ঢাকা,  বুধবার
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

১০০ শয্যা হাসপাতালে ৯ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

১০০ শয্যা হাসপাতালে ৯ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা

ছবি : মেসেঞ্জার

চরফ্যাসন উপজেলায় প্রায় ৬ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের চিকিৎসা সেবার জন্য একটি মাত্র চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসক সংকট থাকার কারনে হাসপাতালে আসা বিভিন্ন রোগীরা ঠিকমত পাচ্ছেনা চিকিৎসা সেবা। এতে প্রতিদিনই ফিরে যাচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ রোগী।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ হাসপাতালে প্রতিদিন জরুরী বিভাগ ও বেডে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক থাকলে ঠিকমত দেখা মিলেনা তাদের। হাসপাতালে ডিউটি চলাকালিন সময়ে সরকারি চিকিৎসকরা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন। এছাড়াও সরকারি হাসপাতালে মিলছে না বিনামূল্যে ঔষধ। এক্সেসহ বিভিন্ন পরীক্ষায়ও করাতে হয় বাহির থেকে। সরেজমিনে গিয়ে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া যায় এমন অভিযোগ।

চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যা হলে প্রশাসনিক আনুমতি না পাওয়ায় ৫০ শয্যার জনবল নিয়ে চলছে। তাই ২১টি চিকিৎসক পদ থাকলে বর্তমানে রয়েছেন ৯ জন চিকিৎসক। চরফ্যাসন উপজেলায় বেসরকরি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা প্রায় ৩৪টি।

চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি হওয়া রোগীর স্বজন মো. ইউসুফ, মো. মামুন ও মো. লালু পঞ্চায়েতসহ একাধিক স্বজনরা জানান, তারা তাদের রোগীদের চিকিৎসার জন্য চরফ্যাসন উপজেলা ১০০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। কিন্তু হাসপাতালে রোগীদের ২/৩ দিন ধরে ভর্তি করা হলেও একদিন মাত্র ডাক্তার এসেছেন। তাও আবার রোগীকে ঠিকমত না দেখেই ঔষধ লিখে দিয়ে চলে গেছেন।

তারা আরো জানান, আমরা গরীব মানুষ সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করেছি। বিনা পয়সায় ভালো চিকিৎসা করার এজন্য কিন্তু এখানে তো চিকিৎসা পাচ্ছিনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করলে তারা বলে হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট। আসলে যে কয়জন ডাক্তার আছে তারা যদি ভর্তি হওয়া রোগীদের নিয়োমিত ভালো করে দেখে চিকিৎসা দিতেন তাহলে অনেক ভালো চিকিৎসা পাওয়া যেতো।

কিন্তু ডাক্তাররা হাসপাতালে রোগীদের ঠিকমত না দেখেই তারা ডিউটি চলাকালিন ফোন পেয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকে রোগী দেখতে চলে যান।

রোগীর স্বজন কেয়া আক্তার, মো. ফরিদ ও খায়রুন বেগম জানান, তারা তাদের রোগীদের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন ১/২ দিন চলে গেছে কোন প্রকার বিনামূল্যে ঔষধ পাননি। নার্সরা বলে হাসপাতালে কোন ঔষধ নেই বাহির থেকে সব কিনে নিয়ে আসতে। পরে আমরা বাধ্য হয়ে বাহির থেকে ঔষধ কিনে নিয়ে আসি।

তারা আরো অভিযোগ করে জানান, হাসপাতালে ডাক্তাররা এক্সেসহ কোন পরীক্ষার দিলে নার্সরা সব বাহির থেকে করে আসতে বলে। হাসপাতালে নাকি পরীক্ষা করার লোক নেই। এমনকি কোথা থেকে পরীক্ষা করবো সেটিও তারা বলে দেন।

রোগী ফরিদা বিবি ও মো. ইউসুফ জানান, হাসপাতালে নার্সরা ইনজেকশন ও ক্যানোলা পরাতে আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিয়ে আসেন।  নার্সরা আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিয়ে এসব দেওয়ায়। আর আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ইনজেকশন ও ক্যানোলা পরিয়ে ৫০/১০০ টাকা দাবী করে আমাদের থেকে। পরে আমরা বাধ্য হয়ে দেই। না দিলে তো আর পরে আসবে না এজন্য দেই।

চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন কুমার বসাক এসব অভিযোগ স্বীকার করে চিকিৎসক ও নার্সদের পক্ষে কথা বলে জানান, চিকিৎসককে পরিচ্ছন্ন কর্মী ও আয়ারা সহযোগীতা না করলে চিকিৎসা সেবা চলে না। এছাড়াও তিনি হাসপাতালে বর্তমানে ঔষধ সংকট নেই বলে দাবী করলেও আবার বলে মাঝে-মাঝে কিছুটা ঔষধ সংকট দেখা দেয়। তাদের ঔষধের বাজেট আরো বৃদ্ধির দাবী করেন তিনি। এবং এক্সেসহ বিভিন্ন পরীক্ষার ব্যাপারে তিনি বলেন, রোগীর স্বজনরা বাহির থেকে পরীক্ষা করেন। কেউ তাদের বাহিরে পাঠান না।

ভোলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি দেড় থেকে ২ মাস আগে ভোলা সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেছেন। কিন্তু চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল অভিযোগ শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন বলেন, দ্রুত তিনি সেখানে পরির্দশনে যাবেন। এবং কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে তদন্ত স্বাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন তিনি।

মেসেঞ্জার/সাইফুল/তারেক