চাকু ৪টি, শীল ৪টি, প্লাস ৬টি, ১২ ইঞ্চি হেসকো করাত মেশিনসহ ৮টি, ১২ ইঞ্চি হেসকো করাতের ব্লেড ৬০টি, বিপি ব্লেড ঢুকানোর জন্য চাকু ১২ টি, বিপি ব্লেড ১২ টি, স্টিল গামলা ৬টি, স্টিল বালতি ৬টি, ৫শ গ্রাম ওজনের ৬টি হাতুড়ি। কিন্তু এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
মেসেঞ্জার/বিল্লাল/তুষার