ছবি: মেসেঞ্জার
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষ। তীব্র শীতে মানুষের পাশাপাশি কাঁপছে পশুপাখিও। বেড়েছে রোগবালাই। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভীড় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দিজ্বরসহ নানা রোগী। চিকিৎসকদের এসব রোগেীর চিকিৎসা সেবা দিতে অনেকটাই হিমসিম খেতে হচ্ছে। এদিকে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চিকিৎসা ব্যায় ও শীতের কাপড় কেনা তাঁদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সরকারি ভাবে এখনও কোন শীতবস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করা হয়নি রায়পুরে।
উপজেলার চরকাছিয়া গ্রামের গৃহবধূ কুলছুম বেগম বলেন, হামরা তো অতে আগুন পোহে গাও গরম করুছি। কিন্তু অবলা গরু-ছাগলগুলাক কী করমো? দুইটার করি চটের বস্তা গরুর গাওত দিয়া ঠান্ডা যাওছে না। ঠনঠন করি কাঁপছে। ছাগলগুলোরও রোগবালাই ধরছে। চাহিদামতো শীতের কাপড় কেনা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারিভাবে যদি আমাদেরকে কম্বল দিয়ে সহায়তা করা হয় তাহলে ভালো হতো।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, শীত বাড়ায় পশুপাখির সর্দি ও নিউমোনিয়া রোগ বেড়েছে। খামারি ও কৃষকদের গরু-ছাগল চট ও মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। মেঝেতে শুকনো খড় বিছানো ও গরম পানি খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শীতের সময় পশুপাখির রোগবালাই বেশি হয়। এ জন্য সাবধান থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার উত্তর চরবংশী, দক্ষিন চরবংশী, চরমোহনা, চরকাছিয়া, চরজালিয়া, খাসেরহাট হায়দগঞ্জসহ ৪টি চরাঞ্চল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। শীতের কারণে অনেকেই কাজে যেতে পারেননি। একটু উষ্ণতা পেতে ১০-১২ জনের দল বেঁধে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
৬৫ বছর বয়সী খাসেরহাট গ্রামের অচিন দাস বলেন, রাইত পোহাইলে শীত বাড়োছে। শরীলোত আর ঠান্ডা সহ্য হওছে না। এ্যালা কামাইও নাই, গরম কাপড়ও নাই। তার ওপর নদীর ঠান্ডা বাতাস হু-হু করি বেড়ার ফাঁক দিয়া ঘরোত ঢোকে, তখন ছেঁড়া খ্যাতা গাওত দিয়া কোঁকড়া নাগি থাকো।
মেঘনা উপকূলনীয় এলাকার মোল্লার হাট বাজারের পাশে বাগামে জড়ো হয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা যায় ৪ থেকে ৫ জনের একদল বৃদ্ধাদের। তাঁরা বলেন, ‘বাবা, ঠান্ডাতে জান বাইর হয়া যাওছে। গরম কাপড় নাই, শীত এলে মোগ খুব কষ্ট হয়। ঠান্ডাতে হাত-পাও পষাণ বরফ হয়ে যাচ্ছে। এ বছর এত তীব্র শীত হইলোও এহনও কেউ কোন কম্বল বা শীতের কাপড় দেয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইরমার খান বলেন, সরকারিভাবে এখনও কম্বল কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তবে আগামী সাপ্তাহে জেলা থেকে চিঠি আসতে পারে। আসলেই প্রতিটি ইউনিয়নের হতদরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
মেসেঞ্জার/সুমন/জেআরটি