ছবি : মেসেঞ্জার
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পুলিশেরগুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ডক্টর হারুনুর রশিদ জানান, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় (১৯ নভেম্বর) ২০২৪ তারিখে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়ায় সরকারী চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯ (২) ধারা মোতাবেক শরিফুল ইসলামকে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা পাবেন তিনি।
(১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে দশটায় রংপুর মহানগরীর আলমনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। (১৯ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটায় রংপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ বিচারক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের আদালতের তাকে তোলা হয়। পিবিআই পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে তিনদিনের রিমান্ড আবেদন মনজুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন জানান, সাবেক ফ্রক্টর শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে গেল (১৬ জুলাই) বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেটের সামনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করার সময়, আগে এবং পরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে একত্রিত হয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ আছে।
অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে ১৪টি স্থির চিত্র এবং একাধিক ভিডিও ফুটেজসহ ২৯টি অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। শরিফুল ইসলাম রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ঘটনার সময়ে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় তারবড় ভাই রমজান আলী (১৮ আগস্ট) পুলিশের সাবেক আইজিপিসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৩০ থেকে ৩৫ জনের অজ্ঞাতর নামে হত্যা মামলা করেছিলেন। পরবর্তীতে (১৪ অক্টোবর) ওই মামলায় আরো সাতজনের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আদালতে আবেদন করেন বাদী।
তারা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হাসিবুর রশিদ, সাবেক প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) শাহ নূর আলম পাটোয়ারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক ও অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নূরুন্নবী, সুরতহাল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা এসআই তরিকুল ইসলাম ও সুরতাহাল রিপোর্টের প্রতিস্বাক্ষরকারী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাত।
আদালতের আদেশে তাদেরকেও ওই মামলায় নামীয় এ জহারভুক্ত আসামী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে হিসেবে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় এখন নামীয় আসামি ২৪ জন।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবী রোকনুজ্জামান জানান, ফরেনসিক রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে আবু সাঈদ কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই মামলার দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে বিচার শুরু করতে হবে। একই সাথে মাত্র ৩জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাকি আসামীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান এই প্যানেল আইনজীবী।
তবে শরিফুল ইসলামের আইনজীবী সাবিহা আক্তার পপি জানান, 'আমার আসামি নির্দোষ। তাকে জামিন না দেয়ায় ন্যায় বিচার ব্যাহত হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।"
বিমান্ড শুনানি সময় শরিফুল ইসলাম আদালতকে বলেছিলেন , "আমি নির্দোষ। প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে গেছি। কত কাল পরীক্ষা নিয়েছি। বাড়িতেই ছিলাম। আমাকে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে এনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আমি পিএইচডির জন্য আবেদন করেছি। আমাকে জামিন দেয়া হোক। এখনই যেভাবে আমাকে ডাকা হবে তখনই আমি চলে আসবো।
প্রসঙ্গত, আবু সাঈদ হত্যা মামলায় এর আগে তাজহাট থানার বরখাস্তকৃত এএসআই সৈয়দ আমির হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় কে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এছাড়াও এই মামলার আসামি সাবেক আইজিপিকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার (২ ডিসেম্বর) রংপুর সফরে এসে শহীদ আবু সাহেদদের কবর জিয়ারত শেষে জানান, "যত দ্রুত সম্ভব আবু সাঈদ হত্যা মামলার শুনানি শুরু করা হবে। আবু সাঈদ হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
মেসেঞ্জার/মান্নান/তারেক