ছবি: সংগৃহীত
ডাক্তার স্বামীর যৌতুক নিরোধ আইনের মামলায় স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি শ্যালকের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে শ্বাশুড়ি, শ্যালকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তফা এর আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
মামলার আসামিরা হলেন— চিকিৎসক জয়নাল আবেদীনের সাবেক স্ত্রী ফারহানা আক্তার পিংকি, শাশুড়ি হোসনে আরা বেগম, শ্বশুর মো. আব্দুল মতিন ও শ্যালক মো. জাহিদ হাসান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিএম জাহেদ হোসেন দ্য ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া শ্বাশুড়ি ও শ্যালকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল স্বামীর বাড়িতে ফিরে যেতে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করার অভিযোগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি শ্যালকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন ডা. মো. জয়নাল আবেদীন ভূঁঞা। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে পাঁচলাইশ থানার ওসিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই মামলার তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। একই বছরের ৩১ আগস্ট প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর তার সঙ্গে ফারহানা আক্তারের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। দুজনের এটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। চিকিৎসক জয়নাল শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো উপহার নেননি। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে ফারহানা আক্তার তার স্বামীর কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের দামি উপহার ও টাকা দাবি করতে থাকেন। ফারহানা আক্তারের পরিবারের লোকজনও জয়নাল আবেদীনের কাছে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে টাকা দাবি করতেন। জয়নাল বিভিন্ন সময় তাদের টাকা ও উপহার দেন। স্ত্রী ফারহানা কয়েকমাস আগে তার বাবার বাড়িতে চলে যান। সেখানে গিয়েও তিনি চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে টাকা দাবি করেন। পরে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করেন তার স্ত্রী। টাকা না দেওয়ায় জয়নালের ওপর মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন ফারহানা ও তার পরিবার।
পরে ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর যৌতুকের মামলার ধার্য তারিখ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ জুয়েল দেব এর আদালতে বৃদ্ধ বাবা আবু তৈয়ব ভুঁইয়াকে নিয়ে হাজির হন ডা. জয়নাল। এদিন যৌতুকের মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পান চার আসামি। ওইদিন এজলাস থেকে বেরিয়ে বাদীর বাবাকে মারধর করেন আসামিরা। বাবাকে উদ্ধার করতে গেলে জয়নালকেও মারধর করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যাচেষ্টা চালান আসামিরা। তাদের রক্ষা করতে গেলে বাদীর আইনজীবী শাহিনকেও মারধর করেন আসামিরা। এ সময় আশপাশের আইনজীবীরা তাদের উদ্ধার করেন।
পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পাশাপাশি একই বছরের ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ মারধর, হত্যাচেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী চিকিৎসক। আদালত তার অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলা রুজু করতে নগরের কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, ডা. মো. জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়া (৩৫) নগরের উত্তর পতেঙ্গার খেজুরতলা পশ্চিম হোসনে আহমদ পাড়ার মো. আবু তৈয়ব ভুঁইয়ার ছেলে। নগরের প্রবর্ত্তক এলাকার বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালে ইর্মাজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে তিনি কর্মরত। তার সাবেক স্ত্রী ফারাহানা আক্তার পিংকির গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার চৌমুহনী এলাকায়। চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন বিবিরহাট কাঁচাবাজার গলিতে থাকতেন।
বর্তমানে তাদের যমজ কন্যা সন্তান আছে বলে জানিয়েছেন ডা. মো. জয়নাল আবেদীন ভুঁঞা। তিনি দ্যা ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, বিচ্ছেদের পর সপ্তাহে দু'দিন আসামি পক্ষের আইনজীবীর চেম্বারে আমার সন্তানদের সঙ্গে দেখা করানোর নির্দেশ আদালত দিয়েছেন তবে এখনও পর্যন্ত আমি আনার সন্তানদের দেখিনি। যৌতুকের দাবি করা টাকা না পেলে আমার সন্তানদের দেখাবে না বলে জানিয়েছে তারা।
মেসেঞ্জার/সাখাওয়াত/এসকে/ইএইচএম