ছবি : মেসেঞ্জার
পতিত সরকারের সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বড়বোন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শামীম আরা হিরা (৫০) ও তার স্বামী মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস (৫৫) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার উপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল (৩ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার বিকালে বাবুল বিশ্বাসকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম, মন্ত্রীর বড়বোন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শামীম আরা হীরা ও মুজিবনগর উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তকলিমা খাতুনের নামে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমানুল্লাহ আল বারী সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মামলার তদন্ত অফিসার মেহেরপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহুরুল ইসলামের নেতৃত্বে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের একটি টিম রাজধানীর ভাটারা থানা পুলিশের সহযোগীতায় বসুন্ধরা এলাকায় তার নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের এই দুই প্রভাবশালী নেতা স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেফতার করেন।
সদর থানার ওসি আমানুল্লাহ আল বারী জানান, চলতি বছরের ৫ আগস্ট বেলা ১১ টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা মেহেরপুর শহরের বড়বাজার, হাসপাতাল এলাকা ও সরকারি কলেজ মোড় এলাকায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। এসময় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে শসস্ত্র হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্র ও অভিভাবককে আহত করে।
এ ঘটনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯, (সংশোধনী-২০১৩) একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী শামীম আরা হীরা ও ছেলে তুর্য আত্মগোপনে চলে যান।
এছাড়া সাবেক জনপ্রশসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী ও যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম, বড় বোন মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য শামীম আরা হীরা ও যুব মহিলা লীগের মুজিবনগর উপজেলা শাখার সভাপতি তকলিমা খাতুনকে এজাহার নামীয় ও ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মেহেরপুর সদর থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর (সংশোধনী-২০১৩) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মেহেরপুর সদর থানার মামলা নং ৫, তারিখ ০৩/১২/২৪ ইং। নতুন দায়ের করা মামলায় জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বড় বোন শামীম আরা হীরাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার বিকালের দিকে মেহেরপুরের পলি খাতুন নামের এক বিএনপি নেত্রী এই মামলাটি দায়ের করেন।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি আমানুল্লাহ আল বারী জানান, বিগত ৫ আগস্ট সকালের দিকে মেহেরপুর শহরে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালিন সময়ে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী ও যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম, বড় বোন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য শামীম আরা হীরার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের অনেক নেতাকর্মী আহত হন। এসময় মেহেরপুর জেলা বিএনপি নেত্রী পলি খাতুনকে হত্যার উদ্যেশ্যে মারধর করে। সেই ঘটনায় বিএনপি নেত্রী পলি খাতুন বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
আজ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে শামীম আরা হীরাকে আদালতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি আমানুল্লাহ আল বারী।
উল্লেখ্য, ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে মেহেরপুর থানায় তিনটি এবং ঢাকার আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার পর থেকেই জনপ্রশাসন মন্ত্রীর পরিবারের সকলেই আত্মগোপনে চলে যান। ১৪ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার নিউ ইস্কাটন এলাকার ৩৯৮ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাট থেকে ফরহাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় নিহত হন পোশাককর্মী রুবেল। ওই ঘটনায় গত ২২ আগস্ট রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। দায়ের করা সেই মামলায় সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।
ফরহাদ হোসেন সাবেক সরকারের আমলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে তিনি একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মেহেরপুর-১ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে তার বড় বোনের স্বামী মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস ও তার পরিবারের লোকজন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ফরহাদ হোসেনের পরিবারের ১২ জন সদস্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন কমিটিতে স্থান পায়।
এদিকে আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতারের খবরে শহরে বইছে আনন্দের বন্যা। সোস্যাল মিডিয়াতে চলছে কড়া সমালোচনা। প্রকাশ্যে টাকা ও অস্ত্রের খোঁজ খবর নেওয়া ও তাঁর ছেলে তুর্যকে গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মেসেঞ্জার/মাহাবুব/তুষার