ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

রংপুরে শ্যামাসুন্দরী খাল দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

রংপুরে শ্যামাসুন্দরী খাল দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান

ছবি : মেসেঞ্জার

রংপুর নগরের শ্যামাসুন্দরী খালের জায়গা দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার ( ৪ ডিসেম্বর)  সকাল সাড়ে ১১ এগারটায় রেজিস্ট্রি অফিস এলাকা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা। তিনি বলেন, রংপুর নগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শ্যামাসুন্দরী খালে ১১৭ জন অবৈধ দখলদারকে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। আজ থেকে তাদের উচ্ছেদে অভিযান শুরু হয়েছে। খুব শিগগির সব দখলদারকে উচ্ছেদ করা হবে। অভিযানে রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন, রংপুর সিটি করপোরেশন, উপজেলা ভূমি কার্যালয়, ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকরা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহযোগিতা করছে।

জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে রংপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকী বল্লভ সেন ১৮৯০ সালে তার মা চৌধুরানী শ্যামা সুন্দরী দেবীর নামে খালটি পুনঃখনন করেন। এই খালটির পূর্বের নাম ছিল ঘোষ খাল।

এটি ঘাঘট নদী থেকে শুরু করে নগরীর ধাপ পাশারী পাড়া, কেরানীপাড়া, মুন্সিপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, গোমস্তাপাড়া, সেনপাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা, নূরপুর, বৈরাগীপাড়া হয়ে মাহিগঞ্জের মরা ঘাঘটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে। দীর্ঘ দিন থেকে সংস্কার না করায় খালটি নাব্যতা হারিয়ে ফেলে। এর দুই ধারে অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় সংকীর্ণ হয়ে পড়ে খালটি। সামান্য বৃষ্টিতেই গোটা শহরে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, অবৈধ স্থাপনার কারণে খালের দুই পাড় বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাই প্রথমে ১১৭টি অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করে তাদের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

সময়ের পরিক্রমায় দখল-দুষণে পর্যদুঃস্থ রংপুর নগরবাসির লাইফ লাইন শ্যামাসুন্দরী। নানাভাবে দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিলেও তা ছিল সাময়িক। ২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। উদ্যোগ নেয়া হয় দখলমুক্ত করার, সেই দাবির প্রেক্ষিতে শুরু হলো দখল মুক্তের কার্যক্রম। এতে খুশি নগরবাসি।

১০০ ফুট প্রস্থ এবং ৪০ ফুট গভীরতার শ্যামাসুন্দরীতে এখন পানির প্রবাহ বন্ধ । বর্জ্য-ময়লা-আবর্জনায় ভাগাড়। দখলে সরু ও ভরাট। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে৷  আমাদের ফুসফুসকে বাঁচানোর এই উদ্যোগ থামনে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের আহবায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদ ইমতি বলেন, রংপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খালের দখলদার উচ্ছেদ ও দূষণমক্ত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দাবি জানিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতা এই অভিযান শুরু হয়েছে। দখল ও দূষণ উচ্ছেদ হলে শ্যামাসুন্দরী খাল প্রাণ ফিরে পাবে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে,  রংপুর নগরে প্রবাহিত শ্যামাসুন্দরী খালটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৬ কিলোমিটার। আয়োতন প্রায় ৪২ একর।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, খালটি রংপুর সিটি করপোরেশনে কেল্লাবন্দ মৌজার ঘাঘট নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে নগরীর রঘুনাথ, ভগী, রাধাবল্লভ, কামালকাছনা, আলমনগর, মাহিগঞ্জ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাহিগঞ্জ রেলব্রিজের পাশে পুণরায় ঘাঘট নদীতে মিলিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর শ্যামাসুন্দরী খালের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও দূষণ বন্ধে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইনী নোটিশ দেয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

মেসেঞ্জার/মান্নান/তুষার