ছবি : মেসেঞ্জার
বাল্যবিবাহকে না বলে এ ব্যধিকে লাল কার্ড দেখানো কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ৩ সাহসী কন্যা বাল্যবিবাহের প্রবণতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মনোবল দৃঢ় রেখে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রত্যেকে আদর্শ শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
সাহসী এই ৩ কন্যা হলেন, ফুলবাড়ী উপজেলা সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা বালাটারী গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে সানজিদা আক্তার সাথী, একই গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে নিশরাত জাহান রিমু ও কুটিচন্দ্রখানা সেনপাড়া গ্রামের সুবাস চন্দ্র সেনের মেয়ে সুবর্না রানী সেন।
এরা ৩ জনেই এখন এলাকার বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফুলবাড়ী ডিগ্রী কলেজে সুনামের সাথে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে সানজিদা আক্তার সাথী এইচএসসি প্রথম বর্ষে নিশরাত জাহান রিমু এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে ও সুবর্না রানী সেন ডিগ্রী প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত রয়েছে।
জানা গেছে, এরা ৩জন বিশেষ করে যখন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তখনি তাদের পরিবারের লোকজন তাদের বাল্যবিবাহ দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের পাশে দাঁড়ায় মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি (এমজেএসকেএস) এর ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর আফরোজা হ্যাপী ম্যাডাম।
তিনি বাল্য বিবাহকের কুফল সম্পর্কে ৩ কিশোরীকে ও তার পরিবারকে সচেতনতা সৃষ্টি করলে ৩ কন্যা বাল্যবিবাহ থেকে নিজেদের রক্ষা পাওয়ার সুযোগ পায়। সানজিদা আক্তার সাথী এ প্রতিনিধিকে জানান, মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি (এমজেএসকেএস) এর সহযোগিতায় আমি একজন সাহসী কন্যা হিসেবে আমার বাল্যবিবাহ ঠেকাতে পেরেছি। আমি এখন কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি এখন একজন আদর্শ শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।
নিশরাত জাহান রিমু জানান, আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে আমার বাবা আমাকে বিয়ে দেয়ার জোড় প্রচেষ্টা চালায়। আমার মা লাকী বেগম ১৫ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় মা বাল্যবিবাহের কুফলের শিকার হন। এ কারনে মা আমার বাল্যবিবাহের বিষয়ে বাবাকে প্রতিবাদ করে।
রিমু আরও জানান, পরবর্তীতে আমাকে আমার নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলে আমি সেখান থেকে লেখাপড়া শুরু করি এবং বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পাই। এখন আমি কলেজে এইচইএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমি স্বপ্ন লালন করছি একজন আদর্শ শিক্ষিকা হবার। পাশাপাশি আমি যুব সমাজ কল্যাণ সমিতির যুব সংগঠনের সাথে সমৃক্ত হয়ে সামাজিক কাজ করছি।
সুবর্না রানী সেন জানান, আমি ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়। আমি মহিলাদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি (এমজেএসকেএস) এর সহযোগিতায় বাল্যবিবাহের কুফল জানতে পেরে নিজের নিজের বিয়েটি ঠেকাই।
এখন আমি আমার আরেক আপন বোনসহ এলাকায় বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করছি। বর্তমান আমি ডিগ্রী প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশুনা চালাচ্ছি। আমার স্বপ্ন আমি একজন আদর্শ শিক্ষিকা হতে চাই।
উল্লেখ্য, বাল্যবিবাহ একটি সামাজি ব্যধি। এই ব্যধি প্রবণ দেশ হচ্ছে এশিয়া মহাদেশের শীর্ষে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের জেলা কুড়িগ্রাম বাল্যবিবাহ প্রবণতায় প্রথম স্থানে রয়েছে বলে এক জরিপে প্রকাশ পেয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলায় বাল্যবিবাহ প্রবণতা চলমান। তবে কিছু এনজিও কুড়িগ্রামে বাল্য বিয়ের প্রবণতা বন্ধের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরমধ্যে মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি (এমজেএসকেএস) অন্যতম।
এই এনজিওটির এনজিওটির চাইল্ড নট ব্রাইড (সিএনবি) প্রকল্পের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় বাল্যবিবাহ ও জোরপূর্বক বিবাহের হার কমানোর জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাল্যবিবাহ প্রবণতার শিকড় যাতে উপড়ে ফেলা যায় তেমনি প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এনজিওটির।
মেসেঞ্জার/আনন্দ/তারেক